পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ সংখ্যা। ] আদর্শ, এবং ইহাই সমবেত জ্বসম্পত্তির একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত । এই মত কতদূর সত্য তাহা আলোচনা করা আবশ্যক। দুই তিনটি জাজ্বল্যমান ও অবিসম্বাদিত তথ্য হইতে এই মতবাদটি উৎপন্ন হইয়াছে। তথ্যগুলি এই—গ্রাম-পুঞ্জের ঘন সংহতি ; গ্রামের অবিভক্ত ভূসম্পত্তি, ভূমির সাময়িক হস্তান্তরকরণ-পদ্ধতি মেন সাহেবের এই সম্ভবপর চিন্তাকর্ষক অভিনব মতবাদটি প্রচারিত হইবামাত্রই সকলে গ্রহণ কনিল । *{ol, Baden Powel isoq -ধে সকল তথ্য ও যুক্তি মেনের অজ্ঞাত ছিল, সেই সকল তথ্য ও যুক্তির দ্বারা এই মতবাদের ভিত্তিমূল ভগ্ন করিয়াছেন। কিন্তু তথাপি, এমন কতকগুলি তথ্য আছে, যাঙ্গ অতিস্থা সুচতুর ব্যাখ্যার সাহায্যেও উড়াইয় দেওয়া যায় না। ভূমির সামরিক হস্তান্তরকরণ এই সকল তথ্যের মধ্যে একটি । “সমবেত ভূসম্পত্তি”– এই কথাটায় কি তুমি শিহরিয়া উঠিলে ? আচ্ছা, না হয় ইহাকে কোন বংশবিশেষের ভূসম্পত্তি বলা যাইতে পাবে ; ব্যক্তিগত স্বত্বাধিকারের উপরে বংশগত স্বত্বাধিকার ; ব্যক্তি বিশেষের স্বত্বাধিকারকে বংশবিশেষ প্রত্যাখ্যান করিত্বে পারে। সৌভাগ্যক্রমে, কপুরথালা-রাজ্যের অন্তর্গত কতকগুলি গ্রাম আমি দেখিতে গিয়াছিলাম। উত্তর-ভারতে, নীহারমণ্ডিত হিমাচলের পাদদেশে, একজন শিখ রাজা—একজন মহারাজা আছেন,—তিনি আমাদের দেশকে বড়ই ভাল বাসেন, আমাদের দেশে অনেক ভ্ৰমণ করিয়াছেন, আর একথা ফরাসীরা সকলেই বেশ জানেন। যখনই কোন ফরাসী ভারতে ভ্রমণ করিতে আইসে,—তিনি তাহাকে নিমন্ত্রণ করেন, এবং তাহার আদর আতিথ্যেরও কোন ক্রটি হয় না। সেরূপ আতিথ্য রাজাদের পক্ষেই সম্ভব। অভ্যাগতদিগের জন্য একটি, অতিথি-গৃহ আছে ; এবং আমি শুনিয়াছি, কোন কোন ব্যক্তি সেখানে আসিয়া কিয়ুৎ সপ্তাহ পর্য্যন্ত আডড গাড়িয়া থাকেন, অথচ আগমন ও প্রস্থান কালে, রাজার সহিত একবারও সাক্ষাৎ করেন না। আমি কপুরথালায় এইরূপ একজন পরান্নপুষ্ট ব্যক্তিকে দেখিয়াছিলাম—তিনি জাতিতে আইরিশ হোটেল হইতে হোটেলাস্তরে যাইবার মত, এই সব পরান্নভেমজীরা, সমসাময়িক ভারত । সারে, এই হিন্দু গ্রাম-তন্ত্র মানবসমাজের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন, ৬৭৯ এক রাজার দরবার হইতে আর এক রাজার দরবারে ভ্রমণ করিয়া বেড়ায়। তাহার। তিব্বতে যাত্রা করিবে বলিয়া যতদিন না হিমালয়ের বরফ গলিয়া যায়, ততদিন এই সমস্ত সুখ-নীড়ে আরামে বসিয়া অপেক্ষা করিতে থাকে। আমি বোধ করি, তাহার পরেও আরও কিছু কাল অপেক্ষা করে। রাজ, আমার ব্যবহারের জন্য কতকগুলি গাড়ী, কতকগুলি হাতী এবং আমার সাহায্যের জন্স একজন দোভাষী আমার নিকট রাখিয়া দিলেন ; “ ইনি একজন চন্দননগরের স্থূলকায় বাবু, কপুরথালার কলেজে ফরাসী ভাষার শিক্ষা

দেন । কপুরথালার রাজ্যের মধ্যে কতকগুলি পথ আছে। “হিজু-হাইনেস" (আমার বাবু ভক্তিভাবে এই উপাধিটি প্রয়োগ করিয়া থাকেন) নিজেই রাজ্যশাসন করেন। হিজ-হাইনেস একজন দেশ পর্য্যটক, ইহাই তাহার একটি বাসন। কিন্তু ইহারই দরুণ, তিনি তাহার ক্ষুদ্র রাজ্যের মধ্যে আমাদের সমস্ত যুরোপীয় প্রণালী প্রবর্ভূিত করিয়াছেন এবং সাধ্যমত তাহা কার্য্যে পরিণত করিবার জন্যও চেষ্টা করিয়া থাকেন। যেখানে যাইবার পথ নাই, সেই পথের অভাব হাতী সেইখানে পূরণ করিয়া থাকে। এই হাতী যেমন উৎকৃষ্ট পথপ্রদর্শক, তেমনি চিত্তবিনোদন ভ্রমণ-সহচর ! এই হাতী আগে আগে জঙ্গলের মধ্য দিয়া চলে, ডালপালা অপসারিত করে, সর্পদিগকে পদদলিত করে, উচ্চ ঢালু জমি দিয়া উপরে আরোহণ করে, সাতরাষ্টয়া নদী পার হয়, শুড় দিয়া জলের গভীরতা নিৰ্দ্ধারণ করে ; হাতী বেশ দেখিয়া শুনিয়া পথ চলে, এই হাতীর পথ বেশ নিরাপদ...পঞ্জাবের এই অংশটি আমাদের La Beance অপেক্ষাও সমতল । আমার এই দোদুল্যমান মান-মন্দির হইতে, চতুৰ্দ্দিকের অসীম ক্ষেত্রভূমি এবং বহু দূরে, উত্তরাভিমুখে, দীর্ঘপ্রসারিত একটা ধবলপিণ্ড দেখিতে পাইতেছি —ইহা হিমাচলের প্রথম অধিতাকা । মাঠের তৃণাদি একেবারে মুড়াইয়া কাটা । আজ ১০ই জানুয়ারী। জমিতে লাঙ্গলের একটিও কর্ষণ-রেখা নাই, একটিও আইল নাই, উদ্ভিজ্জের চিহ্নমাত্র নাই ; কেবল দিগন্তদেশে কতকগুলা পুঞ্জীকৃত শীর্ণ তরু —ক্ষেত্রভূমির সাধারণ সমতল হইতে একটু উচ্চে অবস্থিত। আমার বাবু বলিলেন,—“ঐ যে স্থানটি দেখা যাইতেছে,