পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(t\ro তহি বুঝিতেন। তাই খরদূষণের আক্রমণে সীতাদেবীকে লইয়া জঙ্গলাবৃত পৰ্ব্বতগহ্বরের নিরাপদ স্থানে যাইবার জন্য লক্ষ্মণকে আদেশ দিয়া ভাবিলেন যে ইহাতে হয় তো লক্ষ্মণের ক্ষত্রিয়াভিমান ক্ষুণ্ণ হইতে পারে, লক্ষ্মণ হয় তো মনে করিতে পারেন যে আমি তাহাকে যুদ্ধে অসমর্থ মনে করিয়া কৌশলে যুদ্ধস্থান হষ্টতে সরাষ্টতেছি, কোথায় আঘাত লাগিলে ক্ষত্রিয়ের হৃদয় বিদীর্ণ হয়, মৰ্ম্মঘাতী বেদন উপস্থিত হয় তাহা জানিয়াই বলিলেন— ত্বং হি শুরশ্চ বলবান হস্য। এতান ন সংশয়ঃ। ক্ষত্রিয়কে ভীরু বলিলে যে তাহার তীব্র যাতনা হয়, তাহার হৃদপিণ্ড বিদারিত হয়, তাহার হিতাহিত বিবেচনাশক্তি লোপ পায়, ইহার দৃষ্টান্ত আছে। লক্ষ্মণেরই মত আর একজন জিতেন্দ্রিয় আত্মজয়ী ক্ষত্ৰকুলধুরন্ধর যিনি আত্মসংযমের মহাপরাধে নপুংসকত্বের অপবাদ লাভ করিয়াছিলেন, ীিয় চরিত্রে ভীরুতার অপবাদ আরোপ করিতে না করিতেই সেই দেবোপম জ্যেষ্ঠ লাতারই মস্তক ছেদনের জন্য খড়েগাত্তলন করিলেন, একদিন র্যাহাকে রেখামাত্র অতিক্রম করাকে মহাপাপ মনে করিয়া পরাক্রম সত্ত্বেও দ্বাদশ বৎসর দীনভাবে শক্রর সকল উৎপীড়ন ও উপহাস সহ করিয়া বনে বনে ভ্রমণ এবং বৎসরেক কাল ক্লাববেশে বিরাটের অন্তঃপুরে বাস করিয়াছিলেন। ভীরুতার গালি ক্ষত্রিয়ের পক্ষে কি মৰ্ম্মঘাতী তাহ অন্তে বুঝিবে কিরূপে ? এখানে আরও একটা কথা প্রণিধানযোগ্য । লক্ষ্মণ হয় তো রামায়ণী তিরস্কারটা হাসিয়া উড়াইয়া দিলেও দিতে পারিতেন, কেন না, অসম্ভব! যিনি কোন বিশেষ বিষয়ে জীবনব্যাপী পরীক্ষার দ্বারা উত্তীর্ণ জগজ্জনের নিকট প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত, সেই বিষয়ে মোহে পড়িয়া কেহ তিরস্কার করিলে তিনি হাসিয়া উড়াইতে পারেন না কি ? তাহ অন্যায্য হয় না, শোভনীয়ই হয়। ইন্দ্রজিৎজয়ী লক্ষ্মণকে কেহ ভীরু বলিলে, “নীচ যদি উচ্চ ভাষে স্ববুদ্ধি উড়ায় হেসে” এই দ্যায় অনুসারে তিনি হাসিয়া উড়াইতে পারিতেন, কিন্তু যাহার ভিতরে ইন্দ্রজিৎবিজয়ের বীর্য্য রহিয়াছে অথচ জগতের কাছে প্রকাশ করিবার সুযোগ হয় মাই তাহাকে যখন অবস্থার ফেরে পড়িয়া ভীরু বলিয় যাইতে হয়, তখন তাহার যে কি গভীর মৰ্ম্ম যাতনা উপস্থিত হয় তাহ ভূক্তভোগী ছাড়া আর কে বুঝিবে ? সাঁতাদেবীর প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ। কাছে লক্ষ্মণের এই দুৰ্দ্দশাই হইয়াছিল। লক্ষ্মণ তো তাহাকে বুঝাইতে পারিতেছিলেন না যে তিনি রাক্ষসের সন্মুখীন হইতে ভীত নহেন। যুক্তিও গ্রাহ হইল না, দৃষ্টান্তও নাই। সুতরাংসীতার মুখে “রে ভীরুরে ধীরকুলগ্রানি” শুনিয়ালক্ষ্মণের যে কি মৰ্ম্মদাহ উপস্থিত হইবে তাহ সহজেই অনুমেয়। সীতাদেবী অপূৰ্ব্ব তেজোময়ী ক্ষত্রিয়ললন, তিনি সিংহিনী।” সীতা লক্ষ্মণের কাছে কেবল রমণী বা ভ্রাতৃবধু নহেন, আরও কিছু-–“দৈবতং ভবতী মম।” এই “আরও কিছু”র সম্বন্ধ যাতাদের সঙ্গে আছে তাহারা ভুল বুঝিয়া তিরস্কার করিলে যে হৃদয়ে শতগুণ বেশ শেল বিদ্ধ হয় তাহা কাহার না জানা আছে ? সিংহ হইয়াও এই সিংহিনীর কাছে লক্ষ্মণ যখন শৃগাল বলিয়া গেলেন তখন তাহার হৃদয়ে কি যাতনা না আসিবার কথা ! এই যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করিয়া লক্ষ্মণ যদি বাহির হইয় পড়েন তাঙ্গতে আশ্চৰ্য্য হইবারই বা কি আছে। এই বেদনায় অধীর হইয়াই না ক্ষত্রিয়বীর বক্রবাহন একদিন জানিয়া শুনিয়াই পিতৃমস্তক ছেদন করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন ? সুতরাং আমাদের সিদ্ধান্ত এই, মাইকেল যে তিরস্কার লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, তৎকালীন অবস্থায় লক্ষ্মণের পক্ষে উহাই অধিকতর হৃদয়বেধকারী। রামায়ণী তিরস্কারের অদ্যায্যত্বের ইহাই দ্বিতীয় কারণ একদিকে যেমন মাইকেল স্থকৌশলে তিরস্কারের আড়ম্বর ছাড়াইয়া কাৰ্য্য হাসিল করিয়াছেন, অন্যদিকে আবার সঙ্গে সঙ্গে সংক্ষেপে তেজোময়ী ক্ষত্রিয়ললনার এক উজ্জ্বল চিত্র অঙ্কিত করিয়াছেন। জিতেন্দ্রবাবু যত সহজে হাসিয়া উড়াইয়া দিবার চেষ্টা করিয়াছেন, মধুসূদনের কবিত্ব তত সহজে ভাসিয়া যাইবার নহে। আমরা বিংশ শতাব্দীর রুচিরূপ ক্ষুদ্র মাপকাঠি দ্বারা পরিমাণ করিতেছি না কিন্তু প্রাচীন গরিমাময় ক্ষত্ৰিয়ত্বের বিশাল মানদণ্ডের দ্বারাষ্ট বিচার করিতেছি। এই মানদণ্ড হারাইয়াই না ভারত আজ এত গরীব। তারপর অত্যাচারী রক্ষ্যেবংশের প্রতি সীতাদেবীর অমুকম্পায় কথা। এ বিষয়টা জিতেন্দ্রবাবু এক কথায় শেষ করিয়া দিয়াছেন,-রক্ষ্যেবংশের বিনাশে তাহার হৃদয়ে দুঃখের উদয় অস্বাভাবিক। র্তাহার ঐকান্তিক কামনা পতিসমাগম। যাহা পতিসমাগমের বিরোধী তাহার তিরোধানে আনন্দই হইবে, দুঃখ হইবে কেন? তিনি তো সৰ্ব্বদা রাক্ষস