পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭ম ভাগ । లి-షి" প্রবাসী । দেখিতে পাওয়া যায়, না। সকল স্থানই সমতল, কেবল “বাইশ হাজারী” ছাড়িয়া আর একটু উত্তরাস্তে অগ্রসর পুরাতন-অট্টালিকাদির ধ্বংসাবশেষে কোন কোন স্থান হইলে, আর একটি জায়গীর। তাহার নাম “ছয় হাজারী।” ঈষৎ উচ্চভূমি বলিয়া প্রতিভাত হয়। পৌণ্ডবৰ্দ্ধন এরূপ নিবিড় বনে আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল যে, বহুকাল পর্যাপ্ত তাঙ্গতে পর্য্যটকগণ পদার্পণ করিতে পারিতেন না। রাভেনশা যখন পৌণ্ড বৰ্দ্ধনের পুরাকীৰ্ত্তির চিত্র সংগ্রহের জন্য ব্যাপৃত হইয়াছিলেন, তখন তাহাকে দুই শত কাঠুরিয়া লইয়া পথ পরিস্কার করিতে করিতে অগ্রসর হইতে হইয়াছিল। বিংশতি বৎসর পূৰ্ব্বেও গজারোহণ ব্যতীত পৌণ্ডবৰ্দ্ধন পরিদর্শনের অন্ত উপায় ছিল না। এক্ষণে সাওতালদিগের অধ্যবসায়ে বনস্থল পরিস্কৃত হইতেছে, পৰ্য্যটকগণের আশ্রয়লাভের জন্ত একটি ডাকবাংলাও নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। নিকট দিয়া নুতন রেলপথ নিৰ্ম্মিত হইতেছে বলিয়া অনেক স্থান পরিস্কৃত হইবার সূত্রপাত হইয়াছে। রাভনশা লিখিয়া গিয়াছেন,—পৌণ্ডবৰ্দ্ধন তিনক্রোশ দীর্ঘ ও অৰ্দ্ধক্রোশ প্রস্থ ছিল। ইহা অবশুই অনুমান মাত্র। বর্তমান ধ্বংসাবশিষ্ট অট্টালিকাদির অবস্থান পৰ্য্যবেক্ষণ করিয়াই রাভেনশ এইরূপ লিথিয়া থাকিবেন। পৌণ্ডবদ্ধনের অধিকাংশ সরোবর উত্তর দক্ষিণ লম্বা। ইহাতেই বুঝিতে পারা যায়,—তাহা হিন্দু শাসন সময়ের পুরাতন সরোবর। সরোবরগুলি প্রায় সমভূমির সহিত মিশিয়া রহিয়াছে । তাহতেও প্রাচীনত্বের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়। কোন কোন সরোবরে এখনও পদ্মবন দেখিতে পাওয়া যায়।* রাজপথ দিয়া অগ্রসর হইলে, প্রথমে যাহা দৃষ্টিপথে পতিত হয় তাহ একটি তোরণদ্বার। তাহার ভিতর দিয়া ‘বাইশ হাজারী” নামক জায়গীরে গমন করিতে হয় । তথায় মকড়ম শাহ জালালের সমাধিমন্দির বর্তমান আছে । শাহ জালাল একজন সুবিখ্যাত সাধুপুরুষ। তাহার জীবনকাহিনীর সহিত অনেক অলৌকিক জনশ্রুতি জড়িত হইয়া রহিয়াছে। o Like Gour, і із covered with innumerable tanks, some of great age, and nearly all of them having their greatest length from north to south, as evidence of their Hindu origin.--Ravenshaw's Gour, p. 44. তথায় মুর কুতৰ আলম নামক সাধু পুরুষের সমাধিমন্দির বর্তমান রহিয়াছে। তাহার জীবন কাহিনীর সহিতও অনেক অলৌকিক জনশ্রুতি জড়িত হইয়া রহিয়াছে। এই দুইজন মুসলমান সাধুপুরুষের জীবন কাহিনীর সহিত এদেশের ইতিহাসের অনেক কাহিনী জড়িত হইয়া রহিয়াছে। সুতরাং পৰ্য্যটকগণ ইতিহাসজ্ঞ হইলে, এখানে উপনীত হইবামাত্র, নানা পুরাতত্ত্ব স্মৃতিপথে উদিত হইয়া থাকে। ক্রমে উত্তরাস্তে আরও কিয়দর অগ্রসর হইলে, পৌণ্ডবৰ্দ্ধনের অন্তাষ্ঠ ভগ্নাবশিষ্ট পুরাতন কীৰ্ত্তিচিহ্ন দেখিতে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে সোনা মস্জেদ, একলক্ষী, এবং আদিনা সৰ্ব্বজন-পরিচিত। আদিনার এক মাইল পূৰ্ব্বদিকে “সাতাইশ ঘর” নামক পুরাতন প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ পড়িয়া রহিয়াছে। নিকটে যে সরোবর আছে, তাহ উত্তরদক্ষিণে দীর্ঘ। এই স্থান দুর্গবেষ্টিত ছিল বলিয়া অনুমান করিতে পারা যায়। প্রাসাদ এবং সরোবরের অবস্থান দেখিলে, ইহাকেই পুরাতন রাজধানীর স্থান বলিয়া নির্দেশ করিতে হয় । মুসলমান-শাসন সময়ে একবার এক হিন্দুরাজা গৌড়েম সিংহাসন অধিকার করিয়া, গৌড়েশ্বর বলিয়া পরিচিত হইয়ছিলেন। ইতিহাস-বিমুখ বঙ্গদেশে অল্পদিনের মধ্যেই তাহার নাম পৰ্য্যন্ত বিলুপ্ত হইবার উপক্রম হইয়াছে। যে দেশের কবিকল্পনা লক্ষ্মণসেনের কাল্পনিক পলায়নকাহিনী লইয়া কাব্য রচনা করিতে লালায়িত হইয়াছে, সে দেশের সাহিত্যে এই হিন্দুনরপতি অদ্যপি কবিকুলের নিকট সমাদর লাভ করিতে পারেন নাই। তাহার কথা কেবল মুসলমান-লিখিত ইতিহাসেই, নীরবে কীটদষ্ট হইতেছে। পারস্ত ভাষার বর্ণবিদ্যাস শৈথিল্যে তাহার নাম কখন “গণেশ” কখন বা “কংস” বলিয়া প্রচারিত হইতেছে! এই হিন্দুনরপতি পৌণ্ড বৰ্দ্ধনেই সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন। ইহার পুত্র মুসলমান ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়া, পিতৃ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাহার সমাধিমন্দিরও পৌণ্ডবৰ্ধনেই প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে। “সাতাইশঘর” নামক যে পুরাতন প্রাসাদ পড়িয়া রহিয়াছে, তাহার সহিত এই হিন্দুনরপতির সংশ্ৰব ছিল।