পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭ম সংখ্যা । ] আপন আপনি কহিতে পারে, তখন আর দা, মা, উচ্চারণ করাইবার আবগুক নাই । যখন শিশুদিগকে লিখন ও পঠন শিক্ষা দিতে আরম্ভ করা হয়, তখন সম্পূর্ণ শব্দ ও বাক্য তাহাদিগের পরিচিত ও অভ্যস্ত, সুতরাং অপেক্ষাকৃত বোধগম্য ও সহজ। . বর্ণ বা অক্ষর অপরিচিত ও অর্থহীন, সুতরাং তাহ আয়ত্ত করা অধিক ক্লেশকর। মা বা বাবা কিরূপ লেখা থাকে বা লিখিতে হয় তাহ জানিতে শিশুদিগের যেরূপ কৌতুহল হইবে, এবং বুঝিতে পারার জন্যও মন আকৃষ্ট হওয়ার জন্য শব্দটির রূপ স্মরণ রাথিতে তাহদের পক্ষে যেরূপ সহজ হইবে, কেবল ম, বা ব, বা আ৷ অক্ষরের পরিচয় করিতে ও স্মরণ রাথিতে তদপেক্ষা অনেক অধিক ব্যর্থ পরিশ্রম করিতে হক্টবে। ভাষাতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতের স্থির করিয়াছেন যে মানব সমাজে প্রথমে সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশের উপযুক্ত পদ বা শব্দ আবিষ্কৃত হইয়াছিল ; এবং ভাষার উন্নতি হইলে অনেক পরে মনীষী ব্যক্তির দ্বারা বর্ণমালার সৃষ্টি হইয়াছিল। ইহাতে প্রতীয়মান হয় যে মানববুদ্ধির পক্ষে সম্পূর্ণ বাক্য বা পদ অপেক্ষ বর্ণমালা স্বভাবতঃ অধিক জটিল । আরও বিবেচনা করুন যে, কোন দ্রব্যের সমগ্র রূপ বা আকার চেনা ও স্মরণ রাখা যেরূপ সহজ সেই দ্রব্যের প্রত্যেক অঙ্গের আকার চেনা ও স্মরণ রাখা সেরূপ সহজ নহে । 橡 সকলেই নিজে নিজে ইহার পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারেন । কলিকাতার অনেকে চেহারা দেখিয়া কোন লোক ইংরাজ কি যুরোপের অপর জাতীয় তাহ সহজেই বলিয়া দিবেন, কিন্তু সেই লোকটির কোন কোন অংশে একজন ইংরাজের সহিত সাদৃশু বা অসাদৃশু আছে তাহ বলিতে পরিবেন না। এরূপ বলিতে বিশেষ লক্ষ্য করিয়া দেখা আবশুক। শব্দের আকার সম্বন্ধেও এই নিয়ম প্রযোজ্য। অধিক বয়সে যদি কেহ দেবনাগরী, অথবা টুৰ্দ্দ, পার্শী বা অপর কোন অপরিচিত অক্ষরে লিপিত পুস্তক আগ্ৰহসহকারে পড়িতে আরম্ভ করিয়া থাকেন তাহা হইলে বুঝিতে পরিবেন যে প্রথমে কেবল অক্ষর পরিচয় করা অপেক্ষা ছোট ছোট গল্প পড়িলে অপেক্ষাকৃত সহজে অক্ষর পরিচয় হয় এবং তাই অধিক দিন স্মরণ থাকে। অতএব প্রারম্ভে ছোট ছোট সমগ্র শব্দ ও বাক্য পাঠ করান উচিত ; শব্দ লেখাপড়া । চারণ ও বাক্যগুলি শিশুদিগের সচরাচর ব্যবহারের উপযোগ , ob-6 হওয়া আবশুক। কিছুদূর অগ্রসর হইলে কতকটা আপনা আপনি কতকটা শিক্ষকের সাহায্যে শিশুরা বিশ্লেষণ দ্বারা শব্দের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বা অক্ষরাদি চিনিতে শিখিবে। এবং পরে বর্ণসমুদয়ের বৈয়াকরণিক শৃঙ্খলা ও বিভাগ শিক্ষা দেওয়া যাইতে পারে । ভাষা শিক্ষার আরম্ভেই ব্যাকরণ শিক্ষা হইতে পারে না । শিশুদিগকে প্রথমেই যে বর্ণমালা শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহ ব্যাকরণ শিক্ষার অঙ্গীভূত করা উচিত । প্রচলিত রীতির দ্বিতীয় দোষ এই যে প্রথমে কেবল পড়িতে শিক্ষা দেওয়া হয় । লেখাপড়া এক সময়েই শিক্ষা দেওয়া বিধেয় । বরং লিখিয়া পড়াই ভাল। “লেখাপড়া” অর্থাৎ লেখার পর পড়া এইরূপ ব্যবহার থাকাতে ইহা বুঝা যায় যে আমাদের দেশে এই বিধি স্বীকৃত হইয়াছে। এ সম্বন্ধে শ্রদ্ধেয় ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের শিক্ষা বিধায়ক প্রস্তাব’ হইতে নিম্নলিখিত মত উদ্ধৃত করিতেছি। “বাঙ্গলীয় পড়া এবং লেখা একবারেই শিক্ষা দেওয়া বিধেয় । এতদেশীয় প্রাচীন পাঠশাল সমস্তে এই রীতি প্রচলিত আছে। কিন্তু র্যাহার ইংরাজী বিদ্যালয়ের প্রথারই একাক্স বশবৰ্ত্তী তাহার ক্রমে ক্রমে এই রীতি পরিত্যাগ করিয়া ইংরাজী রীতি যে, প্রথমতঃ কেবল পড়িতে শিক্ষা দেওয়া, তাহাই অবলম্বন করিতেছেন। তঁ{হার বিবেন। করুন ইংরাজীতে দুই ; প্রকার অক্ষর প্রচলিত আছে। ইংরাজদিগের পুস্তক সমস্ত একপ্রকার অক্ষরে মুদ্রিত হয়, আর তাই দিগের হাতের লেথ অন্ত প্রকার । সুতরাং ইংরাজীতে লেখায় এবং পড়ায় যেমন স্বাভাবিক প্রভেদ হইয়। উঠিয়াছে, বাঙ্গালায় সেইরূপ হইবার আবিস্তকতা নাই । অপরস্তু, ইংরাজী লেখায় এবং পড়tয় এইরূপ স্বাভাবিক প্রম্ভেদ থাকিলেও কোন কোন ইংলওঁীয় শিক্ষক স্বঞ্জাতীয় বর্ণমালায় শিক্ষা অধিক সহজ হইবে বলিয়! স্বালকদিগকে ছাপার অক্ষরগুলিও প্রথম হইতে লিখাইয় থাকেন। কি আশ্চৰ্য্য! ইংরাজের আমাদিগের মধ্যে কোন সুরীতি দেখিলে তাহ অবলম্বন করিতে কালবিলম্ব করে না ; কিন্তু আমাদিগের অনুচিকীর্ষ বৃত্তি কেমন বলবতী হইয়ছে, আমরা আপনারদিগের প্রচলিত কোন রীতির গুণাগুণ বিবেচনা না করিয়াই, যাহাতে •ইংরাজদিগের কোন গন্ধ আছে, তালু একেবারে গ্রহণ করিয়া থাকি ! কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে কোমলমতি শিশুদিগকে একেবারে লেখা পড়া দুই ধরাইলে তাহাদিগের পক্ষে অত্যন্ত ভারবোধ হইবে । ইহঁরা এখন বলিলেও বলিতে পারেন যে একেবারে দুই পয়ে চল। বড় কঠিন ব্যাপার অতএব প্রথমতঃ একপয়ে চলিতে শিখাই ভাল । বস্তুতঃ র্যাহার একেবারে লিখিতে এবং পড়িতে শিখ এত বিষম ব্যাপার বোধ করেন, তাহার কখনই বালকদিগকে শিক্ষ{

  • চারিপ্রকার অক্ষর ইংরাজীতে প্রচলিত আছে বলা যাইতে পারে। পুস্তকসকল দুই প্রকার অক্ষরে (capital ও small) মুদ্রিত হয়, এবং হাতের লেখাও দুইপ্রকার অক্ষরের হইয়া থাকে। বাঙ্গালীয় এক ধর্ণ । একই প্রকারে মুজিত ও লিখিত হয়। • *