পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७१७

  • 4, 24*

কিঞ্চিৎ সুস্থ বোধ করেন। তাল হইতেই হয় ত দেশের এই পরম অকল্যাণ সাধিত হইয়াছে। কলিকাতায় কয়েকজন মাত্ণেয়ারী ও মুসলমান ব্যবসায়ী কোকেন পাইকারী বিক্রয় করে । এক ড্রাম শিশির মূল্য ২০ টাকা। খুচরা বিক্রয় ছোট ছোট দোকানে ও পানওয়ালাদের দ্বারা হয় । ( অনেকে পানের সঙ্গে কোকেন খায় জানি )। ২০ টাকার এক শিশি কোকেন খুচরা বিক্রয় করিয়া ৩ টাকা পাওয়া যায়। কোকেনের খরিদার আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই। স্কুলের ছেলেদের মধ্যে এ রোগ শনৈ: শনৈঃ প্রস্থত হইতেছে। কলিকাতার মায়ে মারা বাপে খেদান রাস্তার ছেলেগুলো পয়সার অভাবে ছিচকে চুরি করিয়া মেীতাত সংগ্রহ করে। ১৯০১ সালে আলিপুরের প্রধান জেলখানায় ২০০ বালক অপরাধীর মধ্যে ৩৭ জন কোকেনথোর ছিল । কোকেন ব্যবসায় বন্ধ করিবার চেষ্টা সত্বেও বঙ্গের আৰকারী বিভাগের রিপোর্ট হইতে কোকেনের ক্রমবদ্ধিষ্ণু বিপুল আমদানি জানা যায়। লুকাইয়া কোকেন বিক্রয়ের অপরাধে ১৯০২–০৩ সালে ৬৯ জন, ১৯০৩- ০৪ সালে ১৯০, ১৯০৪- ০৫ সালে ১৯৮ ও ১৯০৫- ০৬ সালে ২১৪ জন শাস্তি পাইয়াছে। গত বৎসর ২১৪ জনের মধ্যে কলিকাতায় ১৮৮, ২৪ পরগণা ৮, হুগলি ৭, মুঙ্গের ও ভাগলপুরে ৪ জন করিয়া ৮ জন, পূর্ণিয়াতে ২ জন। গত বৎসর ডিটেক্‌টিভ বিভাগ ইংলণ্ড হইতে অদ্যায় আমদানি দুই টিন কোকেন ধরিয়াছিল, সেই টিনের উপর লেবেল অঁাটা লেখা ছিল ‘ছাপান গান’ । এইরূপ কত ছদ্মবেশে যে কোকেন ভারতে আসিতেছে তাহার কে ইয়ত্ত করিতে পারে ? সেই ছদ্ম কোকেনের আমদানিকারের হাজার টাকা জরিমানা হইয়াছিল এবং উপযুক্তই হইয়াছিল। ফরাশী চন্দননগর, মোরাদাবাদ, লক্ষে এবং যুক্তপ্রদেশের অন্যান্ত স্থান হইতে গোপনে কলিকাতায় কোকেন চালান হয়। গত বৎসর যুক্তপ্রদেশে কোকেন আবকারী মাগুলের অধীন ছিল না ; এজন্য এক আউন্স কোকেন যুক্তপ্রদেশে .৫০ টাকায় পাওয়া যাইত, কলিকাতায় সেই এক আউন্সের মূল্য ৯০ টাকা। গোপন আমদানিতে কলিকাতার ব্যবসারীর প্রভূত লাভবান হইত। গত বৎসর একজন হিন্দু প্রবাসী । শের স্থানী পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক কলিকাতায় যায়; তাহদের ৭ম ভাগ ! বিছানার মোট অসম্ভব ভারি বোধ হওয়ায় অনুসন্ধান দ্বারা তাহাদের বালিশের তুলার ভিতর হইতে কয়েক শিশি কোকেন বাহির হয়। খুচরা বিক্রয়ের জন্য ৬০ গ্রেণের অধিক রাখিবার নিয়ম নাই। খুচরা বিক্রেতার পুরিয়া বাধিয়া কোকেন বিক্রয় করে ; তাহাদিগের চুরি বিক্রয় ধরা দুষ্কর। কোকেনের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি হওয়ায় খুচরা বিক্রেতার কোকেনের সঙ্গে সোড বা তদ্বিধ , সাদা গুড়া মিশাইয়া পুরিয়া বাধিয়া বিক্রয় করে । এই অভ্যাস কলিকাতার গণ্ডি পার হইয়া কলের মজুরদের মধ্যে বাহিরেও প্রস্ত হইতেছে। বৰ্দ্ধমানের সেকরার রাত্রি জাগিয়া গহনা গড়িবার জন্ত কোকেন ধরিয়াছে। মজঃফরপুরে ধনী ও মাতববর লোকের মধ্যে এ অভ্যাস অধিক দেখা যায়। সারণ ও মুঙ্গেরে অসৎ স্থানে পাপ উদ্দেশ্রে ইঙ্গর মাদকতার সহায়তা গ্রহণ করা হয় । ভাগলপুরে কোকেন স্কুলের বালকদিগকে উৎসন্ন দিতেছে। কোকেনের ব্যবসায় রোধ করিবার চেষ্টা চলিতেছে। বোম্বাই সহরে নিম্ন ও মধ্য শ্রেণীর লোকদিগকে কোকেন আক্রমণ করিয়াছে। ১৯০০ সালে বাংলা হইতে এই কুঅভ্যাস বোম্বাই সহরে প্রবর্তিত হয় বলিয়া জনশ্রুতি । ১৯০২ সালে প্রতি মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকার কোকেন বোম্বাই সহরে বিক্রয় হইয়াছিল। পাতার পুরিয়ায় পানসুপারীর দোকানে প্রকাশুভাবে ইহা বিক্রয় হয়। ১৯০২ সালে প্রশ্ন উঠে যে ইহা মাদকশ্রেণীভুক্ত হইবে কি না । যে ম্যাজিষ্ট্রেট মহাপ্রভু বিচার করেন তাহার অপার বুদ্ধিতে স্থির হয় যে কোকেন মাদক নহে, কারণ ইহা ত পানীয় নহে। এই অদ্ভুত নৈয়ায়িকের বিচার হাইকোটে আপীল হওয়ায় রহিত হইয়া কোকেন মাদক বলিয় প্রতিপন্ন হয় এবং তাহার বিক্রয় অনুমতিসাপেক্ষ করা হয়। গত বৎসর দিল্লীতে ইহার খুব প্রচার হইয়াছে। ইহার আকর্ষণ হিন্দুমুসলমান, বালকবৃদ্ধ, স্ত্রীপুরুষ কাহাকেই বাদ দেয় নাই। প্রত্যহ হাজার শিশি বিক্রয় হইয়াছে এবং ধনীগৃহের দুলালগণ প্রত্যহ ৪৬ শিশি উজাড় করিতে পটু। পঞ্জাব গবর্ণমেণ্ট ইহার বিক্রয় বন্ধ করিবার জন্ত ঘোষণা করিয়াছেন।