পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা । । তবে সে বলিত ‘আমাকে কি খৃষ্টান পাইয়াছ যে আমি তোমায় ঠকাইয়. বেশি দাম লইব ?” ইংরাজেরই লিখিত পুস্তকে দেখা যায় যে তখনকার দেশ ব্যবসাদারের প্রবঞ্চক ছিল না । ১৮০০ সালে ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি বুল ও শঠতা প্রয়োগ করিয়া নবাবের কাছ হইতে সুরাট অধিকার করিয়া লয়। ইংরাজ অধিকারের পূৰ্ব্বে (১৬০৮-২০) সুরাট জনবহুল ও বহুবণিকঅধ্যুষিত ছিল। সেখানকার লোকেরা দীর্ঘকায়, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং ব্যবহারে সংযমী ও সৎ ছিল। সুরাটের বাণিজ্য লোহিতসাগরোপকূলস্থ মোচা সহরের সহিত এবং সুমাত্রার অচিনের সহিত চলিত। সুরাট হইতে কাপাস ও কাপাসবন্ত্র মোচাতে প্রেরিত হইত। প্রসিদ্ধ পয্যটক ট্যাভাণিয়ে ও বাণিয়ে সুরাটের বস্ত্রশিল্পের প্রশংসা করিয়াছেন (ঢাকার মসলিন প্রবন্ধে বিশেষ বিবরণ দ্রষ্টব্য)। এই সকল বস্ত্র ক্রয়ের জন্য তুর্কিস্থান হইতে, আবিসিনিয়া হইতে এবং মিশর হইতে বণিকগণ মোচায় সমবেত হইত। সুমাত্রার অচিনে একটি পাড়া গুজরাতীদিগের জন্য স্বতন্ত্র ছিল। ১৬০৩ সালে যবদ্বীপে এবং ১৬১১ সালে দক্ষিণে ৫ অক্ষরেখাস্থিত বান্দা নুমক দ্বীপেও গুজরাতীদিগকে দেখা গিয়াছিল। কাপ্তেন সারিস জাপানে গিয়া গুজরাতী ছিট ও কাপড় দেখিয়াছিলেন। সুরাটে নিম্নলিখিত দ্রব্যাদি ক্রয়বিক্রয় হইত-- লৌহ, তাম্র ও ফটকিরি ; হীরক, চুনি, স্ফটিক, পান্না ; গম, ছোলা মটর, শুটি; ঔষধ ; মাখন ও খাদ্য, জালানি, নানাবিধ তৈল ; সাদা ও কালো সাবান, চিনি, আচার ও মোরব্বা, কাগজ, গালা, এবং আফিম, নীল। ইহা কিনিবার জন্য ইংরাজ ও ওলন্দাজগণ সুরাটে সমবেত হইত। কিন্তু প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল রেশম ও কাপাস বস্ত্র—এই সকল বস্ত্র যুরোপ, আফ্রিকা ও এসিয়ার সর্বত্র সবিশেষ সমাদৃত ছিল। কোন কোন কাপড় তুষারধবল ও অতি স্বল্প হইত। কোন কোন কাপড়ে রেশমী ফুল তোলা হইত এবং মধ্যে মধ্যে রূপালী বা সোণালী জরির কাজ করা থাকিত । রঙিন কাপড়ের ও ছিটের লেপের উপর এমন সুন্দর নক্সার সেলাই করা হইত যে দেখিলে অঙ্কিত চিত্র বলিয়া মনে হইত। স্বরাটে ভালো ভালো কাপে টও প্রস্তুত হইত। মূল্যবান সুরাট । কাপেট রেশমে প্রস্তুত হইত এবং তদুপূরি ফুল বা নক্সা dペ> অতি স্বাভাবিক ও সুন্দর হইত। কোন কোন কাপেটের জমি সোণালী রূপালী জরির এবং ফুল ও নক্সা রেশমের করা হইত। সুরাটের কাঠের কাজও খুব প্রসিদ্ধ ছিল। খাট পালঙ্ক প্রভৃতি গৃহসামগ্রীতে গালার রং কর হইত। লিখিবার ডেস্কের উপর ঝিল্লুক, হাতির দাত, সোনা রূপা বা জহরাত বসাইয়া মিনার কাজ করা হইত। কুৰ্ম্মপৃষ্ঠের ছোট ছোট বাক্সগুলি অতি মনোহর হইত। কিন্তু সব জিনিষই অত্যাশ্চর্য সস্তা ছিল। পর্তুগালের একজন বণিক লিখিয়াছেন যে এই সকল জিনিষই পর্তুগালের জিনিষ অপেক্ষা শ্ৰেষ্ঠ এবং তাঁহাদের নিকট হইতে পর্তুগালের শিক্ষণীয় অনেক আছে। স্বরাটের লোকেরা যাহা কিছু নূতন দেখে বা শুনে তাহাই তাহারা আয়ত্ত করিয়া ফেলে। তাহার এত বুদ্ধিমান তবুও তাহারা সহজে কাহাকেও ঠকাইত না এবং নিজেরাও সহজে ঠকিত না। তাহীদের মত সজ্জন সদাচারী ভদ্রলোক আর দেখা যায় না—তাহারা সহজে পর্তুগালের কোন রীতি নীতি নকল করিত না । যে সকল বণিক এই বাণিজ্য ব্যাপারে লিপ্ত ছিল তাহাদিগকে তিনভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে - (১) ভারতের অধিবাসী হিন্দু মুসলমান (২) এসিয়ার বিভিন্ন প্রদেশবাসী, যথা পারসিক, তুতার, আরব, আৰ্ম্মানি প্রভৃতি ; এবং (৩) য়ুরোপীয়, যথা ইংরাজ, ওলন্দাজ, ফরাশী ও পর্তুগীজ। যুরোপ হইতে স্বরাটে আমদানি হষ্টত—তরবারি, চুরা, আয়ন, খেলনা, কুকুর, পারদ, হস্তিদ্বন্ত, সীসক, সিন্দুর, প্রবাল এবং মুক্ত । ১৬৫৮ হইতে ১৭০৭ সালের মধ্যে স্বরাটের পূর্ণ বাণিজ্যোন্নতি ঘটিয়াছিল। ১৬৯৫ সালে সুরাট ভারতের প্রধান বাণিজ্যবন্দর ছিল---জগতের যাবতীয় জাতি এখানে সমবেত হইত এবং ভারতসাগরযাত্রী কোন জাহাজই স্বরাটে না আসিয়া অন্যত্র যাইত না। স্বরাটের হিন্দু বণিকদিগের সম্বন্ধে কথিত আছে যে তাহারা মনে মনে এত শীঘ্র এমন সকল অঙ্ক কশিত যে অন্য দেশের শ্রেষ্ঠ আন্ধিক তাহা কাগজ কলম লইয়া কশিতে পারে না। ১৬৬৪ সালে সুরাটের দুইটি বণিকপরিবার জগতের মধ্যে