পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७४२:: ক্রমে প্রয়োজনের বিস্তারবশত ছোট ব্যবস্থা যখন বড় ব্যবস্থায় পরিণত হয় তখন তাহাতে ভাল বই মন্দ হয় ন!—কিন্তু তাহার স্বাভাবিক পরিণতি হওয়া চাই। আমাদের যে গ্রাম্যব্যবস্থা ছিল, ছোট হইলেও তাহ আমাদেরই ছিল, ব্রিটিশ ব্যবস্থা যত বড়ই হউক তাহা আমাদের নহে । সুতরাং তাহাতে যে কেবল আমাদের শক্তির জড়তা ঘটিয়াছে তাহা নহে তাহা আমাদের সমস্ত প্রয়োজন ঠিক মত করিয়া পূরণ করিতে পারিতেছে না। নিজের চক্ষুকে অন্ধ করিয়া পরের চক্ষু দিয়া কাজ চালামে কখনই ঠিক মত হইতে পারে না । এখন তাই দেখা যাইতেছে গ্রামের মধ্যে চেষ্টার কোনো লক্ষণ নাই। জলাশয় পূৰ্ব্বে ছিল আজ তাছা বুজিয়া আসিতেছে, কেননা দেশের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ । যে গোচারণের মাঠ ছিল তাহ রক্ষণের কোনো উপায় নাই ; যে দেবালয় ছিল তাহ সংস্কারের কোনো শক্তি নাই ; যে সকল পণ্ডিত সমাজের বন্ধন ছিলেন তাহদের গণ্ডমূখ। ছেলেরা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্যের ব্যবসায় ধরিয়াছে ; যে সকল ধনিগৃহ্নে ক্রিয়াকৰ্ম্মে,যাত্রায় গানে, সাহিত্যরস ও ধৰ্ম্মের চর্চা হইত তাহারা সকলেই সহরে আকৃষ্ট হইয়াছেন ; র্যাহারা দুৰ্ব্বলের সহায়, শরণাগতের আশ্রয় ও দুস্কৃতিকারীর দণ্ডদাতা ছিলেন র্তাহাদের স্থান পুলিসের দারোগ আজ কিরূপভাবে পূরণ করিতেছে তাহা কাহারে অগোচর নাই ; লোকহিতের কোনো উচ্চ আদর্শ, পরার্থে আত্মত্যাগের কোনো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গ্রামের মাঝখানে আর নাই ; কোনো বিধিনিষেধের শক্তি ভিতর হইতে কাজ করিতেছে না, আইনে যে কৃত্রিম বাধ দিতে পারে তাহাই আছে মাত্র ; পরম্পরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মকদ্দমায় গ্রাম উন্মাদের মত নিজের নখে নিজেকে ছিন্ন করিতেছে তাহাঁকে প্রকৃতিস্থ করিবার কেহ নাই ; জঙ্গল বাড়িয়া উঠিতেছে, ম্যালেরিয়া নিদারুণ হইতেছে, দুর্ভিক্ষ ফিরিয়া ফিরিয়া আসিতেছে ; আকাল পড়িলে পরবর্তী ফসল পর্য্যন্ত ক্ষুধা মিটাইয়া বাচিবে এমন সঞ্চয় নাই ; ডাকাত অথবা পুলিস চুরি অথবা চুবির তদন্ত জন্ত ঘরে ঢুকিলে ক্ষতি ও অপমান হইতে আপনার গৃহকে বঁাচাইবে এমন পরস্পর ঐক্যমুলক সাহস নাই ; তাহার পর ষ খাইয়া শরীর বল পায় ও ব্যাধিকে ঠেকাইয়া রাখিতে প্রবাসী। SAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAAAS [ १ब सोन्न । পারে তাহার কি অবস্থা! ঘি দূষিত, দুধ দুৰ্ম্মল্য, মৎস্ত দুর্লভ, তৈল বিষাক্ত ; যে কয়ট স্বদেশী ব্যাধি ছিল তাহার আমাদের যকৃৎ প্লীহার উপর সিংহাসন পাতিয়া বসিয়াছে ; তাহার উপর বিদেশী ব্যাধিগুলা অতিথির মত আসে এবং কুটুম্বের মত রহিয়া যায়ু;–ডিপৃথিরিয়া, রাজ্যক্ষ্মা, টাইফয়েড, সকলেই এই রক্তহীনদের zifs Exploitation stifs অবলম্বন করিয়াছে। অন্ন নাই, স্বাস্থ্য নাই, আনন্দ নাই, ভরসা নাই, পরস্পরের সহযোগিতা নাই ; আঘাত উপস্থিত হইলে মাথা পাতিয়া লই, মৃত্যু উপস্থিত হইলে নিশ্চেষ্ট হইয়ু মরি, অবিচার উপস্থিত হইলে নিজের অদৃষ্টকেই দোষী করি এবং আত্মীয়ের বিপদ উপস্থিত হইলে দৈবের উপর তাহার ভার সমর্পণ করিয়া বসিয়া থাকি । ইহার কারণ কি ! ইহার কারণ এই, সমস্ত দেশ যে শিকড় দিয়া রস আকর্ষণ করিবে সেই শিকড়ে পোকা ধরিয়াছে, যে মাটি হইতে বাচিবার খাদ্য পাইবে সেই মাটি পাথরের মত কঠিন হইয়া গিয়াছে – যে গ্রামসমাজ জাতির জন্মভূমি ও আশ্রয় স্থান তাহার সমস্ত ব্যবস্থাবন্ধন বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে ; এখন সে ছিন্নমূল বৃক্ষের মত নবীন কালের নির্দয় বস্তার মুখে ভাসিয়া যাইতেছে। দেশের মধ্যে পরিবর্তন বাহির হইতে আসিলে পুরাতন আশ্রয়টা যখন অব্যবহারে ভাঙিয়া পড়ে এবং নুতন কালের উপযোগী কোনো নুতন ব্যবস্থাও গড়িয়া উঠে না তখন সেইরূপ যুগান্তকালে বহুতর পুরাতন জাতি পৃথিবী হইতে লুপ্ত হইয়া গিয়াছে। আমরাও কি দিনে দিনে উদাস দৃষ্টির সম্মুখে স্বজাতিকে লুপ্ত হইতে দেখিব ? ম্যালেরিয়া, মারী, দুর্ভিক্ষ এগুলি কি আকস্মিক ? এগুলি কি আমাদের সান্নিপাতিকের মজ্জাগত ভুলক্ষণ নহে ? সকলের চেয়ে ভয়ঙ্কর চুলক্ষণ সমগ্র দেশের হৃদয়নিহিত হতাশ নিশ্চেষ্টতা। কিছুরই যে প্রতিকার আমাদের নিজের হাতে আছে, কোন ব্যবস্থাই যে আমরা নিজে করিতে পারি সেই বিশ্বাস যখন চলিয়া যায়, যখন কোনো জাতি কেবল করুণ ভাবে ললাটে করম্পর্শ করে ও দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়া আকাশের দিকে তাকায় তখন কোনো সামান্ত আক্রমণও সে আর সহিতে পারে না, প্রত্যেক ক্ষুদ্র ক্ষত দেখিতে দেখিতে তাহার পক্ষে বিষক্ষত হইয় উঠে। তখন সে মরিলাম মনে করিয়াই মরিতে থাকে।