পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা । ] • ক্রত্যাচার হইতে পূৰ্ব্ববঙ্গকে রক্ষা করিবার নিমিত্ত ভীমবেগে অগ্রসর হইল। জগদিয়া, আলমগীর নগর, শণদ্বীপ প্রভৃতি স্থান অল্পকাল মধ্যেই মোগলের পদদলিত হইল । যুদ্ধ জয় করিয়া বিজয়োম্মত্ত মোগলগণ দুই সহস্র আরাকান সৈন্ত ধৃত করিয়া দ্বাসৰূপে বিক্রয় করিয়া ফেলিল ! সমগ্র প্রদেশ মোগল বাদশাহের বশু্যতা স্বীকার করিয়া বঙ্গের সহিত সংযুক্ত হইয়া গেল! আরাকানের প্রায়শ্চিত্ত হইল! ঔরঙ্গজেব আত্মীয় শোণিতে রঞ্জিত হইয়া, পিতা পুত্ৰ ভ্রাতা প্রভৃতিকে একান্ত নিগৃহীত করিয়া সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন । জীবনে তাহাকে যে কত যন্ত্রণ পাটতে হইয়াছিল তাহ ইতিহাস পাঠকের অবিদিত নাই । মৃত্যুর পূৰ্ব্বে তিনি যে অনুতাপানলে বিদগ্ধ হইয়াছিলেন তাহা শত মৃত্যু-ঘন্ত্রণ অপেক্ষণ ভয়াবহ । যখন আমরা শুনিতে পাই যে দিন-দুনিয়ার মালেক বাদশাহ ঔরঙ্গজেব কহিতেছেন– “আমি শুধু আমার পাপের বোঝা শিরে করিয়াই চলিলাম। একা আসিয়াছিলাম—একাই যাইতেছি?--যখন আমরা শুনিতে পাই যে বাদশাহ কাতর হৃদয়ে কহিতেছেন—“আমি এ রাজ্যের রক্ষক হইতে পারি নাই। আমার সময় বৃথাই কাটিয়া গিয়াছে। আমার হৃদয়মধ্যে বিবেকদেবতা বাস করিতেন, কিন্তু অন্ধ আমি—র্তাহার পুণ্যকিরণ দেখিতে পাই নাই !’* তখনই আমরা ঔরঙ্গজেবের অন্তর্যাতনা বুঝিতে পারি। শুধু ইহাই নহে ; এত করিয়া বাদশাহ যে মোগল শক্তির প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, তাহার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই সেই শক্তি আপন তেজঃ হারাইয়াছিল ! বলিতে গেলে তাহার সঙ্গে সঙ্গেই মোগলশক্তি বিলুপ্ত হইয়াছিল। অধৰ্ম্মের উপর, শোণিতের উপর যে রাজসিংহাসন স্থাপিত হয় তাহা এইরূপেই চুণ হইয়া যায়—ইহাই প্রায়শ্চিত্তে প্রতিশোধ ! বাঙ্গালার ইতিহাস সেই প্রতিশোধ সম্বন্ধে কি প্রমাণ দিতে পারে তাহা আমরা কতক দেখিয়াছি, ভবিষ্যতে আরও দেখিব। ঐরাজেন্দ্রলাল আচাৰ্য্য, বি এ ৷ ” পেকিন রাজপুরীর নানাকথা ।

  • Tarikh-i-Iradat-Khan—Letters of Aurungzeb as quoted in Elliots' History of India. so

(to) পেকিন রাজপুরীর নানা কথা । চীনদেশের উচ্চবংশীয় ভদ্রলোকগণ যেমন আট নয় ঘটিকা বেলা না হইলে শয্যাত্যাগ করেন না, বৃদ্ধা মহারাণী বা সম্রাট, তাদৃশ নহৈন। সম্রাটের কথা পূৰ্ব্বেই উল্লেখ করা হইয়াছে। রাজমাতাও অতি প্রত্যুষে গাত্ৰোখান করিয়া থাকেন, এবং বেলা ৭টা হইতে ১১টা পর্য্যন্ত রাজকাৰ্য্য করেন। বুদ্ধা মহারাণী যখন নিদ্রা যান তখন একটী পরিচারিক তাহার কক্ষ মধ্যে পাহারা দিয়া থাকে। দুই জন খোজ শয়নকক্ষের দরজায় দ্বাররক্ষক ভাবে নিযুক্ত থাকে, এবং চারি জন খোজা তাহার শরীররক্ষক রূপে তাহার, খাসকামরায় অপেক্ষা করিতে থাকে। যে পরিচারিকা ও খোজা তাহার শয়নকালে প্রহরীর কার্য্য করে, তাহাদের প্রতিদিনই বদলি হইয়া থাকে। সম্রাজ্ঞীর শয়নকক্ষে ও সিংহাসনকক্ষে উচ্চপদবিশিষ্ট খোজাগণ ভিন্ন অপর কাহারে যাইবার আদেশ নাই । বৃদ্ধারাণীর নিদ্রার নিয়মিত সময় নাই এবং তিনি অতি অল্প সময় নিদ্রা গিয়া থাকেন। রজনীযোগে হঠাৎ নিদ্রা ভঙ্গ হইয়া যদি আর নিদ্রা যাইতে না পারেন তাহা হইলে, ঘরের বাহির হইয়া উদ্যানে ভ্ৰমণ করিতে থাকেন। জ্যোৎস্না রাত্রিতে তিনি ঘরের বাহির হইয়া স্বভাবের দৃষ্ঠে মোহিত হইয়া থাকেন, এবং বলেন যে প্রকৃতির মনোহর দৃশু চব্বিশ ঘণ্টাকালই দেখিবার যোগ্য জিনিষ। রাত্রিকালে অনিদ্রাক্ট হউক বা সুনিদ্রাক্ট হউক প্রতিদিন প্রত্যুষে গাত্ৰোখান করিয়া থাকেন। প্রাতঃকালে শয্যা ত্যাগ করিয়াই এক বাট দুগ্ধ বা এক বাট পদ্মমূলের মণ্ড পান করিয়া থাকেন। এই পদ্মমূলের ব্যবহার চীনদেশে সৰ্ব্বত্র প্রচলিত। ইহাকে বলকারক পথ্য রূপে গণ্য করা হইয়া থাকে। তৎপর রাজকীয় পরিচ্ছদ পরিধানপুৰ্ব্বক দরবার গৃহে গমন করেন। তথায় উপস্থিত হইলে প্রথমতঃ র্তাহাকে নবীন সম্রাজ্ঞী ও অন্তান্ত মহিলাগণ প্রণাম করিয়া থাকেন। তাহার পর সম্রাট স্বয়ং তাহাকে প্রণাম করিলে উভয়ে এক সঙ্গে রাজকাৰ্য্যে মনোযোগ দিয়া থাকেন। সেই সঙ্গে নবীন সম্রাজ্ঞীগণ ও অপর রাজকুমারীগণ দরজাঙ্গগৃহের অন্তরালে থাকিয়া রাজকাৰ্য্যাদি পৰ্য্যবেক্ষণ করিয়া