পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭১৬: প্রবাসী । &বং শেকে কেলভিনই জয়যুক্ত হইয়াছিলেন / লোকে বুঝিয়াছিল লর্ড কেলভিন সাধারণ অধ্যাপক নহেন। তাপ ও কাৰ্য্যের যে নিগুঢ় সম্বন্ধ (Thermodynamies) আজি বিজ্ঞানীজ্ঞ ব্যক্তি মাত্রেরই নিকট সুপরিচিত, লর্ড কেলভিনই তাহার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। মেয়ার,জুল ও কার্নে (Carnot) প্রভৃতির সহিত লর্ড কেলভিনও এই এই আবিষ্কারের সমান যশোভাকু বলিয়া মনে হয়। ইহা ছাড়া তাপসম্বন্ধীয় আরো অনেক গবেষণা ও আবিষ্কারে ইনি অসাধারণ প্রতিভার অনেক পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন। কিন্তু প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ তাহার বৈদ্যুতিক গবেষণাতেই বিশেষরূপে প্রত্যক্ষ করা যায়। ১৮৫৫ সালে যখন সমুদ্রতলে টেলিগ্রাফের তার বসাইবার কল্পনা চলিতেছিল, লর্ড কেলভিন সেই সময়ে গণনা করিয়া দেখাইলেন, তারের দৈর্ঘ্য যতই অধিক হয় সঙ্কেত চলাচলে ততই বিলম্ব আসিয়া পড়ে। গণনার ফলে অনেকে হতাশ হইয়া পড়িয়াছিলেন, এবং কেহ কেহ কেলভিনের গণনার প্রতিবাদ আরম্ভ করিয়াছিলেন। কেলভিন্‌ কাহারো কথায় কর্ণপাত করেন নাই। তড়িৎপ্রবাহের অত্যন্স পরিবর্তন ধরিবার উপযোগী কোনও যন্ত্র উদ্ভাবন করিবার জন্য তিনি মনঃসংযোগ করিয়াছিলেন । ইহাতে অতি অল্পদিন মধ্যে বার্তাবহনের উপযোগী ভাল তার, এবং অতি সূক্ষ্ম তড়িৎবীক্ষণযন্ত্র (Mirror Galvanometer) উদ্ভাবিত হইয়া পড়িয়াছিল। সমুদ্রপারে বার্তাবহন র্যাহারা অসম্ভব মনে করিয়াছিলেন, কেলভিনের কৃতকাৰ্য্যতায় তাহারা অবাক হইয়া পড়িয়াছিলেন। ইহা ছাড়া এই সময়ে লর্ড কেলভিন কর্তৃক বিদ্যুৎ ও চুম্বক সম্বন্ধীয় আরো অনেক যন্ত্র উদ্ভাবিত হইয়াছিল। অপর কোনও নুতন যন্ত্র অস্থাপি সেই সকল পুরাতন যন্ত্রের স্থান অধিকার করিতে পারে নাই । পূৰ্ব্বে নৌচালনার উপযোগী ভাল দিক্‌দৰ্শন যন্ত্রের বড় অভাব ছিল, এবং অভ্রান্তরূপে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাণেরও কোন সুব্যবস্থা ছিল না। লর্ড কেলভিন্‌ এই দুইটি ব্যাপার লইয়া অনেক পরীক্ষাদি করিয়াছিলেন। শুনা যায় এক দিক্‌দৰ্শন যন্ত্রটিকেই নিভুল ও স্বব্যবস্থিত করিতে র্তাহার পাচ বৎসর পরিশ্রম করিতে হইয়াছিল। কিন্তু চলয় জাহাজ হইতে সমুদ্রের গভীরতা পরিমাপের উপযোগ যন্ত্র এই সময়ে অতি সুকৌশলে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। অদ্যাপি এই দুই যন্ত্র প্রত্যেক জাহাজেই ব্যবহৃত হইতেছে। " স্বপ্রসিদ্ধ রসায়নবিদ ডালটন ( Dalton) কর্তৃক আণবিক-সিদ্ধান্ত প্রচারিত হইলে, পদার্থবিশেষে অণুগুলি কি প্রকারে সজ্জিত থাকে এবং অণুর পরস্পর ব্যবধানষ্ট বা কি জানিবার জন্য বৈজ্ঞানিকগণ উৎসুক হইয়া পড়িয়া- * ছিলেন। কিন্তু কোন বৈজ্ঞানিকই এই গুরুতর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিবার উপায় খুজিয়া পান নাই। লর্ড কেলভিন এই সম্বন্ধে গবেষণা আরম্ভ করিয়াছিলেন। প্রায় বাইশ বৎসর হইল এই গবেষণার ফল প্রচারিত হইয়াছে, কিন্তু আজও তাহার বিবরণী পাঠ করিলে কেলভিনের অত্যাশ্চৰ্য্য সূক্ষদর্শন ও অসাধারণ গণিতজ্ঞান দেখিলে অবাক না হইয়া থাকা যায় না। ঈথর-সাগরে অতি সূক্ষ্ম তরঙ্গ তুলিয়া আলোক যখন কাচ বা অপর কোনও স্বচ্ছপদার্থের ভিতর দিয়া বাহির হয়, তখন তাহার গতির দিকের পরিবর্তন (Refraction) ঘটে। পদার্থস্থ অণুগুলিই বাধা দিয়া ঈথরতরঙ্গকে এই প্রকারে বাকাইয় দেয় বলিয়া জানা ছিল। লর্ড কেলভিন আলোকবিশেষের তরঙ্গের দৈর্ঘ্য এবং তাহার গতির দিক্‌ পরিবর্তনের মাত্রা অতি সুহ্মভাবে পরিমাপ করিয়া, পদার্থের অণুর আয়তন নিৰ্দ্ধারণের এক সুন্দর উপায় নির্দেশ করিয়াছিলেন। তা’ ছাড়া কৈশিকা*što (Capillary attraction) sitet's লইয়াও তিনি অণুর আয়তন নিৰ্দ্ধারণের আর একটি নূতন উপায় আবিষ্কার করিয়াছিলেন। এক ইঞ্চিকে আড়াই লক্ষ সমানভাগে বিভক্ত করিলে যে এক অতি সূক্ষ্ম দৈর্ঘ্য পাওয়া যায়, এই হিসাবে পদার্থের অণুগুলির ব্যাস তাহ অপেক্ষাও ক্ষুদ্রতর বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়াছিল। লর্ড কেলভিনের এই সূক্ষ্ম গণনা লইয়া অনেকে পরবর্তী কালে অনেক নাড়া চাড়া করিয়াছেন, কিন্তু গণনার অণুমাত্র ভুল পাওয়া যায় নাই। এই সকল দেখিয়া মনে হয়, এই প্রকার সূক্ষ্ম গণনা এক কেলভিনের পক্ষেই সম্ভবপর ছিল। তাহার, অসীম অধ্যবসায় ও অত্যাশ্চর্য গণিতজ্ঞান তাহার প্রত্যেক গবেষণাকে जांश्कला किल्लांझिल । ● o