পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ সংখ্যা গোরার মুখ দেখিয়াও তিনি বুঝিয়াছিলেন একটা ঝড় হইয়া গেছে। বিনয় আসিয়াই কঠিল—“ম! আমি অন্যায় করেছি। শশিমুর্থীর সঙ্গে বিবাহের কথা নিয়ে আমি আজ সকালে গোরাকে যা বলেছি তার কোনো মনে নেই।” আনন্দময়ী কহিলেন,-“তা তোক্ বিনয়-মনের মধ্যে কোনো একটা ব্যথা চাপতে গেলে ঐ রকম করেই বেরিয়ে পড়ে। ও ভালই হয়েছে। এ ঝগড়ার কথা দুদিন পরে তুমিও ভুলবে গোরাও ভুলে যাবে।” 穆 বিনয়। কিন্তু, মা, শশিমুখীর সঙ্গে আমার বিবাহে কোনো আপত্তি নেই সেই কথা আমি তোমাকে জানাতে এসেছি । § আনন্দময়ী। বাছা তাড়াতাড়ি ঝগড়া মেটাবার চেষ্টা করতে গিয়ে আবার একটা ঝঞ্ঝাটে পোড়ো না । বিবাহটা চিরকালের জিনিষ, ঝগড়া দুদিনের। বিনয় কোনো মতেই শুনিল না । সে এ প্রস্তাব লইয়া এখনি গোরার কাছে যাইতে পারিল না । মহিমকে গিয়া জানাইল—বিবাহের প্রস্তাবে কোনো বিঘ্ন নাই—পৌষমাসেই কাৰ্য্য সম্পন্ন হইবুে-খুড়ামহাশয়ের যাহাতে কোনো অমত•না হয় সে ভার বিনয় নিজেই লইবে । মহিম কহিলেন-পাণপত্রটা হয়ে যাকৃন। বিনয় কহিল—ত। বেশ, সেটা গোরার সঙ্গে পরামর্শ করে করবেন। মহিম ব্যস্ত হইয়া কহিলেন--“ আবার গোরার সঙ্গে পরামর্শ !” . বিনয় কহিল—“ন, তা না হলে চলবেনা।” মহিম কহিলেন—“ন যদি চলে তা হলে ত কথাই নেই --কিন্তু", বলিয়া একটা পান লইয়া মুখে পুরিলেন। দলিত কুস্যম। তটিনীর কুলে বৃক্ষ লতা পাতা ঘেরা স্বমন্তের গৃহখানি, সম্মুখে তাহার মনোহর পুষ্পোপ্তান, সুবাস যাহার মৃদ্ধ সঙ্গীরের বুকে আসিছে ভাসিয়া । , দলিত কুসুম । গৃহখানি দৃঢ় অতি কাষ্ঠের নিৰ্ম্মিত নীচু গৃহছাদ তার স্বন্দর প্রাচীর। সমূখের দালানেতে লতা রাশি দিয়া ঘিরেছে কেমন। চারিদিকে তার শুধু বিহগের কলকণ্ঠ হতেছে ধ্বনিত । মধুকর ভ্ৰমিতেছে পুষ্প মধু-আশে। গৃহ প্রান্তে রহিয়াছে ঘুঘুদের বাসা, অবিরত জানাতেছে মধুর গুঞ্জনে দম্পতীর প্রেমালাপু, কলহ কেমন। স্তব্ধতার পুৰীসম শোভিছে সে স্থান, আলো ছায়া থেলা করে বৃক্ষ রাশি পরে গুহখানি ছায়াতলে শোভিছে সুন্দর। সন্ধ্যায় সে গুহ হতে নীল ধূম শিখা বাহিরায়। উদ্যানের দুয়ার সম্মুখে ক্ষুদ্র পথ এক, তার দুধারেই শুধু বৃক্ষ শ্রেণী শোভা পায়, অস্তগামী রবি ধীরে ধীরে ডুবিতেছে, কিরণ তাহার করিতেছে ঝলসিত তরু রাশি সব । সেই পুষ্পোপ্তানে সেই শামল ভূমিতে অশ্বারোহী একজন, দেখিছে চাহিয়া— আঁথি যেন তৃপ্তিভরা, অদূরে সকল চরিছে ঘিরিয়া সেথা কত পশুদল, কেহ বা আলসে পড়ি শ্রাম দুৰ্ব্বাপরে, কেহ বা সে দুৰ্ব্বাদল করিছে চৰ্ব্বণ । সহসা সে অশ্বারোহী করে শৃঙ্গ-ধ্বনি, সন্ধ্যার সঙ্কেত জানে মুক পশুদল, ত্রস্ত ভাবে মুহুর্তেক সেই দিকে চেয়ে যে যাহার বাসগুহে করিলা গমন, এক সাথে যেন কালো মেঘের মতন। তার পর অশ্বারোহী গুহপথে ফিরি আসিবে যেমন, হেরে সম্মুখে তাহার দাড়াইয়া দ্বার পথে পৃদ্ধ পুরোহিত, সঙ্গে তার দাড়াইয়া কুমারী নলিনী । অগ্রসর হন দোহে হেরিয়া তাহায় । অশ্ব ছাড়ি অশ্বারোহী, আনন্দে আকুল বাহু বাড়াষ্টয়া হল দ্রুত অগ্রসর। দেখিল তাহার চেয়ে, সুমন্ত তাদের চির পরিচিত, কি আনন্দে পরিপূর্ণ হল সবে। ডাকি লয়ে সাদরেতে প্রবেশি আলয়ে, সকলে বসিল গিয়া, কত পুরাতন কথা নুতন করিয়া হল আলোচনা,—করি পুনঃ আলিঙ্গন পূৰ্ব্ব কথা, পূৰ্ব্ব স্নেহ স্মরণ করিয়া।