পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭ম সংখ্যা । ] কিছু অধিক বলিয়া বোধ হয়। রাজতরঙ্গিণীতে পৌও বন্ধনের কথা আছে। তাহাই সৰ্ব্বাপেক্ষা পুরাতন কথা। কবি কলহন তাহা যেরূপভাবে লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন, তাহাতে গৌড়ীয় শৌর্যবীর্যের পরিচয়ে, ওঁ প্রভূভক্ত গৌড়ীয় সেনাদলের অলৌকিক আত্মত্যাগকাহিনীতে ইতিহাস উজ্জ্বল হইয়া রহিয়াছে। পৌণ্ডবৰ্দ্ধন কাহিনী নানা কারণেই বাঙ্গালীর গৌরব কাহিনী । তাহা সৰ্ব্বাংশেই বাঙ্গালীমাত্রের অকৃত্রিম গৌরব ঘোষণা করিবার যোগ্য হইয়া রহিয়াছে। পেগু বদ্ধনে উপনীত হইলে, একদিকে যেমন পুরাতন হিন্দু ও বৌদ্ধকীৰ্ত্তির অপলাপ সাধনের অভ্রান্ত পরিচয় প্রাপ্ত হইয়া হৃদয়মন অবসন্ন হইয়া পড়ে, সেইরূপ অন্যদিকে নানা পুরাকীৰ্ত্তির মধ্যে বাঙ্গালীর গৌরব সংস্পশে হৃদয়মন পুলকিত হইয় উঠে । পৌণ্ড বৰ্দ্ধনে অস্থাপি পুরাতন প্রস্তর শিল্পের যে সকল নিদর্শন বনচ্ছায়ায় আচ্ছন্ন হইয়া রহিয়াছে, তাহ পৃথিবীর যে কোনও সভ্য দেশকে গৌরবান্বিত করিতে পারিত। সে গৌরব কাহার ? যাহারা বহুদূর হইতে বহুক্লেশে প্রস্তর সংগৃহীত করিয়া, বিচিত্র দেবমন্দির রচনা করিয়া, গঠনপ্রতিভার পরিচয় প্রদানে স্বজাতির নাম ভারতবিখ্যাত করিয়াছিল, তাহারা এখন তাহার গৌরব লাভ করিতে পারিতেছে না। যাহারা নিকটে উপকরণরাশি প্রাপ্ত হইয়া, মন্দির ভাঙ্গিয় মস্জেদ রচনা করিয়া গিয়াছে, পৌণ্ডবৰ্দ্ধন এখন তাহাদেরই গৌরব ঘোষণা করিতেছে। সকল গ্রন্থে তাহদের কথাই প্রধান কথা ;–সকল পর্য্যটকের মুখে তাহাদের কথাই একমাত্র কথা। যাহারা বাহ ছাড়িয়া অভ্যন্তর দর্শন করিবার জন্ত ক্লেশ স্বীকার করিয়াছেন, তাহারাই কেবল হিন্দুবেীদ্ধের বিলুপ্ত গৌরবের আভাস প্রাপ্ত হইয় তাহার কথা ব্যক্ত করিয়া গিয়াছেন। তাহ নিতান্ত স্নংক্ষিপ্ত বলিয়াই সাধারণ পাঠকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করিতে পারে নাই। এখন এই সকল পুরাকীৰ্ত্তির জীর্ণসংস্কার সাধিত হইতেছে বলিয়া হিন্মু ও বৌদ্ধ কীৰ্ত্তির নিদর্শনগুলি আবার আচ্ছন্ন হইয়া পড়িতেছে। , ইংরাজরাজ ভগ্নাবশিষ্ট অট্টালিকার সর্বাঙ্গে কেবল মুসলমান গঠনকৌশলই পরিস্ফুট করিয়ারাখিতেছেন! শ্ৰীঅক্ষয়কুমার মৈত্রেয়। লেখাপড়া এই সকল কারণে গৌড় অপেক্ষ পৌণ্ডবৰ্ধনের গৌরব । লেখাপড়া । পূৰ্ব্বপুরুষগণের সঞ্চিত জ্ঞান আয়ত্ত করিবার জন্ত পড়িতে শিক্ষা করা প্রয়োজন । স্বোপাজ্জিত জ্ঞান পরিবর্তী বিদ্যার্থীদিগের জন্ত সঞ্চয় করিতে হইলে লিখিবার প্রয়োজন। এতদ্ব্যতীত সাংসারিক ব্যাপার নির্বাহের জন্যও লেখাপড় জানিতে হয়। যদিও লেখাপড়া জ্ঞানোপার্জনের উপায় মাত্র, তথাপি জ্ঞানোপার্জনের পক্ষে তাহা এতই প্রয়োজনীয় যে অমুক লেখাপড়া জানে বলিলে সে লোক জ্ঞানী ও বিদ্বান ইহাই বুঝায় এবং লিখিতে পড়িতে জানে না বলিলে মুর্থ বলা হয়। এই কারণে বিদ্যার্থী শিশুদিগকে সৰ্ব্বপ্রথমে লিখিতে ও পড়িতে শিথানর রীতি সকল সভা দেশেই প্রচলিত আছে। এইরূপ প্রয়োজনীয় বিষয় যাহাতে সুচারুরূপে সম্পাদিত হয় সে বিষয়ে পিতামাতা ও শিক্ষকের বিশেষ চিন্ত৷ ও মনোযোগ একান্ত বাঞ্ছনীয়। অনেকে বলিবেন লেখা পড়া ত বাড়ীতে এবং পাঠশালায় শিখান হইয়া থাকে এবং বিদ্যার্থীরা বুদ্ধি ও পরিশ্রম অনুসারে শিথিয়া থাকে ইহার জন্ত আবার বিশেষ চিন্তা ও মনোযোগের প্রয়োজন কি ? শিশুদিগকে লেখা পড়া শিখানর রীতি যেরূপ সহজ বলিয়া আমাদের ধারণা আছে বাস্তবিক তত সহজ নহে। এই সম্বন্ধে দুই একটি প্রশ্নের অবতারণা করাই এই প্রবন্ধের উদ্দেশু । যুরোপ ও আমেরিকাখণ্ডের পাঠশালা সমূহে পড়িতে ও লিখিতে শিখাইবার নানাপ্রকার রীতি প্রচলিত আছে। তাহাদের উৎকর্ষ ও অপকর্ষ সম্বন্ধে মতভেদও যথেষ্ট । কোনও রীতি একেবারে দোষশূন্ত নহে। তবে যে প্রণালীতে শিশুগণ সৰ্ব্বাপেক্ষ অল্প পরিশ্রমে ও অল্প সময়ে সুচারু- । রূপে লেখাপড়া শিখিতে পারে সেই প্রণালীই শ্রেষ্ঠ " যাহাতে যত অধিক পরিশ্রম ও অধিক সময় লাগে সে প্রণালী ততই নিকৃষ্ট। এবং যে প্রণালীতে পরিশ্রম করিয়া কখনই উৎকৃষ্ট রূপে লেখা পড়া শিখা যায় না সে প্রণালী সকলের নিকৃষ্ট । কোনও শিক্ষা প্রণালীর সম্বন্ধে বিচার করিতে হইলে শিক্ষাশাস্ত্রের দুইটি প্রধান বিধির উপর লক্ষ্য রাখিতে ' হইবে । বিধি দুইটি এই যে, পরিচিত বিষয় হইতে আরম্ভ । করিয়া ক্রমে অপরিচিত বিষয়ের এবং সরল হইতে ক্রমে