পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ সংখ্যা । ] সমসামরিক ভারত । Sb-g প্রস্তুত করে ; সুতরাং ইচ্ছামত খাটিতে পারে না, ইচ্ছামত সমাজসোপানের আর এক ধাপ উপরে উঠা যাকৃ বিনিময় করিতে পারে না ; তাই বাণিজ্য ও প্রতিযোগিতা যারপর নাই কম হইয়া পড়িয়াছে। গ্রামের কতকগুলি কারিগরের সহিত আমি পুৰ্ব্বেই তোমাদেল সাক্ষাৎ করাইয়া দিয়াছি ঃ—তস্তুবায় ও কুম্ভকার। উহার নিম্নবর্ণন্থ । এখানকার সকল ব্যবসায়ের দ্যায় এই দুষ্ট ব্যবসায়ও পৈতৃক। যন্ত্রাদি যতই সাদাসিধা হউক না কেন, এই কারণেই উহাদের অসাধারণ নৈপুণ্য জন্সিয়াছে। গ্রামের মাকু, অদ্ভূত কাৰ্য্য সাধন করে। অবশু তাতী, মোট ও টেক্সই কাপড় ছাড়া আর কোন কাপড় যোগায় না—কেননা গ্রামবাসীরা শুধু ঐরুপ কাপড়ই চাহে। তাহা দের পুৰ্ব্বপুরুষেরা, কত শতাব্দি ধরিয়া, ঘাড়pজিয়া এই কাজ করিয়া আসিয়াছে, তাই তাহদের বংশধরেরা এইরূপ অসাধারণ হস্তদক্ষতা লাভ করিয়াছে এবং যে গুণটি থাকায় ঢাকার তন্তুবায়রা বাষ্পসদৃশ স্বল্প “প্রভাত, শিশির" নামক মলমল প্রস্তুত করিতে পারে, সেই অসাধারণ ধৈর্য্য তাহদের সেই পূৰ্ব্বপুরুষ হইতেই প্রাপ্ত হইয়াছে। মন্দিরের কাজে লাগাইয়া কুম্ভকার তাহার শিল্পকলাকে উন্নত করিয়া তুলিয়াছে। মন্দিরের ক্ষুদ্র মূৰ্ত্তিগুলি, দেবতাদের সিদ্ধর মাখানো মূৰ্ত্তিগুলি, সেই সরল সহাস্তবদন পুতুলগুলি, ভীষণ মুখভঙ্গীযুক্ত পুতুলগুলি—সমস্তই তাহদের হাতে গড় । নগরের পাশ্ববৰ্ত্তী কোন স্থানে, উহারা ইটু ও টালি প্রস্তুত করে এবং এইরূপে স্বকীয় অবস্থার উন্নতি-সাধন করে । আমি অনেকবার দেখিয়াছি, গ্রামের অঙ্গনে গরুরা একটা কল ঘুরাইতেছে। সেই কলে একটা জাত চলিতেছে কিংবা একটা পেষণ-মুদ্রগর উঠতেছে পড়িতেছে ; চীনা-বাদাম ভাঙ্গিয় তাহা হইতে এইরূপে তৈল বাহির করা হইতেছে। এই যে একটা ব্যবসায়—বৈদেশিক প্রতিযোগিতায়, বস্ত্র বয়নেব দ্যায় ইহারও ক্ষতি হইয়াছে। কেরোসিন-তৈল পল্লিগ্রামেও প্রবেশ করিয়াছে। গ্রাম্যসমাজ, নিজের চিনি, কিম্বা নিজের গুড় প্রস্তুত করে। উহারা জাতায় আখ, মাড়ে এবং সেই রস মাটীর উনানে জাল দেয়। পঞ্জাবের কোন গ্রামে ইহার প্রকরণ আমি স্বচক্ষে দেখিয়াছি। গুড় কিংবা চিনি কি উপায়ে শোধিত হয় তাহ তাহারা জানে না । দেশীয় লোকেরা অশোধিত চিনিতেই সস্তুষ্ট । C ( কেন না, পূৰ্ব্বোল্লিখিত ব্যবসায়গুলি অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট বর্ণের জন্ত রক্ষিত ) তাহা হইলে আমরা ছুতারকে, কামারকে, র্কাসারিকে, রাজ-মিস্ত্রীকে, প্রস্তর-থোদককে দেখিতে পাইব-আর একটি অদ্ভুত লোককে দেখিতে পাইব, যাহাকে য়ুরোপীয়েরা সেখানে দেখিবে বলিয়া বড় একটা প্রত্যাশা করে না—সে হচ্চে জন্তরী—স্বৰ্ণকার সরকারী পোদ্দার—যাহার অলঙ্কার-গ্ৰিয় নারীজাতির ধন শোষণ করিয়া জীবিকা নিৰ্বাহ করে। যেমন র্তাতি ও কুমোর সেইরূপ স্তাক্রাও গ্ৰাম্য জীবনের একটি অপরিহার্যা উপাদান। অপ্রত্যাশিত স্বর্ণকারকে দেখিয়া গ্রাম সম্বন্ধে আমাদের একটি নুতন জ্ঞান জন্মিল । যে দেশে, ব্যাঙ্ক-পদ্ধতি তেমন পরিপুষ্ট হয় নাই, যেখানে মুদ্রার নির্দিষ্ট মূল্যের তেমন স্থিরতা নাই, যেখানে কেহ বিশ্বাস করিয়া অল্প পুজির টাকা কোথাও গচ্ছিত রাখিতে সাহস পায় না, সেই দেশে তাহার অন্ত ব্যবসায় ছাড়িয়া জহুরা স্বর্ণকার প্রভৃতির ব্যবসায় অবলম্বন করিয়াছে — ইহাষ্ট আশ্চৰ্য্য। ইহাতে একসঙ্গে দুইটি কাজ হয়। কোন ধার-কর্জের কাজ হইলে, অলঙ্কারাদি গচ্ছিদ রাখা হয়, এবং উৎসবের দিনে, শোভাযাত্রায়, বিবাহে, ভোজে, অভ্যর্থনাপালে, উহাই পারিবারিক ঐশ্বৰ্য্যস্বরূপ নারীকণ্ঠে সগৰ্ব্বে প্রদশিত হয় । এই সকল অলঙ্কার –রত্নভাণ্ডার ও শিল্পসঞ্চয়েরও কাজ করে। এইরূপ সঞ্চিত কোন কোন রত্নরাজির অসাধারণ উজ্জলতা ;–এ স্থলে আমি ধনীদের কথাই বলিতেছি । দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানে পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু একজন ফরাসী কন্সল-পত্নীর মুখে যাহা আমি শুনিয়াছি তাহা তোমাদের নিকট বলিতে পারি – কোন বিবাহ উৎসবে তিনি অস্তঃপুরে গিয়া সেখানকার রত্ন-অলঙ্কার দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া আসিয়াছিলেন —মুক্তার মালা, হীরার সাত-লহর, বিবিধ রত্বের কণ্ঠহার দেখিয় তিনি একেবারে সপ্তম স্বর্গে উঠিয়াছিলেন । এই সমস্ত তিনি বোম্বাই নগরে, একজন খুব ধনাঢ্য বোরার গৃহে দেখিয়াছিলেন । এরূপ রত্নভাণ্ডার কোন গ্রামে দেখিতে পাওয়া যায় না । তথাপি, প্রাচ্যলোক মাত্রেরই দ্যায় গ্রামবাসিরাও ভূষণপ্রিয় ; তাহারা নূতন-প্রচলিত স্বন্দর জিনিস ও