পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ും সালের কোনও পুরাতন মসজিদ হইতে এই ফলকলিপি সংগৃহীত হইয় ফকির মহম্মদের মস্জেদে সংযুক্ত হইয়াছিল।” তোগর অক্ষরে খোদিত ফলকলিপি সকলে পাঠ করিতে পারে না ; অনেক লিপির প্রথমেই কোরাণোক্ত “সুরা” উদ্ধত দেখিতে পাওয়া যায়। এই সকল কারণে লোকে ফলকলিপিকে পবিত্র শ্লোক মনে করিয়া পূজা করিত – পরবর্তীকালে মসজেদ রচনা করিতে গিয়া, তাহার পবিত্রতাবৃদ্ধির আশায়, তাহাতে পুরাতন ফলকলিপি সংযুক্ত করিয়া দিতে ইতস্ততঃ করিত না। মালদহের এক মুসলমান কৃষক ধৰ্ম্মপালের একখানি তামশাসনকে এইরূপে পূজা করিত। সে জীবিত থাকিতে তাহা বিক্রয় করিতে সম্মত হয় নাই। তাহার মৃত্যুর পর তাহার স্ত্রীর নিকট হইতে মালদহের কালেক্‌টার স্বৰ্গীয় উমেশচন্দ্র বটব্যাল মহাশয় তাহা ক্রয় করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন । তখন দেখা গিয়াছিল,—মুসলমান ক্লযক কত সস্তপণে সিন্দুর লেপন করিয়া ফলকলিপির অক্ষরগুলি ঢাকিয়া ফেলিয়াছিল! এই প্রবৃত্তি কৌতুহলোদ্দীপক হইলেও, ইহার কল্যাণে অনেক পুরাতন লিপি অদ্যাপি সুরক্ষিত হইয়া রহিয়াছে। শাক মোহনের ফলক লিপি এইরূপে আবিষ্কৃত হইবার পর একটি নূতন ঐতিহাসিক গবেষণার সূত্রপাত হয়। সচরাচর প্রচলিত ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায়,–হিজরী ৮৭৯ সাল পর্যন্ত বাৰ্ব্বক শাহ গৌড়েশ্বর ছিলেন । হিজরী ৮৭৬ সালে তাহার পুত্রের ফলকলিপি কিরূপে বিশ্বাস যোগ্য বলিয়া পরিচিত হইতে পারে ? ইলাছিবক্স এই সংশয়ের অবতারণা করিয়া তাহার কোন সদুত্তর প্রদান করেন নাই। অধ্যাপক ব্লকম্যান নানা অনুমানের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া, এই ফলকলিপির সহিত প্রচলিত ইতিহাসের সামঞ্জস্ত রক্ষার চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন। প্রকৃত প্রস্তাবে ইহাতে অসামঞ্জন্তের আশঙ্ক উপস্থিত হইয়াছিল কেন, তাহাই বরং নিরতিশয় কৌতুহলের ব্যাপার। গৌড়ের অন্তান্ত ফলকলিপিতে দেখিতে পাওয়া ধায়,—যেখানে তাঙ্গ বাদশাহ কর্তৃক সংস্থাপিত, সেখানে সে কথা স্পষ্টাক্ষরেই উল্লিখিত আছে। এই ফলকলিপিতে বাৰ্ব্বক শাহ বাদশাহ বলিয়া উল্লিখিত ; তাহার পুত্র কেবল বাদশাহের পুত্র বলিয়াই উল্লিখিত। সুতরাং এই ফলকলিপি খোদিত হইবার সময়ে বাৰ্ব্বক শাহই বাদশাহ ছিলেন। প্রবাসী । [ १म छन । র্তাহার পুত্র একটি মস্জেদ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন বলিয়া, আপন পরিচয় বিজ্ঞাপনের জন্য পিতার নাম উল্লিখিত করিয়া গিয়াছেন ; স্বয়ং বাদশাহ ছিলেন না বলিয়া, আপন নামের সহিত সেরূপ উপাধির সংযোগ করিয়া যান নাই ! ফুটি মসজেদ । , মালদহের আর একটি দর্শনীয় মস্জেদের নাম “ফুটি মসজেদ।” ইহার নিকটে সমাধি আছে। মস্জেদটি ফাটিয়া গিয়াছে বলিয়াই ইহার এরূপ অদ্ভুত নাম প্রচলিত হইয়া থাকিবে । ইহাতে যে ফলক-লিপি সংযুক্ত আছে তাহাতে দেখিতে পাওয়া যায়,-থান মওয়াজ্জাম নামক এক ব্যক্তি ইহার নিৰ্ম্মাণকৰ্ত্তা। এই মসজেদ ১৪৯৫ খৃষ্টাব্দে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল বলিয়া অধ্যাপক ব্লকম্যান সিদ্ধান্ত করিয়া গিয়াছেন । ইলাহিবক্স ইহার যেরূপ পাঠোদ্ধার করিয়া গিয়াছেন, তাহার সহিত অধ্যাপক ব্লকম্যানের উদ্ধত পাঠের কিছু কিছু ইতরবিশেষ দেখিতে পাওয়া যায়। এই মসজেদটি এখনও ব্যবহৃত হইয়া থাকে । পুরাকালে কোন মহল্লায় কিরূপ লোকের বসতি ছিল, এই সকল পুরাকীৰ্ত্তি দেখিয়া তাহ কিয়ৎ পরিমাণে অনুমান করিতে পারা যায়। সেকালের বৃহৎ নগর একালে ক্ষুদ্র পল্লীতে পরিণত হইয়াছে। কিন্তু এই সকল পুরাতন মস্জেদ ধরিয়া সীমা নির্ণয় করিতে গেলে, পুরাতন মালদহকে একটি বৃহৎ নগর বলিয়াই ব্যক্ত করিতে হয়। অন্তান্ত বৃহৎ রাজনগরের ন্যায় পুরাতন মালদহেরও নগরোপকণ্ঠ বর্তমান ছিল। এখন তাহা জনশূন্ত হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে। কৃষকগণ যেখানে হলকর্ষণ করিতেছে, সেখানে হয়ত রাজপ্রসাদ বৰ্ত্তমান ছিল। যেখানে একদিন দিল্লীশ্বর শিবির সন্নিবেশ করিয়া পৌণ্ড বৰ্দ্ধন অবরোধ করিবার আয়োজন করিয়াছিলেন, সেখানে হয়ত এক দরিদ্র কৃষক কুটীর প্রাঙ্গণে উপবিষ্ট হইয়া নিত্য দুর্ভিক্ষের কঠোর পীড়নে আকাশের দিকে চাহিয়া চাহিয়া কপালে করাঘাত করিতেছে! অভ্যন্তরের অবস্থা যেরূপ হউক না কেন, নদীবক্ষ হইতে পুরাতন মালদহের দৃপ্ত এখনও বড় সুন্দর বলিয়া বোধ হয়। যেন একখানি চিত্ৰপট সুবিন্যস্ত হইয়া রহিয়াছে ! নদীতীরের সোপানাবলী ও দেবমন্দির তাহার শোভা আরও উদ্ভাসিত করিয়া তুলিয়াছে। এই নগর অল্পকাল পূৰ্ব্বেও শিল্প বাণি