পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা । ] - বিন কি উপকার" জিজ্ঞাসা করিলা মহিম কছিলেন -“আগে কথা দাঁও, তবে বলব।” বিনয়। আমার দ্বারা যদি সম্ভব হয় তবে ত ? মহিম। কেবলমাত্র তোমার দ্বারাই সম্ভব। আর কিছু ন তুমি একবারই বল্লেই হয়। বিনয়। আমাকে এত করে কেন বলচেন ? আপনি ত জানেন আমি আপনাদের ঘরেরই লোক—পারলে আপনার উপকার করব না এ হতেই পারে না। মহিম পকেট হইতে একটা পানের দোনা বাহির করিয়া তাহা হইতে গোটা দুয়েক পান বিনয়কে দিয়া বাকি তিনটে নিজের মুখে পুরিলেন ও চিবাইতে চিবাইতে কহিলেন— “আমার শশিমুর্থীকে ত তুমি জানই। দেখতে শুনতে নেহাৎ মন্দ নয় অর্থাৎ বাপের মত হয় নি। বয়স প্রায় দশের কাছাকাছি হল, এখন ওকে পাত্রস্থ করবার সময় হয়েছে। কোন লক্ষ্মীছাড়ার হাতে পড়বে এই ভেবে আমার ত রাত্রে ঘুম হয় না।” বিনয় কহিল –“ব্যস্ত হচ্চেন কেন— এখনো সময় আছে।” . মহিম। নিজের মেয়ে দি থাকৃত ত বুঝতে কেন ব্যস্ত হচ্চি। বছর গেলেই বয়ে আপনি বাড়ে কিন্তু পাত্র ত আপনি আসে না ! কাজেই দিন যত যায় মন ততই ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এখন, তুমি যদি একটু আশ্বাস দাও তাহলে না হয় দু’দিন সবুর করতেও পারি। বিনয়। আমার ত বেশি লোকের সঙ্গে আলাপ পরিচয় নেই—কলকাতার মধ্যে আপনাদের বাড়ি ছাড়া আর কোনো বাড়ি জানিনে বল্লেই হয়—তবু আমি খোজ করে দেখব । মহিম। শশিমুখীর স্বভাবচরিত্র ত জান । বিনয়। জানি বই কি। ওকে এতটুকু বেলা থেকে দেখে আসচি–লক্ষ্মী মেয়ে । মহিম। তবে আর বেশি দূর খোজ করবার দরকার কি বাপু ! ও মেয়ে তোমারি হাতে আমি সমর্পণ করব। বিনয় ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া কহিল—বলেন কি ? মহিম। কেন, অন্যায় কি বলেছি! অবশু,কুলে তোমরা আমাদের চেয়ে অনেক বড়–কিন্তু বিনয়, এত পড়াশুনে করে যদি তোমরা কুল মানবে তবে হল কি ! বিনয়। না,না; কুলের কথা হচ্চে না,কিন্তু বয়েস যে— গোর । - ন মহিম। বল কি! শশীর বসে কম কি হল! দ্বির Q >や ঘরের মেয়ে ত মেম সাহেব নয়— সমাজকে ত উড়িয়ে দিলে চলে না । মহিম সহজে ছাড়িবার পাত্র নহেন-বিনকে তিনি অস্থির করিয়া তুলিলেন। অবশেষে বিনয় কহিল—“আমাকে একটু ভাববার সময় দিন।” মহিম। আমি ত আজ রাত্রেই দিনন্থির করচিনে । বিনয় । তবু বাড়ির লোকদেরমহিম। স্থা, সে ত বটেই। তাদের মত নিতে হবে বইকি। তোমার খুড়োমশায় যখন বর্তমান আছেন তার অমতে ত কিছু হতে পারে না । - এই বলিয়া পকেট হইতে দ্বিতীয় পানের দোনা নিঃশেষ করিয়া যেন কথাটা পাকাপাকি হইয়া আসিয়াছে এইরূপ ভাব করিয়া মহিম চলিয়া গেলেন। • কিছুদিন পূৰ্ব্বে আনন্দময়ী একবার শশিমুখীর সঙ্গে বিনয়ের বিবাহের প্রস্তাব আভাসে উত্থাপন করিয়াছিলেন । কিন্তু বিনয় তাহা কানেও তোলে নাই। আজও প্রস্তাবটা যে বিশেষ সঙ্গত বোধ হইল তাহা নহে কিন্তু তবু কথাটা মনের মধ্যে একটুখানি যেন স্থান পাইল । বিনয়ের মনে হইল এই বিবাহ ঘটিলে আত্মীয়তা সম্বন্ধে গোরা তাহাকে কোনো দিন ঠেলিতে পারিবৈ না। বিবাহ ব্যাপারটাকে হৃদয়াবেগের সঙ্গে জড়িত করাকে ইংরাজিয়ান বলিয়াই সে এতদিন পরিহাস করিয়া আসিয়াছে, তাই শশিমুদীকে বিবাহ করাটা তাহার কাছে অসম্ভব বলিয়া বোধ হইল না। মহিমের এই প্রস্তাব লইয়া গোরার সঙ্গে পরামর্শ করিবার যে একটা উপলক্ষ্য জুটিল আপাতত ইহাতেই সে খুসি হইল। বিনয়ের ইচ্ছা গোরা এই লইয়া তাহাকে একটু পীড়াপীড়ি করে । মহিমকে সহজে সম্মতি না দিলে মহিম গোরাকে দিয়া তাহাকে অনুরোধ করাইবার চেষ্টা করিবে ইহাতে বিনয়ের সন্দেহ ছিল না। এই সমস্ত আলোচনা করিয়া বিনয়ের মনের অবসাদ কাটিয়া গেল। সে তখনি গোরার বাড়ি যাইবার জন্ত প্রস্তুত হইয়া চার কাৰে বাহির হইয়া পড়িল। আর একটু দূর যাইতেই পশ্চাৎ হইতে শুনিতে পাইল—“বিনয় বাৰু!” পিছন ফিরিয়া দেখিল সতীশ তাহাকে ডাকিতেছে।