পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৩৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ সংখ্যা। | ণামে নিয়ে যাওয়া। যদি সমাজকে সংসারকেই পরিণাম বলে জানতুম তাহলে কোনো বিভাগ ব্যবস্থার প্রয়োজনই ছিল ন—তাহলে যুরোপীয় সমাজের মত প্রত্যেকে অন্তের চেয়ে বেশি দখল করবার জন্তে কাড়াকড়ি মারামারি করে চলতুম --সংসারে যে কৃতকাৰ্য্য হত সেই মাথা তুলত, যার চেষ্টা নিষ্ফল হত সে একেবারেই তলিয়ে যেত। আমরা সংসারের ভিতর দিয়ে সংসারকে পার হতে চাই বলেই সংসারের কর্তব্যকে প্রবৃত্তি ও প্রতিযোগিতার উপরে প্রতিষ্ঠিত করিনি—সংসারকর্মকে ধৰ্ম্ম বলে স্থির করেচি, কেন না কৰ্ম্মের দ্বারা অন্য কোনো সফলতা নয়, মুক্তিলাভ করতে হবে, সেই জন্তে একদিকে সংসারের কাজ অন্ত দিকে সংসারকাজের পরিণাম উভয়দিকে তাকিয়ে আমাদের সমাজ বর্ণভেদ অর্থাৎ বৃত্তিভেদ স্থাপন করেচেন। স্বচরিতা। আমি যে আপনার কথা খুব স্পষ্ট বুঝতে পারচি তা নয় অথচ একেবারে না পরিচি তাও বলতে পারিনে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এই যে, যে উদ্দেশ্বে সমাজে বর্ণভেদ প্রচলিত হয়েচে আপনি বলচেন, সে উদ্দেশ্য কি সফল হয়েচে দেখতে পাচ্চেন ? বিনয় । পৃথিবীতে সফলতার চেহারা দেখতে পাওয়া বড় শুক্ত। গ্রীসের সফলতা আজ গ্রীসের মধ্যে নেই সে জন্যে বলতে পারিনে গ্রীসের সমস্ত আইডিয়াই ভ্ৰান্ত এবং ব্যৰ্থ। গ্রীসের আইডিয়া এখনো মানবসমাজের মধ্যে নানা আকারে সফলতা লাভ করচে । ভারতবর্ষ যে জাতিভেদ বলে সামাজিক সমস্তার একটা বড় উত্তর দিয়েছিলেন—সে উত্তরটা এখনোমরে নি—সেটা এখনো পৃথিবীর সাম্নে রয়েছে। য়ুরোপও সামাজিক সমস্তার অন্ত কোনো সদুত্তর এখনো দিতে পারেনি, সেখানে কেবলি ঠেলাঠেলি হাতাহাতুি চলচে–ভারতবর্ষের এই উত্তরটা মানবসমাজে এখনো সফলতার জন্তে প্রতীক্ষা করে আছে—আমরা একে ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের অন্ধতা বশত উড়িয়ে দিলেই যে এ উড়ে যাবে তা মনেও করবেন না। আমরা ছোট ছোট সম্প্রদায়ের জলবিম্বের মত সমুদ্রে মিশিয়ে যাব কিন্তু ভারতবর্ষের সহজ প্রতিভা হতে এই যে একটা প্রকাও মীমাংসা উদ্ভূত হয়েছে পৃথিবীর মধ্যে যতক্ষণ পর্য্যন্ত এর কাজ না হবে ততক্ষণ এ স্থির দাড়িয়ে থাকৃবে গোরা । • సిరి স্বচরিত সঙ্কুচিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি রাগ করবেন না কিন্তু আপনি সত্যি করে বলুন, এ সমস্ত কথা কি আপনি গৌরমোহন বাবুর প্রতিধ্বনির মত বলচেন না. এ আপনি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেচেন ?” - বিনয় হাসিয়া কহিল—“আপনাকে সত্য করেই বলচি গোরার মত আমার বিশ্বাসের জোর নেই। জাতিভেদের আবর্জনা ও সমাজের বিকারগুলো যখন দেথতে পাই তখন আমি অনেক সময়ই সন্দেহ প্রকাশ করে থাকি—কিন্তু গোরা বলে বড় জিনিষকে ছোট করে দেখলেই সন্দেহ জন্মে—গাছের ভাঙা ডাল ও শুক্নো পাতাকেই গাছের চরম প্রকৃতি বলে দেথা বুদ্ধির অসহিষ্ণুতা—ভাঙা ডালকে প্রশংসা করতে বলিনে কিন্তু বনস্পতিকে সমগ্রকরে দেখ এবং তার তাৎপৰ্য্য বুঝতে চেষ্টা কর।” সুচরিতা । গাছের শুকুনো পাতাটা না হয় নাই ধরা গেল কিন্তু গাছের ফলটা ত দেখতে হবে। জাতিভেদের ফলটা আমাদের দেশের পক্ষে কি রকম ? বিনয় । যাকে জাতিভেদের ফল বলুচেন সেটা অবস্থার ফল, শুধু জাতিভেদের নয়। নড় দাত দিয়ে চিবতে গেলে ব্যথা লাগে সেটা দাতের অপরাধ নয় নড়া দাতেরই অপরাধ। নান। কারণে আমাদের মধ্যে বিকার ও দুৰ্ব্বলতা ঘটেছে বলেই ভারতবর্ষের আইডিয়াকে আমরা সফল না করে বিকৃত করচি–সে বিকার আইডিয়ার মূলগত নয়। আমাদের ভিতর প্রাণ ও স্বাস্থ্যের প্রাচুর্য্য ঘটলেই সমস্ত ঠিক হয়ে যাবে। গোরা সেই জন্যে বারাবার বলে যে মাথা ধরে বলে মাথাটাকে উড়িয়ে দিলে চলবে না—সুস্থ হও, সবল হও । সুচরিতা। আচ্ছা তাহলে আপনি ব্রাহ্মণ জাতকে নর-দেবতা বলে মানতে বলেন? আপনি সত্যি বিশ্বাস করেন ব্রাহ্মণের পায়ের ধূলোয় মানুষ পবিত্র হয় ? বিনয়। পৃথিবীতে অনেক সন্মানষ্ট ত আমাদের নিজের সৃষ্টি । রাজাকে যতদিন মানুষের যে কারণেই হোক দরকার ' থাকে ততদিন মানুষ তাকে অসামান্ত বলে প্রচার, করে । কিন্তু রাজ ত সত্যি অসামান্ত নয়। অথচ নিজের সামান্ততার বাধা ভেদ করে তাকে অসামান্ত হয়ে উঠতে হবে নষ্টলে সে রাজত্ব করতে পারবেই না। আমরা রাজার কাছে