পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१०२.’’ ঘরে ঘরে আজ বর-বঞ্চিত বা যোগ্য মূলের ক্ষতি-পুত্রণে ‘অক্ষম, শত শত কুমারীর দীর্ঘশ্বাস পড়িতেছে ; গৃহে গৃহে .উন্নতিকামী প্রবাস-যাত্রীর চিরবিরহ-দুঃখে জনক জননী ও আত্মীয়-স্বজনের অশ্রদ্ধারা নিয়ত ঝরিয়া যাইতেছে ; চিরদরিদ্রের পর্ণকুটীরে অজাতগুম্ফ যুবক সকল জায়াপুত্রের স্বাস্থ্য-চিন্তায়- রক্ষণ-পোষণেয় কঠোর দুর্ভাবনায়–অদৃষ্টবাদী, মুমুধুর মত,সঙ্কীর্ণ চিত্তে, “মরণেরে তাম-সমান” জ্ঞানে দুৰ্ব্বহু, লাঞ্ছিত, অকাল-জীর্ণ জীবন-জ্বালায় জলিতেছে ; আর, ঐ দুরে—সৌরভ-স্ৰাবী, নন্দন-জাত পারিজাতের হ্যায় অনুপমা, লক্ষ লক্ষ অকলঙ্ক কল্যাণ-প্রতিমা কুলীন বিধবাগণের বিমলিন বদন-সুধাংশু দৃষ্টিগোচর হইতেছে ;– এসকলের প্রতি--- এই সব সৰ্ব্বনাশকর সামাজিক পরিণামের প্রতি—কই, কাহার, কোন বিশ্ৰুত-কীৰ্ত্তি নেতার যত্ন ও অধ্যবসায় লক্ষিত হইতেছে ? আমরা হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য-প্রার্থী। সত্য বটে !— তবে কেন এখনো বদ্ধমূল বিদ্বেষে পাকশালার অন্ন-ব্যঞ্জন হইতে পাক-পাত্রাদি পর্য্যন্ত পরিত্যক্ত, সংস্কৃত ও নবীভূত করিবার জন্ত ঐ প্রখ্যাতনামা নেতৃবরের আজ এ হাস্যকর ঔদ্বিগ্ন ? হা-—স্বরাজ ! হা—স্বদেশী ! তার পর, ঐ দেখো, ঐ গ্রামখানি !—ব্যাঘশূগালের বিহার-গহনে পরিণত, জনমানবহীন, পরিত্যক্ত, অনাদৃত, উপেক্ষিত। কেন ? ঐখানেই না তোমার পিতৃপিতামহ আপনাদের কীৰ্ত্তি-কলাপ বজায় রাখিয়া, অসংখ্য স্বজন-পূর্ণ পরিবার শত শত বৎসর ধরিয়া, প্রতিপালন করিয়া আসিয়া ছেন ? তবে, আজ ওখানে তোমার মন বসেনা কেন ? কোন অপরাধে আজ ঐ প্রমুক্ত প্রকৃতির শুাম-রম্য অঙ্গখানিতে হেলায় পদ-প্রহার করিয়া, আজ এই কোলাহলক্ষুব্ধ, অট্টালিকাকণ্টকিত, সহানুভূতিশূন্ত বিভ্রম-আবর্তে তুমি নিবিষ্ট হইয় রছিয়াছ ? বিলাসলালসার সেখানে বুঝি এত অবকাশ ছিল না ? “ল্যাজারস-আরমি-ন্যাভি"র কোঁচসোফা “কামফট-লাকৃসারি” বুঝি এতটা সে সরল গ্রাম্য, জীবনে মিলিত না ? বলি—ওহে কপটাচারী, হতভাগ্য “স্বদেশী”-নেতা, মা-ধরণীর অঙ্গে তোমাকে ধারণ করিয়া রাখিবার বল যে আর নাই ! এখনো তোমার কণ্ঠ-স্বর চিরতরে নীরব হইল না ? হাঁ—মধুসূদন । প্রবাসী। ৭ম ভাগ। ঐ গ্রামে ছিল একদিন—যে দিন মোটা কাপড় পরিয়া । ভট্টাচার্যামহাশয় নামাবলীর অন্তরালে তাহার সরল, নিম্পূহ সবল হৃদয় খানি লুকাইয়া, পথদিয়া স্থাটিয়া যাইতেন ; আর, র্তাহার সেই দেব-প্রসাদোজ্জ্বল পুণ্য-প্রভার পদতলে চতুস্পার্শ্বস্থ, প্রফুল্লানন সুধিবাসিবৃন্দ বিনতমস্তকে আনুগত্য স্বীকার করিতে গৰ্ব্বিত হইত। আরো ছিল ঐখানে— ঐ গ্রামে—প্রতি সম্পন্নের গৃহ-প্রান্ত-বিস্তৃত, সুনীল স্বচ্ছ, কমল-দল-সমুজ্জ্বল, প্রশস্ত দীর্থিক ; গোয়ালে অমৃতবতী গাভী ছিল ; গোলায় কাঞ্চন-স্বন্দর ধান্য ছিল ; গৃহস্থের বাহুল্য-বর্জিত, স্বচ্ছন্দ জীবন-যাত্রার স্বাস্থ্য ছিল, সৌন্দর্য্য ছিল, সঙ্গতি ছিল! আর আজ ?—“নাই নাই, কিছু নাই, শুধু হাহাকার!” এখন যাতারা সেই গ্রামে বসতি করিতেছে তাহাদের অন্ন নাই, বস্ত্র নাই, অর্থ নাই, সামর্থ্য নাই; এখন তাহাদের—“সম্পদ মাত্র জঠর ভর পীলে !” বলি ওগো স্বদেশ-প্রাণ “স্বদেশী” নেতা, লাজের মস্তকটি দংষ্ট্রা-নিপিষ্ট করিয়া, এমনভাবে উদ্‌রসাৎ করিতে একটুও কি কুষ্ঠিত হইলে না ? স্বদেশের জন্য বড়ই প্রাণ কেমন করে,—না ? যাহাকিছু দেশের নুতন হইয়াছে বা হইল তাহা ইহাদেরি দ্বারা সাধিত হইয়াছে বলিয়, “গরমদলে’র প্রতি লক্ষ্য না করিয়া, “নরমদলে’র উদ্দেশেই আমি এ সকল অপ্রিয় কথার অবতারণা করিলাম।–“বুঝে দেথে যে জানো সন্ধান!” যশের গোলাপ-গরিমা-দীপ্ত বর-মুকুট পরিতে হইলে কণ্টকঘাত সহিবার সাধ্য থাকা চাই । আমি বলিতেছিলাম—ইহাই আমার মুখ্য কখ্য যে, “রাজনীতির চর্চা একটু অল্প পরিমাণে কুরিয়াও, আমরা আত্ম-শোধনে—আত্মোন্নতি-সাধনে—যথার্থ স্বদেশীর দ্যায় লক্ষ্যপথে অগ্রসর হইতে সমর্থ। কিন্তু, দেশের কল্যাণ অপেক্ষাও ঢাক পিটাইয়া গলা ও তৎসহ নাম জাহির করাই যাহাঁদের প্রধান উদ্বেত ও চরম অভিপ্রার তাহদের নিকটে রাম-গুণ-কীৰ্ত্তন বা ধৰ্ম্মের কাহনীসৰ্ব্বথা মুফল-দায়ী হইবে কি ? তবু, কি করিব ?—“স্বভাব না যায় ম'লে!” আবার, তাহাও বলি—রাজনীতির বড় একটা ধার না ধারিলেও, জিজ্ঞাসা করিতে পারি না কি যে, “সাধিয়া সোহাগ” ও “যাচিয়া মান” না করিয়াও রাজনীতির সাগরমন্থন, সম্ভব কিনা ? একতা-বিরহিত, স্বাধুদ্ধি, কপটাচারী