পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ সংখ্যা । ] লাভের মধ্যে শুদ্ধ ঐ শত্রদের স্পৰ্দ্ধিত, বক্র বিদ্রপ-হস্ত ! এই তো গেল “গরম দলের কথা। এক্ষণে “নরম দলে’র প্রতিও আমুর কিঞ্চিৎ কথ্য আছে। এক হাতে কখনো তালি বাজে ন, এবং এস্থলেও তাহা কখনো সম্ভব হয় নাই । 象 দেশের এই দারুণ দুৰ্দ্দিনে, “নরম-পন্থা’র আজো যদি র্তাহাদের গৌরাঙ্গানুরাগ কিঞ্চিৎ পরিমাণে সংযত, উপশমিত না করেন তবে দেশের ও দশের মুখ-পাত্রস্বরূপ নেতৃপদবীতে তুধিষ্ঠিত রহিবার তাহারা কোনমতেই যোগ্য নহেন। আজে যাহারা “ভয়ে ভয়ে যাই ; তয়ে ভয়ে চাই !”—এই নীতির অমুসরণ করিতে চাহেন, তাহাদের শান্তি-প্রিয়তার যতই কেন প্রশংসা না করি, অন্তরে তাহাদিগকেশুনিবাৰ্য্য রোষে ও দুঃসহ মনস্তাপে ধিক্কার না দিয়া থাকিতে পারি না। পর-নির্ভরশীলতা বা পর-মুখাপেক্ষিতা যোগ্যের— সমর্থের ও নেতার ধৰ্ম্ম কোনকালেই হইতে পারে না,— স্বাধীন কি পরাধীন উন্নতিকামী জাতির চিরন্তন ইতিহাসই এ উক্তির সমর্থক সাক্ষীস্বরূপে আজিও বিশ্বে দেদীপ্যমান রহিয়াছে। আত্ন-বিকাশেই আত্নপ্রসাদ বা আনন্দের উদ্ভব। আত্ন-শক্তির চর্চা দ্বারা আপনাকে না জানিতে পারিলে, পরামুগ্রহে সাফল্য লাভের কামনা দুর্লভ রাশা মাত্র। পরে হাতে তুলিয়া দিবে তবে খাইব,—ইহা জাগ্রতের ধৰ্ম্মানুমোদিত নহে। স্বীকার করি—“নরম দলের”ই চেষ্টা ও উদ্যোগে, জড় ভাবাপন্ন বঙ্গদেশেও আজ জাতীয় শিক্ষানুষ্ঠানের -ব্যবসায়বাণিজ্য প্রভৃতির কিঞ্চিৎ প্রতিষ্ঠা হইতে আরম্ভ করিয়াছে। এই জন্তই, আমি তাহাদেরি প্রসঙ্গে—তাহাদেরি স্কন্ধে এই কৰ্ম্ম না করার চাপট ফেলিতে চাই। “গরম দল” র্যাহীদের দ্বারা দেশের কোন স্থায়ী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় না তাহাদের প্রতি নিষ্কৰ্ম্মার বা অলসের কোন অভিযোগ উত্থাপন করা, অনাবশ্যক। কিছু করিয়াছেন বলিয়াই, কৰ্ম্মক্ষেত্রে যোগ্যতার পরিচয় পাইয়াই, আমি “নরম দলে’র প্রতি আমার বর্তমান বক্তব্য নিদিষ্ট করিলাম। কিছু করিয়াছেন বটে ; কিন্তু, তাহাই কি প্রচুর ? দুর্ভিক্ষে, অনশনে, রোগে নিৰ্য্যতনে'দেশের এই ষে লক্ষ লক্ষ ভ্রাতৃবৃন্দ আজ পিপাসায় শুষ্কতালু হইয়া,মৃত্যুর হিমাঞ্চলের,অন্তরালে তাহদের ঐ যাতনা দুই রাজনৈতিক लठ् । দেহান্থিগুলি লুকাতি করিতে লালতি, তাহাদিগকে ’৭১১ সত্ত্বনা দিবার জন্ত—তাহদের ঐ ক্ষুধাতৃষ্ণাতুর শরীর সুখাদ্যপানীয়ে পরিপুষ্ট রাখিয়া, তাহদের লজ্জ নিবারণের জন্য কয়জন ‘নৱম-পন্থী’ নেতার উদ্যোগ বা আগ্রহ লক্ষিত হইতেছে ? ইহাই কি অকৃত্রিম দেশ-হিতৈষণা ?-ইহাই কি নেতার স্বধৰ্ম্ম ? কোথা গেলে আজ “দশর সাগর” বিদ্যাসাগর, কোথা রহিলে আজ- ধৰ্ম্ম-পৃথ-নির্দেশক রামকৃষ্ণ, রামমোহন, আইস তোমরা এই পথ-ভ্রান্ত পথিকবৃন্দের নয়ন ঝলসিয়া, তোমাদের ঐ অকৃত্রিম, দিব্য আদর্শের আলোকে ও পুণ্যে এই তমসাবৃত বঙ্গ উদ্ভাসিত, আমোদিত করিয়া ;—আমরা তোমাদের রাজীব-চরণে ভক্তি-বিনম্রকোটিশির বিলুষ্ঠিত করিবার জন্য ব্যাকুল হইয়াছি। . যাহারা আজ মনে ভাবিতেছেন--রাজনৈতিক আন্দোলনে দেশের একমাত্র মুক্তিপস্থা আবিষ্কৃত হইবে, আমি তাহদিগকে বলিতে চাহি–শাস্ত হেীন, আশ্বস্ত হেীন, ক্ষাত্ত হোন্‌!--দশ দিকে আজিও দেশের দারিদ্র্য দুর্দশা বিমোচিত হইবার নানা উপায় বিদ্যমান রহিয়াছে। যশোলিপ্তার কুহকজাল হইতে ক্ষণকালের জন্ত আপনাদিগকে বিশ্লিষ্ট করিয়া, বক্তৃতা ও সভার কারা-মোহ হইতে কিয়ৎপরিমাণে অপস্থত হইয়া, তাহার একবার দেশের প্রকৃত উপকার-সাধনে,-- মায়ের ছাথের যথাথু নিদান অবগত হইয়া, তাহার চক্ষের ঐ দর-দরিত ধারা-প্রবাহ ক্ষণেক সংরুদ্ধ রাখিতে যত্নশীল হোন।— দেশের দুঃখ ঘুচিবে, মায়ের দীর্ঘশ্বাসে দেশ আর এমনভাবে জলিয়া যাইবে না, লক্ষ-সিদ্ধি-পক্ষে প্রকৃত পন্থ উদঘাটিত হইবে ; এবং তাহারাও তখন একতার অমৃতনিঝরে স্নাত ও শুদ্ধ হইয়া প্রকৃত স্বরাজে দৃঢ় প্রতিষ্ঠ হইবেন। আমি রাজনৈতিক আন্দোলনের বিরোধী নহি । আমিও যে স্বরাজ-লাভ-কামনা হৃদয়ে পোষণ করি না, এমত নহে । তবে, আমি শুদ্ধ এই কথা বলিতে চাই যে, রাজ-নীতিতেই আমাদের মোক্ষলাভের কোন আশা নাই । সত্য সত্য দেশের ও আপনার হিতানুষ্ঠান করিতে হইলে, আমাদের ' সাধ্যায়ত্ত অন্তান্ত দিকেও নেতৃগণের দৃষ্টি ও শক্তি প্রসারিত, হওয়া, প্রয়োজন। স্বদেশকে সম্পূর্ণরূপে স্বস্থ করিবার জন্ত ভাল করিয়া তাহাকে জান চাই ও তাহার সর্বাঙ্গীণ সেবা করা চাই ।