পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

む○○ দিকে তাহাদের আশৈশব বন্ধুত্ব, আর একদিকে কেবলমাত্র দুইদিনের আলাপ অথচ কাটা এত অনায়াসে এই দিকেই হেলিয়া পড়িল । একি কখনো সহ করিতে পারা যায় ! যে বিনয়কে গোরা নিঃসংশয়ে অত্যন্তই আপনার বলিয়া জানিত তাহার অtহ ক্রিয় দশ ! ইস্কুল কলেজের ছাত্রদের মধ্যে একদল গোরার অনুবত্তী ভক্ত ছিল। রবিবারে গোরা তাহাদিগকে লইয়া কোনো দিন ক্রিকেট খেলাইত, কোনো দিন ধাপার মাঠে শিকার করিতে লইয়া যাইত, কোনো দিন মাণিকতলার কোনো একটা পোড়ো বাগানে লইয়া গিয়া বনভোজনে প্রবৃত্ত হইত। বিনয়ের স্বভাবটা কুনো—সে ঘরে বসিয়া বই পড়িতে গল্প করিতে ভাল বাসে, লোকজন দেখিলে ডরায় । তাহার সেই স্বভাবটা ছাড়াইবার জন্ত গোরা তাহাকে তাহদের রবিবারের কাণ্ডে টানাটানি করিয়া লইয়া যাইত এই জন্য মবিবারের দিনে বিনয় প্রায়ই পালাইয়া বেড়াইত। আজ রবিবারের সকালে বিনয় নিজে ধরা দিল ; গোর আজ তাহাকে মাঠে হৌক ঘাটে হৌক যেখানে হৌক টানিয়া লইয়া যাইবে এবং সে তাহার সমস্ত অত্যাচারে মাথা পাতিয়া দিবে ইহাই তাহার মনের ইচ্ছা ছিল কিন্তু তবু গোরা যখন বিনয়কে ফেলিয়া এক অবিনাশকে লইয়া বাহিরে চলিয়া গেল তখন অবিনাশ স্পষ্টই বুঝিতে পারিল গোর এবং বিনয়ের মাঝখানে একটা কি গোল বাধিয়াছে। অবিনাশ বিনয়ের মত লইয়া ব্যবহার লইয়া গোরার কাছে কিছু না কিছু আপত্তি যখন তখন প্রকাশ করিত গোরা তাহাতে সকল সময়ে অসন্তুষ্ট হইত না। অবিনাশের গোড়ামি গোর পছন্দ করিত। গোরা বলিত, যাহাঁদের বুদ্ধিশুদ্ধি অধিকমাত্রায় নাই তাহারা হয় উদাসিন নয় গোড়া হুইবেই ; এ সব লোকের গোড়ামি মারিয়া দিলেই ইহাদিগকে একেবারে পঙ্গু করিয়া দেওয়া হয় ; ইহাদের গোড়ামিতে দম দিলে তবেই ইহারা চলে। তা ছাড়া গোরার মতে সকল বড় ব্যাপারে গোড়ামির একটা সময় আছে। রান্নার সময় আগুন নহিলে খাবার পাকিয় উঠে না—খাবার সময় আগুন অনাবশুক এবং অপ্রিয়। গোড়ামির উত্তেজনাও সেই আগুনের মত—যে কোনো বড় উদ্যোগের গোড়ায় তাহার খুবই প্রয়োজন— প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । সে নহিলে জল ফুটিয়া উঠে না, ডালেচালে মিশিয়া এক হয় না ;– যখন পরিবেষণের দিন উপস্থিত হইবে তখন এই আগুনকে গালি পাড়িলে ক্ষতি হইবে না । বিনয়ের দোষ এই সে একটা জিনিষের দুই দিক না দেখিয়া স্থির থাকিতে পারে না। গোরা বলে দুই দিক দেখিতে পাওয়া দৃষ্টিশক্তির একটা ব্যাধি, তাহাতে কোনোদিক স্পষ্ট দেখা যায় না। তা হৌক, কোনো একটা মত লইয়া অন্ধভাবে জেদ করা বিনয়ের পক্ষে একেবারে অসম্ভব। অথচ গোরার প্রবলতার দ্বারা তাহার জেদের দ্বারা চালিত হইতে সে ভালবাসে, সে হাজার তর্ক করুক বিচার করুক গোরার কাছে আত্মসমর্পণ করিয়া দিয়াই তাহার তৃপ্তি। বাল্যকাল হইতে এমনি ভাবেই চলিয়া আসিয়াছে । সেই জন্ত বিনয়ের মতামত তর্কবিতর্ককে গোরা বড় একটা গ্রাহ করিত না । কিন্তু অবিনাশের মতে যাহারা তাহার দলের বাহন বিনয়ের তর্কে তাহারা কান না দেয় ইহাও গোরার ইচ্ছা । সেই জন্ত বিনয়ের বিরুদ্ধে অবিনাশ অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করিলে গোরা অনেক সময় তাহাতে উৎসাহই দিয়াছে, আপত্তি করে নাই । আজ রাস্তার যাইতে যাইতে অবিনাশ কথা পাড়িল যে, বিনয় বাবু মতামতে ধরণ ধারণে প্রচ্ছন্ন ব্রাহ্ম, কেবল গোরাই তাহাকে জোর করিয়া হিন্দুয়ানির গণ্ডীর মধ্যে টানিয়া রাখিয়াছেন ইহার চেয়ে যদি তিনি প্রকাশ্বে ব্রাহ্ম হইতেন তাহা হইলে হিন্দুহিতৈষী দলের পক্ষে ভাল হইত। ইত্যাদি। আজ গোরা অবিনাশের এ সমস্ত কথা সহিতে পারিল না—সে বিরক্ত হইয়া বলিয়া উঠিল—“বিনয়কে আমি হিন্দুর দলে টেনে রেখেছি! তুমি কি মনে কর বুদ্ধিতে ক্ষমতাতে বিনয় আমার চেয়ে কোনো অংশে ছোট ! তুমি জান তার সাহায্য না পেলে আমার নিজের মত ও বিশ্বাস আমার নিজের কাছে আজ এত স্পষ্ট ও দৃঢ় হয়ে উঠত ন!” তাহার চিরবন্ধু বিনয়ের সম্বন্ধে যখন তাহার নিজের অন্তরাত্মাই তাহাকে পীড়ন করিতেছিল, যখন রাস্তার সমস্ত . ভিড়ের মধ্যে বিনয়ের ক্ষুণ্ণমুখ গোরার মনে জাগিতেছিল তখন সেই বিনয়ের উপর আর কাহারে হাতের লেশমাত্র আঘাত সে সহিতে পারিবে কেন ? অবিনাশের বোধশক্তি সুক্ষ্ম নহে; গোরার হৃদয়ের গভীর