পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেক্রেটারি-কিতেই হারশান্তিছিল না। এই যুবকটিই । যে একদিন ব্রাহ্মসমাজে অত্যুচ্চ স্থান অধিকার করিৱে সকলেরই মনে এই আশ ছিল। বিশেষতঃ ইংরেজি ভাষায় তাছার অধিকার ও দর্শনশাস্ত্রে তাহার পারদর্শিতা সম্বন্ধে থ্যাতি বিদ্যালয়ের ছাত্রদের যোগে ব্রাহ্মসমাজের বাহিরেও বিস্তৃত হইয়াছিল। 畿 এই সকল নানা কারণে অন্তান্ত সকল ব্রাহ্মের দ্যায় সুচরিতাও হারাণ বাবুকে বিশেষ শ্রদ্ধা করিত। ঢাকা হইতে কলিকাতায় আসিবার সময় হারাণ বাবুর সহিত পরিচয়ের জন্ত তাহার মনের মধ্যে বিশেষ ঔৎসুক্য ও জন্মিয়াছিল। অবশেষে বিখ্যাত হারাণ বাবুর সঙ্গে শুধু যে পরিচয় হইল তাহী নহে অল্প দিনের মধ্যেই সুচরিতার প্রতি তাহার হৃদয়ের আকৃষ্টভাব প্রকাশ করিতে হারাণ বাবু সঙ্কোচ বোধ করিলেন না। স্পষ্ট করিয়া তিনি যে সুচরিতার নিকট তাহার প্রণয় জ্ঞাপন করিয়াছিলেন তাহী নহে–কিন্তু সুচরিতার সর্বপ্রকার অসম্পূর্ণত পূরণ, তাহার ক্রটি সংশোধন, তাহায় উৎসাহ বদ্ধন, তাহার উন্নতি সাধনের জন্ত তিনি এমনি মনোযোগী হইয়া উঠিলেন যে এই কন্যাকে যে তিনি বিশেষভাবে আপনার উপযুক্ত সঙ্গিনী করিয়া তুলিতে ইচ্ছ করিয়াছেন তাহা সকলের কাছেই মুগোচর হইয়া উঠিল। এই ঘটনায় হারাণ বাবুর প্রতি বরদাসুন্দরীর পুৰ্ব্বতন শ্রদ্ধা নষ্ট হইয়া গেল এবং ইহাকে তিনি সামান্ত ইস্কুল মাষ্টার মাত্র বলিয় অবজ্ঞা করিতে চেষ্টা করিলেন। সুচরিতাও যখন বুঝিতে পারিল যে সে বিখ্যাত হারাণ বাবুর চিত্ত জয় করিয়াছে তখন মনের মধ্যে ভক্তিমিশ্রিত গৰ্ব্ব অনুভব করিল। প্রধান পক্ষের নিকট হইতে কোনো প্রস্তাব উপস্থিত না হইলেও হারাণ বাবুর সঙ্গেই স্বচরিতার বিবাহ নিশ্চয় বলিয়া সকলে যখন স্থির করিয়াছিল তখন সুচরিতাও মনে মনে তাহাতে সায় দিয়াছিল এবং হারাণ বাবু ব্রাহ্মসমাজের যে সকল হিতসাধনের জন্ত জীবন উৎসর্গ করিয়াছেন কিরূপ শিক্ষা ও সাধনার দ্বারা সেও তাহার উপযুক্ত হইবে এই তাহার এক বিশেষ উৎকণ্ঠার বিষয় হইয়া উঠিয়াছিল। সে যে কোন মানুষকে বিবাহ করিতে যাইতেছে তাহ হৃদরের মধ্যে অনুভব করিতে পারে নাই—সে যেন ব্রাহ্ম Ne: " সম্প্রদায়ের সুমহৎমঙ্গলকে বিবাহ করিতে প্রস্তুত হইয়াছে— সেই মঙ্গল প্রচুর গ্রন্থপাঠ দ্বারা অত্যুচ্চ বিদ্বান, এবং তত্বজ্ঞানের দ্বারা নিরতিশয় গম্ভীর। এই বিবাহের কল্পনা তাহার কাছে ভয়, সন্ত্রম ও দুঃসাধ্য দায়িত্ববোধের দ্বারা রচিত একটা পাথরের কেল্লার মত বোধ হইতে লাগিল— তাহা যে কেবল সুথে বাস করিবার তাহা নহে তাহা লড়াই করিবার--তাহ পারিবারিক নহে তাহা ঐতিহাসিক । এই অবস্থাতেই যদি বিবাহ হইয়া যাক্টত তবে অন্তত কন্তপক্ষের সকলেক্ট এই বিবাইকে বিশেষ একটা সৌভাগ্য বলিয়াই জ্ঞান করিত। কিন্তু হারাণ বাবু নিজের উৎকৃষ্ট মহৎ জীবনের দায়িত্বকে এতই বড় করিয়া দেখিতেন যে কেবল মাত্র ভাল লাগার দ্বারা আকৃষ্ট হইয়া বিবাহ করাকে তিনি নিজের অযোগ্য বলিয়া জ্ঞান করিলেন। -এই বিবাহ দ্বারা ব্রাহ্মসমাজ কি পরিমাণে লাভবান হইবে তাহ সম্পূর্ণ বিচার না করিয়া তিনি এ কাজে প্রবৃত্ত হইতে পারিলেন না। এই কারণে তিনি সেই দিক্ হইতে সুচরিতাকে পরীক্ষা করিতে লাগিলেন । এরূপ ভাবে পরীক্ষা করিতে গেলে পরীক্ষা দিতেও হয়। হারাণ বাবু পরেশ বাবুর ঘরে সুপরিচিত হইয়া উঠিলেন। তাহাকে তাহার বাড়ির লোকে যে পামু বলিয়া ডাকিত এ পরিবারেও তাহার সেই পায় বাবু নাম প্রচার হইল। এখন তাহাকে কেবল মাত্র ইংরেজি বিদ্যার ভাণ্ডার, তত্ত্বজ্ঞানের আধার ও ব্রাহ্মসমাজের মঙ্গলের অবতাররূপে দেখা সম্ভবপর হইল না—তিনি যে মানুষ এই পরিচয়টাই সকলের চেয়ে নিকট হইয়া উঠিল। তখন তিনি কেবল মাত্র শ্রদ্ধা ও সন্ত্রমের অধিকারী না হইয়া ভাললাগা মন্দলাগার আয়ত্তাধীন হইয়া আসিলেন । আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, হারাণ বাবুর যে ভাবটা পূৰ্ব্বে দূর হইতে স্বচরিতার ভক্তি আকর্ষণ করিয়াছিল, সেই ভাবটাই নিকটে আসিয়া তাহাকে আঘাত করিতে লাগিল। ব্রাহ্মসমাজের মধ্যে যাহা কিছু সত্য, মঙ্গল ও সুন্দর আছে হারাণ বাবু তাহার অভিভাবক স্বরূপ হইয়৷ তাহার রক্ষকতার ভার লওয়াতে তাহাকে অত্যন্ত অসঙ্গতরূপে ছোট দেখিতে হইল। সত্যের সঙ্গে মানুষের যথার্থ সম্বন্ধ ভক্তির সম্বন্ধ—তাহাতে মানুষকে স্বভাবতই বিনয়ী