পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©ᏬᎸk কোনই প্রভেদ দেখা যায় না। উহার একই জননীর স্তষ্ঠে বৰ্দ্ধিত ; অধ্যাপকের ইংলণ্ড হক্টতে আইসে, একই শিক্ষার বিষয়, একই পাঠাভ্যাস, একই পরীক্ষা, একই ল্যাটিন গদ্য প্রবন্ধ, একই ল্যাটিন পদ্য, গ্ৰীক ল্যাটিন ভাষার কোন অঙ্গই বাদ পড়ে না। আমি যদি এই কথা ইন্দো-চীনের সম্বন্ধে বলিতাম, তাহ হইলে সকলেষ্ট সমস্বরে বলিয়া উঠিত – এ ত, খাটি ফরাসী-ভাব। কিন্তু আমি ভারতের সম্বন্ধেই বলিতেছি,– ইংরাজের সম্বন্ধেই বলিতেছি ; ইংরাজ মেকলেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টা ; এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য তিনিই দায়ী, তিনি জানিয়া বুঝিয়াত ইহা স্থাপন করেন। ইহার দ্বার। তিনি ইঙ্গ-ভারতীয় রাষ্ট্রনীতির মাথায় সজোরে লগুড়াঘাত করিয়াছেন । ক্রিকেট ও পোলোর দিগ্বিজয়ী খেলোয়াড়, প্রতিযোগিতার পরীক্ষায় সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশুলী ও সংবাদপত্র পরিচালক- এই “নব্য-ভারত,”—বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমস্ত শিক্ষিত ছাত্রমণ্ডলী:- ইহার এক প্রকার মেকলের মরণোত্তর জাত সস্তান । যুরোপীয় লোকের দ্বারা এসুিয়িকদিগকে শিক্ষাদান— ইহা একটি দুরূহ ও ভীষণ সমস্তা ! এই সম্বন্ধে অনেকে জাপানের দৃষ্টাস্ত দেখাইবেন, আমি জানি । বাহাতঃ, এই দৃষ্টাস্তের দ্বারাই যেন সমস্ত মীমাংসা হইয়া যায়। জাপানীদের অভাবনীয় নূতন নুতন কীৰ্ত্তিকলাপ দেখিয়া এই অতি প্রাচ্য জাতির সম্বন্ধে আমরা বিস্ময়ান্ধ হইয়া পড়িয়াছি । আত্মসাৎ করিবার ইহাদের কি আশ্চৰ্য্য শক্তি ! স্বাত্মীকরণে ইহাদের কি আশ্চর্য্য ক্ষমতা ! ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে, একেবারে সমস্ত জাতি-কে-জাতি ইস্কুলে ভৰ্ত্তি হইল। উহার আমাদের প্রণালী, আমাদের বিজ্ঞান, আমাদের ভাষা, আমাদের অধ্যাপক, আমাদের নিকট হইতে ধার করিয়া লইয়াছে ; এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শে, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছে। এক বংশব্যাপী কালের মধ্যেই উহারা আমাদের ধরিয়া ফেলিয়াছে— উহারা বলে, আমাদিগকে ছাড়াইয়া উঠিয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবকের মনে মনে এইরূপ কল্পনা করিয়া গৰ্ব্ব অনুভব করে যে উহার যুরোপীয় হইয়া গিয়াছে,—উহারা আপাদমস্তক আধুনিক ভাবাপন্ন হইয়াছে। কিন্তু ইহা বাহাকার মাত্র ; বিলাতী ভাবটা প্রবাসী। শুধু উপরে-উপরে ভাসিতেছে। শুধু তাহা নহে, জাপান আপনার সীমা বুঝিয়াছে ; সে সীমা লঙ্ঘন করিতে জাপান সাহস করে না । জাপান প্রথমে স্পৰ্দ্ধা করিয়া অসম্ভবকে অবজ্ঞা করিয়াছিল, - মনে করিয়াছিল, তাহার অসাধ্য কিছুই নাই ; তাহার দৃষ্টান্ত, জাপান মনে করিয়াছিল, নিজের ভাষা ছাড়িয়া, য়ুরোপীয় ভাষা গ্রহণ করিবে। এইরূপ সংকল্প করিয়াছিল বটে কিন্তু সে সংকল্প জাপান পরিত্যাগ করিয়াছে। কিন্তু মেকলের এরূপ ভীরুত ছিল না । তিন সহস্ৰ বৎসরের শিক্ষাদীক্ষণকে মেকলে একেবারেই অগ্রাহ্য করিলেন। তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ্য বিষয় হইতে ভারতীয় ভাষাদিগকে দূরীভূত করিলেন বলিলেও হয় -অন্ততঃ উহাদিগকে বিদ্যালয়ের নিয়শ্রেণীতে নামাষ্টয়া দিলেন,—উগদিগকে অন্তরালে রাখিলেন । কালেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে, মুখ্যভাবে ইংরাজী ভাষাতেই শিক্ষা দিবার ব্যবস্থা হইল । পারস্ত ভাষা সখের শিক্ষণরূপে রহিল-— উহা শেখা, না শেথী ছাত্রের ইচ্ছাধীন। জাপানের রাজমন্ত্রিরা যাহা করিতে সাহস করেন নাই, মেকলে তাঙ্গ নিৰ্ভয়ে সম্পন্ন করিলেন । তিনি এমন একটা কাজ করিলেন যাহা বিস্ময়জনক ; যাহার তুলনা অত্যন্ত বিসদৃশ ; তিনি সমসাময়িক ভারতকে গড়িয়া তুলিলেন। * * যে সময়ে মেকলে ভারতের হস্তে পাশ্চাত্য সভ্যতার রত্নরাজি ঢালিয়া দিবার সংকল্প করিয়াছিলেন সে সময়ে ভারতের লোক যদি অভিনব জাতি হইত, সেও এক কথা । ছিল। কিন্তু ভারতের স্বকীয় ঐতিহ্য ছিল, সুদীর্ঘ ইতিহাস ছিল, খুব নিজত্ববিশিষ্ট, খুব মৌলিকধরণের তিন সহস্ৰ বৎসরের বিদ্যাসম্পদ ছিল। ভারতের যে গভীর মৌলিকতা ছিল, সেরূপ মৌলিকতার পরিচয় জাপান কস্মিনকালেও দিতে পারে নাই। জাপান চীনের নিকট হইতে ধার করিয়া যে ঢিলেঢালা পোষাক পরিয়াছিল, যখনই দেখিল আর তাহাতে সুবিধা হয় না, অমনি সে খুলিয়া ফেলিল। টানাটানি করিয়া ছেড়াৰ্ছিড়ি করিয়া খুলিতে হয় নাই। সে পোষাক তাহার গায়ে আঁটিয়া ধরে নাই। কিন্তু পুরাতন ভারতের কথা স্বতন্ত্র। যে আর্য্যজাতি গাঙ্গেয় উপত্যকায় আসিয়া বসতি করে, সেখানে তাহারা অতীব উচ্চ, মৌলিক ধরণের দর্শনতন্ত্র গড়িয়া তুলিয়াছিল ;–উহাতে যাহা আছে ংস্কৃত ও