পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

©Ꮂ←. কাছে হঠাৎ এই হযোগ উপস্থিত। কিন্তু সীতাদেবী বিচলিত হইলেন না, তিনি হিতাহিত বিচারশক্তির নিকট বিদায় গ্রহণ করিলেন না । তিনি সে সময়ে যে সমস্ত অর্থযুক্ত কথা বলিয়া হনুমানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়াছিলেন, তাহতেই বুঝা যায় যে অবস্থাকে অতিক্রম করিয়াই তিনি সীতা । হনুমানও তাহার কথায় চমৎকৃত হইয়া বলিয়াছিলেন – এতত্তে দেবি সদৃশ পত্ন্যান্তস্ত মহাত্মনঃ। কী হান্ত ত্বামুতে দেবি ব্রুয়াদ্বচনমীদৃশম ॥ ৮, ৩৮৫ আমরা তো লক্ষ্মণের তিরস্কারের মধ্যে শ্রীরামের পত্নী সীতাদেবীকে না পাইয়াই আক্ষেপ করিতেছি। অবস্থা যদি দোষস্থালনের ওজুহাত হয়, তবে সীতা অ-সীতায় কোনও পার্থক্য থাকে না । সুতরাং লক্ষ্মণের প্রতি ওরূপ তিরস্কারে সীতাত্বের যে একটু খৰ্ব্বতা আছে তাহাতে আর সন্দেহ কি ? দ্বিতীয় কথা তিরস্কারের বিষয় সম্বন্ধে। এ সম্বন্ধে বেশী কিছু বলিতে ভয় হয়, কেন না জিতেন্দ্র বাবু স্বরুচি বলিয়া গালি দিয়াই হয় তো কেল্লা ফতে করিবেন । কিন্তু কথাট হঠাৎ ছাড়িয়াও দিতে পারিতেছি না । তাহার মতে সীতার তৎকালীন অবস্থায় লক্ষ্মণকে ওরূপ গালি মা দেওয়াটাই অস্বাভাবিক হইত এবং সীতাদেবীর পতিপ্রেমের তীব্রত ও প্রখরতা বিশেষরূপে প্রকাশিত হইত না ! চুঃখের বিষয় ঐরামের অমঙ্গল আশঙ্কায় লক্ষ্মণের প্রতি প্রযুক্ত গালাগালিতে রামায়ণের সীতার মধ্যে পতিপ্রেমের তীব্রত ছাড়া জিতেন্দ্রবাবু আর কিছুই দেখিলেন না, অথচ সেই রামেরই অমঙ্গল আশঙ্কায় ‘অজ্ঞান’ হইলেন বলিয়া মেঘনাদবধের সীতা কেবল “বাঙ্গালীর গৃহবধু হওয়ার অপবাদ লাভ করিলেন ! হায় রে কপাল! হায় রে স্বমত সমর্থনের গরজ ! এখন যদি র্তাহারই অস্ত্রকরণে কেহ সীতাদেবীকে মেছুনীর সঙ্গে তুলনা করে তবে জিতেন্দ্রবাবুর শ্লাঘা করিলার যথেষ্ট কারণ আছে, কেন না, উপযুক্ত শিষ্য মিলিলে,—“তোমার শিক্ষিত বিদ্যা দেখাই তোমারে” । কথাটা এই অবিচার সর্বাবস্থাতেই অবিচার। পতিপ্রেমের খাতিরেও অন্তের প্রতি অবিচার করিবার কাহারও অধিকার নাই। নারীর পক্ষে পতিচিন্তায় আত্মহারা হইয়াও যে জীবনের অন্যান্ত কর্তব্য বিস্তৃত হওয়া অন্যায় তাহ আৰ্য্যকবিই দুৰ্ব্বাস কর্তৃক শকুন্তলার প্রতি প্রবাসী । অভিশাপের ফল ফলাইয়া শিক্ষা দিয়া গিয়াছেন। সীতার { ৭ম ভাগ । পতিপ্রেম অতুলনীয়, কিন্তু তাই বলিয়া তিনি যদি সেই পতিপ্রেমের অনুরোধে অন্তের প্রতি অন্তায় ব্যবহার করেন তবে তাহ অন্যায় বলিয়া ধরা হইবে না, এই যুক্তির সারবত্ত আমাদের ক্ষুদ্রবুদ্ধির অগম্য। জিতেন্দ্রবাবু কিন্তু তাহাই বুঝাইতে চান । লক্ষ্মণের প্রতি সীতাদেবীর তিরস্কার অন্যায় হইয়াছে দুই কারণে। প্রথমতঃ উহা অস্বাভাবিক। লক্ষ্মণের আচরণে ও সীতাদেবীর পুৰ্ব্বাপর কথা বাৰ্ত্তায় এই সন্দেহের কোনই হেতু (justification) বিদ্যমান নাই। আমরাও যোগীন্দ্রবাবুর সঙ্গেই বলি যে অন্ততঃ ত্রয়োদশবর্ষকাল তিল তিল জীবনপাত করিয়া, কেবল চরণপ্রাস্তে নয়নদ্বয় সন্নদ্ধ রাখিয় প্রতিমুহূর্তে প্রতিকার্য্যে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়া যে বিশ্বাস উৎপন্ন করা হইয়াছে তাহ “অকস্মাৎ এরূপ সন্দেহে পরিবৰ্ত্তিত হওয়া স্বাভাবিক নহে”। অন্যদিকে, যে ভাই পিতৃদত্ত রাজ্য ফিরাইয়া দিবার জন্য স্বরাজ্য অযোধ্যা হইতে চিত্রকুটে আসিয়াছিলেন সেই ভরতকে ইহার মধ্যে টানিয়া আনা কি অস্বাভাবিক নহে? জিতেন্দ্রবাবু বলিতেছেন যে আজীবনের বিশ্বাস সংসারে এমন এক দিনে নষ্ট হইয়া যায় ! সংসারে সামান্য মানুষের মধ্যে যাহা হয় সীতা ও লক্ষ্মণের সম্বন্ধেও তাঁহাই কি ? সংসারে ঘটিতেছে তাহাতে কি ? ( সংসারে তো মন্দোদরী বিভীষণকে বরণ করেন, তারা সুগ্ৰীধকে গ্রহণ করেন ? ) সীতা ও লক্ষ্মণের সম্বন্ধের মধ্য দিয়া তাহা ঘটিবার স্বাভাবিকতা দেখান চাই, নইলে চলিবে না। জিতেন্দ্রবাবু সাহিত্যজগতে ওথেলোর কথা বলিয়াছেন। সাক্ষী কিন্তু উন্ট সাক্ষ্য দিতেছে। ওথেলোর বিশ্বাস কি একদিনের সামান্য ঘটনায় ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল ? তাঙ্গর হৃদয়ে দেশদেমিনোর প্রতি অবিশ্বাস উৎপন্ন করিবার জন্য দুরাচার ইয়াগো দিনের পর দিন কত ঘটনার মধ্য দিয়া কত চাতুরী অবলম্বন করিয়াছিল তাহ পাঠক মাত্রই অবগত আছেন। কিরূপে ধীরে ধীরে দৃঢ় বিশ্বাস তীব্র সন্দেহে পরিণত হয় মানবহৃদয় তত কবি ওথেলোতে তাহার psychology প্রদর্শন করিয়াছেন, ওথেলোর সন্দেহের পশ্চাতে দীর্ঘ ইতিহাস রহিয়াছে। সীতা ও লক্ষণের সম্বন্ধের মধ্যে তাহার বিন্দু বিসর্গও নাই। মাহ আছে তাহাতে