পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"Äf ১২শ সংখ্যা । গুরুমহাশয়, বৈদ্য, বেনিয়া সত্য কথা বলিতে কি, তাহার কারণ, কৃষক-সমাজ এই সব অনাবশুক লোকের সহিত কোন সংশ্রব রাখে না। এমন একটি গৃহ নাই যেখানে কুমোরের কিংবা তাতীর প্রয়োজন হয় না। পক্ষান্তরে, এদেশে বিদ্যাশিক্ষা একটি বর্ণবিশেষের একচেটিয়া । স্বকীয় সন্তানের শিক্ষার জন্য, শুধু ব্ৰাহ্মণেরই কিংবা ধনাঢ্য বেনিয়ারই শিক্ষাগুরু নিয়োগ করিবার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু গ্রামে কোন পাঠশালা নাই ; কেননা, কৃষকসুমাজ ইহার কোন প্রয়োজন অনুভব করে না ; তাই, যেখানে পাঠশালা আছেওবা, সেখানেও বড়জোর অৰ্দ্ধ শতাব্দি হইতে আছে, তাহার অধিক নহে। সেও তত্রস্থ রাজসরকার স্থাপন করিয়াছে, গ্রাম কর্তৃক স্থাপিত হয় নাই। অর্থাৎ সেখানে কিছুই পরিবর্তিত হয় নাই ; লোকশিক্ষার জন্য ষ্ট্রামও কিছু করে নাই, ইংরাজ সরকারও কিছু করে নাই। গুরুমহাশয়ের দ্যায়, গ্রামে বেনিয়ারও কোন প্রয়োজন ছিল না । গ্রামের অভাব খুবই অল্প। নিজের ব্যবহারের জন্য যাহা প্রয়োজন, তাহার সমস্তই গ্রাম নিজে প্রস্তুত করিয়া যোগাষ্টয়া থাকে ; এবং যাহা কিছু উদৃত্ত হয়, তাহ পাশ্ববর্তী গ্রামের উৎপন্ন দ্রব্যের সহিত বিনিময় করে। তাই, অন্ত কোন মধ্যবৰ্ত্তীর প্রয়োজন হয় না। এইরূপে ক্ষুদ্র সমাজটি যখন ক্রমে সমৃদ্ধ হইয়া উঠিল,তাহার অভাব বৃদ্ধি হইল, যখন সে মুখ-আরামের একটু স্বাদ পাইল, বিলাস সামগ্রীতে তাহার একটু রুচি হইল, তখনই ( অনেক পরে ) বেনিয়ার ব্যবসায় প্রবর্তিত হইল। বেনিয়ার আগমনে সমাজ পুর্ণতা লাভ করিল। পূৰ্ব্বে সমাজের দ্বার বেনিয়া নিকট রুদ্ধ ছিল ; আজও এই ধনাঢ্য শক্তিমান ঘৃণত ‘পারিয়া’, সমাজের বাহিরে রহিয়াছে। আমার বে ম পড়ে আমার ভূত্য ( যদিও খৃষ্টান ) কিরূপ বিস্ময় ও ঘৃণার স্বরে একজন রাস্তার লোকের প্রতি অঙ্গুলী নির্দেশ করিয়া বলিয়াছিল – *ও একজন বেনিয়া!” আবার শ্রমজীবীর কথায় ফিরিয়া আসা যাক। তাহদের মধ্যেও আবার শ্রেণীভেদ আছে, পদমর্য্যাদার উচ্চ নীচতা আছে, কিন্তু তাহার কৃষি-উপনিবেশের একেবারেই অধীন ; উপনিবেশ-গ্রামের অভাব মোচন ও ইষ্টসাধন করাই তাহারে.একমাত্র উচ্চাভিলাষ। যে গ্রাম প্রকৃত সমসাময়িক ভারত । ۹ ساند. ۰ গ্রামের মত, সেখানে এই ভাবটি বরাবর চলিয়া আসিতেছে। এইরূপ অকাট্য অধীনতার ভাব বাস্তবিকই বিস্ময়জনক । , আপনাকে উন্নীত করিবার জন্ত, গ্রাম-গণ্ডির বাহিরে দৃষ্টি প্রসারিত করিবার জন্য, কোন প্রকার প্রয়াস প্রযত্ন নাই । অবশ্য, বিবিধ শ্রেণী নিজ নিজ গণ্ডীর মধ্যে মানমর্য্যাদা রক্ষণ করিয়া চলিতেছে এবং তাহারা আবার পর্য্যায়ক্রমে অপেক্ষাকৃত নিম্নশ্রেণীর উপর চাপিয়া বসিয়াছে ; ' সুতরাং তাহদের মপো ঘনিষ্ট সামাভাব অসম্ভব। বিশেষতঃ বেতনের ব্যবস্থাপ্রযুক্ত তাহারা তাহাদের মুরব্বির ইচ্ছাধীন হইয়া পড়িয়াছে । বৈধরূপে বেতন অর্জন করা, পরিশ্রমের তুল্যমূল্য পারিশ্রমিক লাভ করা--ইহ {হন্দু-কল্পনা নহে।. হিন্দুর ধারণা অনুসারে, শ্রমকৰ্ম্ম একটা সম্পত্তি বিশেষ-- যাহার লেন-দেন হইতে পারে, বিনিময় হইতে পারে । এ ধারণাটি অভিজাতবর্গের মধ্যে নাই—আমাদের দেশেও নাই। সে শ্রমকৰ্ম্ম ভারতের কারিগরকে বাধ্য হইয়া করিতে হয়, তাহার বিনিময়ে দান কিংবা পুরস্কার স্বরূপ সে একখণ্ড ভূমি কিংবা ফসলের কিঞ্চিৎ অংশ প্রাপ্ত হয়। উৎপন্ন দ্রব্যের আকারে যখন পুরস্কার দেওয়া না হয়, তখন পারিশ্রমিকের একটা নূনতম ও অপরিবর্তনীয় নিরিথ, বাধিয়া দেওয়া হুয়। ইহা কি আশ্চর্য্যের বিষয় নহে-- লোকের সাধারণ অবস্থার যতই পরিবর্তন হউক না কেন, মূল্যের বাজার যেরূপই হউক না কেন, তাহাতে পারিশ্রমিকের হার কমেও না ( কম৷ অসম্ভব ) বাড়েও না । শ্ৰমকৰ্ম্মের ‘চাহিদা সত্ত্বেও, রেল-স্থাপন সত্ত্বেও, পুৰ্ত্তবিভাগের বৃহৎ অসুষ্ঠানাদি সত্ত্বেও, ৩০০ বৎসর পূৰ্ব্বে, আকৃবরের আমলে বেতনের হার যেরূপ ছিল এখনও তাঁহাই আছে । ফসলের সময়েই বেতনের হিসাব নিকাশ হয়। কুম্ভকার প্রত্যেক চাসার নিকট একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শস্ত পায় ; তাহার বিনিময়ে কুস্তকার চাষাকে বৎসরে দুইবার ছাড়িকুড়ি যোগাইয়া থাকে। কিন্তু ইতিমধ্যে যদি ' কখন চাষার হাড়িকুড়ির প্রয়োজন হয়, তবে তাহাকে . দস্তুরমত মূল্য দিতে হয়। ধোপা, প্রতিগ্রহস্থের নিকট গড়পড়তায় বৎসরে তিন আনা করিয়া পায় ; তা ছাড়া ফসলের, বিবাহ-বৃত্তির ও পশুবলিরও কিছু অংশ পায়। বলি