পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাকে দিলেন। কতকগুলা কাপি শুদ্ধরূপে লিখিত হইয়াছিল। কিন্তু কিসে আমি একটু স্তম্ভিত হইয়া পড়িলাম শুনিবে —মূলের অর্থ ব্যাখ্যা করিতে শুনিলাম। হিন্দু ও পার্সির কোন গ্রন্থের অর্থ ব্যাখ্যা করিতেছিল ?—গিজেপ্রণীত গ্রন্থের। সেও কতকটা সম্ভব। তাহার পর, হেক্টর-ম্যালোর-প্রণীত গ্রন্থের; এটা একটু হাস্তজনক। আর কোন গ্রন্থের ? ‘সেন্ট অ্যালেকৃসিসের জীবনী,’ ‘রোলার গান’—এই দুই গ্রন্থের। এইরূপ শিক্ষায় হিন্দু ও পার্সির ফরাসীভূাষার ভাষাতত্ত্বে পরিদর্শী হুইবে সন্দেহ নাই। কিন্তু এ কথা কি সত্য নহে যে, “রোলার গান"-এর অর্থ ব্যাখ্যা করা অপেক্ষা, মহাভারতের অর্থ ব্যাখ্যা করা তাহাদের পক্ষে আরও হিতকর ? কৰ গুলি ছাত্র ফরাসীভাষা শিক্ষা করিতেছে ? পেদ্রাজার গণনা-অনুসারে, ১৯০১ খৃষ্টাব্দে প্রায় ১০০০ জন ছাত্র শিক্ষণ করিয়াছিল এবং তন্মধ্যে ২৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় উপস্থিত হয়। সত্য বণিতে কি, যখন বিদ্যালয়ের এই পাঠ্যতালিকা ও যে নিয়মে শিক্ষা দেওয়া হয় সেই নিয়মের কথা আলোচনা করা যায়, তখন বিস্ময়েব উচ্ছ,সি রসন ইষ্টতে স্বতষ্ট বাহির হইয়া পড়ে। বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কতটা শেখান হয় ? এই সমস্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষা কেবল নাম মাত্র, ইহা নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যিক ; ভৌতিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিদ্যালয়ের দ্বারদেশেষ্ট থাকিয়া যায়, কিংবা ক্ষুদ্র পশ্চাৎ-দ্বার দিয়া ভিতরে প্রবেশ করে.আশ্চর্য্যের বিষয় এষ্ট, যাহারা চাহিবার আগেষ্ট ভারতকে যুরোপীয় শিক্ষারূপ এমন একটা মহৎ সামগ্ৰী দান করিয়াছেন, তাহারা ভুলিয়া গিয়াছিলেন —এই যুরোপীয় শিক্ষার বিশেষত্ত্বটি কোথায়। আমার মনে হয়, ভারতকে দুই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত ; ইতিহাস ও পর্যবেক্ষণ। এখনও ভারত সে অবস্থায় আসে নষ্ট যে অবস্থায় উপনীত হইলে, মন আপনার প্রতি ও চতুর্দিকস্থ পদার্থসমূহের প্রতি স্থিরভাবে বহিদৃষ্টি নিক্ষেপ করিতে পারে। এখনও ভারত স্বকীয় মনোভাব, স্বকীয় স্বপ্ন, স্বকীয় কল্পনা হইতে বাস্তব জগতের প্রভেদ নির্ণয় করিতে পারে না, এবং ভারতের ইতিহাস যেমন মহাকাব্য হইতে,-সেইরূপ ভারতের বিজ্ঞানও দর্শন হইতে এখনও বিনিযুক্ত হয় নাই। আত্মসম্বলের উপর নির্ভর কুরিতে হইলে, ভারত ইহার প্রতীকারের কোন উপায় খুজিয়া পাইবে না। বৈজ্ঞানিক শিক্ষার বন্দোবস্ত ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার নিৰ্ম্মাণের বন্দোবস্ত করিতে হইলে, প্রভূত অর্থের প্রয়োগন। এ অর্থ কোথা হইতে আসিবে ? ইংলণ্ডের যুবরাজকে, হিরক উপহার দিবার জন্য রাজার স্বেচ্ছাপূৰ্ব্বক সৰ্ব্বস্বাস্ত হইয়া থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অধ্যাপকের আসন স্থায়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত করিবার কথা একবারও তাঁহাদের মনে আইসে না । কিন্তু এটা লক্ষ্য করিও, এবিষয়ে আমরাও হিন্দুর মতন ; আমরা ধৰ্ম্ম মঠাদি স্থাপনের জন্ত অর্থ দান করি, উইল’ করি ; আর শ্রমশিল্পের ধন্যগণ-সেই ‘লৌহ-ইস্পাতের রাজার, পুস্তকালয় স্থাপন করিতেছে, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার স্থাপন করিতেছে, অধ্যাপকের আসন প্রতিষ্ঠিত করিতেছে... অতএব যে ইংরাজ সরকার ভারতের ভাগ্যবিধাতা বলিয়া অহংকার করেন,— এই সকল অভাব পূরণ করা তাহাদের কর্তব্য। কিন্তু ভারতের ভাগ্যবিধাতা তখন নিদ্রা যাইতেছিলেন । এখনও পর্য্যন্ত, মধ্যম বিদ্যালয়ে, উচ্চ বিদ্যালয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্পষ্ট কালেজাদিতে-যাহাকে প্রকৃত বিজ্ঞানশিক্ষা বলে, সেরূপ বিজ্ঞান-শিক্ষা দেওয়া হয় না। সম্প্রতি কি হইয়াছে ? বি-এ ও এম-এ পরীক্ষার জন্ত বিজ্ঞানের সমস্ত বিভাগই নিদ্ধারিত হইয়াছে, অথচ বৈজ্ঞানিক শিক্ষারই অভাব। পাঠ্য তালিকাকে ফাপাইয়া তোলা হইয়াছে— ( নিছক একটা চোপ-ভোলানো জিনিস ) অথচ কালেজের ছাত্রেরা—অধ্যাপকের জন্য, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারের জন্ত, পরীক্ষণ-আয়োজনকারার জন্য ধৈর্য্যসহকারে অপেক্ষা করিয়া থাকে। কেবল প্রেসিডেন্সি কলেজেই একটি উৎকৃষ্ট পরীক্ষাগার আছে। কেবল ঐ কালেজেই দশবৎসরাবধি ভূতত্ত্ববিদ্যার শিক্ষা দেওয়া হইতেছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের -শিক্ষা অতীব অসম্পূর্ণ ও সেকেলে ধরণের। হিন্দুরা উত্তম চিনি ইপক হইতে পারে। যদি কোন বিদ্যা-শিক্ষায় দৈনন্দিন উন্নতির অনুসরণ করা বিশেষরূপে আবশুক হয়—সে নিশ্চয়ই চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষায় । স্বাধীনরাজ্য জাপানের সহিত ভারতের একবার তুলনা করিয়া দেখ ; ফুেজিনিসে আমাদের শ্রেষ্ঠতা অবিসম্বাদিত, সেই বৈজ্ঞানিক যন্ত্রাদি, জাপান