পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wost 8 ইচ্ছ। নালিশ কর আমি কলিকাতা হইতে বড় কৌমুলি আনাইয়। মকদ্দমা চালাইব। তাহার হাত জোড় করিয়া কহিল, কৰ্ত্তা, মামলায় জিতিয়া লাভ কি ? পুলিসের বিরুদ্ধে দাড়াইলে আমরা ভিটায় টিকিতেই পারিব না। আমি ভাবিয়া দেখিলাম দুৰ্ব্বল লোক জিতিয়াও হারে ; চমৎকার অস্ত্রচিকিৎসা হয় কিন্তু ক্ষীণরোগী চিকিৎসার দায়েই মারা পড়ে। তাহার পর হইতে এই কথা আমাকে বারম্বার ভাবিতে হইয়াছে আর কোনো দান দানই নহে, শক্তিদানই একমাত্র দান । একটা গল্প আছে, ছাগশিশু একবার ব্রহ্মার কাছে গিয়া কাদিয়া বলিয়াছিল, “ভগবান, তোমার . পুথিবীতে আমাকে .সললেই খাষ্টতে চায় কেন ?” তাহাতে ব্ৰহ্মা উত্তর করিয়াছিলেন “বাপু, অন্তকে দোষ দিব কি, তোমার চেহারা দেখিলে আমারই থাইতে ইচ্ছা করে !” পুথিবীতে অক্ষম বিচার পাইবে, রক্ষা পাইবে এমন ব্যবস্থা দেবতাই করিতে পারেন না । ভারতমন্ত্রসভা হইতে আরম্ভ করিয়া পালামেণ্ট পৰ্য্যন্ত মাথা খুড়িয়া মরিলেও ইহার যথার্থ প্রতিবিধান হষ্টতে পারে না। সাধুইচ্ছ এখানে অশক্ত। দুর্বলতার সংস্রবে আইন আপনি দুর্বল হইয়া পড়ে, পুলিস আপনি বিভীষিকা হইয় উঠে। এবং যাহাকে রক্ষাকর্তা বলিয়া দোহাই পাড়ি স্বয়ং তিনিই পুলিসের ধৰ্ম্মবাপ হইয়া দাড়ান। এদিকে প্রজার দুৰ্ব্বলতা সংশোধন আমাদের কর্তৃপক্ষদের বর্তমান রাজনীতির বিরুদ্ধ। যিনি পুলিস্ কমিশনে বসিয়া একদিন ধৰ্ম্মবুদ্ধির জোরে পুলিসকে অত্যাচারী বলিয়া কটুবাক্য বলেন তিনিই লাটের গদিতে বসিয়া কৰ্ম্মবুদ্ধির ঝোকে সেই পুলিসের বিষদাঁতে সামান্ত আঘাতটুকু লাগিলেই অসহ বেদনায় অশ্রীবর্ষণ করিতে থাকেন। তাহার কারণ আর কিছুই নহে, কচি পাঠাটিকে অন্তের হাত হইতে রক্ষাযোগ্য করিতে গেলে পাছে সে তাহার নিজের চতুর্মুখের পক্ষেও কিছুমাত্র শক্ত হইয়া উঠে এ আশঙ্কা তিনি ছাড়িতে পারেন না। দেব ফুৰ্ব্বলঘাতকাঃ । তাই দেশের জমিদারদিগকে বলিতেছি, হতভাগ্য রায়ৎদিগকে পরের হাত এবং নিজের হাত হইতে রক্ষা করিবার উপযুক্ত শিক্ষিত, সুস্থ ও শক্তিশালী করিয়া না তুলিলে প্রবাসী । [ १ञ छांत्र কোনো ভাল আইন বা অমুকুল রাজশক্তির দ্বারা ইহার" কদাচ রক্ষা পাইতে পারিবে না। ইহাদিগকে দেখিবামাত্র সকলেরই জিহবা লালায়িত হইবে। এমনি কবিয়া দেশের অধিকাংশ লোককেই যদি জমিদার, মহাজন, পুলিস, কামুনগো, আদালতের আমল, যে ইচ্ছা সেই অনায়াসেই মারিয়া যায় ও মারিতে পারে তবে দেশের লোককে মানুষ হইতে না শিখাইয়া রাজা হইতে শিখাইব কি করিয়া ? অবশেষে, বর্তমানকালে আমাদের দেশের যে সকল , দৃঢ়নিষ্ঠ যুবক সমস্ত সঙ্কট উপেক্ষা করিয়াও স্বদেশহিতের জন্য স্বেচ্ছাত্ৰত ধারণ করিতেছেন অদ্য এই সভাস্থলে তাহারা সমস্ত বঙ্গদেশের আশীৰ্ব্বাদ গ্রহণ করুন । রক্তবর্ণ প্রত্যুষে তোমারই সৰ্ব্বাগ্রে জাগিয়া উঠিয়া অনেক দ্বন্দ্রসংঘাত এবং অনেক দুঃখ সহ করিলে। তোমাদের সেই পৌরুষের উদ্বোধন কেবলমাত্র বজ্রঝঙ্কারে ঘোষিত হইয়া উঠে নাই, আজ করুণাবর্ষণে তৃষ্ণাতুর দেশে প্রেমের বাদল আনিয়া দিয়াছে। সকলে যাহাদিগকে অবজ্ঞা করিয়াছে, অপমানে যাহারা অভ্যস্ত, যাহাদের সুবিধার জন্য কেহ কোনোদিন এতটুকু স্থান ছাড়িয়া দেয় নাই, গৃহের বাহিরে যাহারা কাহারে কাছে কোনো সহায় প্রত্যাশা করিতেও জানেনা তোমাদের কল্যাণে আজ তাহারা দেশের ছেলেদিগকে ভাই বলিতে শিখিল । তোমাদের শক্তি আজ যখন প্রীতিতে বিকশিত হইয়া উঠিয়াছে তখন পাষাণ গলিয়া যাইবে, মরুভূমি উৰ্ব্বর হইয়া উঠিবে, তখন ভগবান আর আমাদের প্রতি অপ্রসন্ন থাকিবেন না। তোমরা ভগীরথের দ্যায় তপস্তা করিয়া রুদ্রদেবের জটা হইতে এবার প্রেমের গঙ্গা আনিয়াছ ; ইহার প্রবল পুণ্যস্রোতকে ইন্দ্রের ঐরাবতও বাধা দিতে পরিবে না, এবং ইহার স্পর্শমাত্রেই পূৰ্ব্বপুরুষের ভস্মরাণী সঞ্জীবিত হইয়া উঠিবে। হে তরুণতেজে উদ্দীপ্ত, ভারতবিধাতার প্রেমের দূতগুলি, আমি আজ তোমাদের জয়ধ্বনি উচ্চারণ করিয়া এই নিবেদন করিতেছি—যে, দেশে অৰ্দ্ধোদয় যোগ কেবল একদিনের নহে। স্বদেশের অসহায় অনাথগণ ষে বঞ্চিত, পীড়িত ও ভীত হইতেছে সে কেবল কোনো বিশেষ স্থানে বা বিশেষ উপলক্ষ্যে নহে, এবং তাহাদিগকে যে কেবল তোমাদের নিজের শক্তিতেই রক্ষা করিয়া কুলাইয়া । উঠতে পারিবে সে চুরাশা করিয়ে না । ,