পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭ম সংখ্যা । ] ख्षि ८डल করিয়া গোরুবাসভা--> --- কাকলী বিস্তার করিতে আরম্ভ করিল তখন কৃষ্ণদয়াল বাবুর কাছে সেটা অত্যন্ত কৌতুকের বিষয় বলিয়া মনে হইল। দেখিতে বাড়িয়া উঠিল-rকিন্তু ঘরে কাহারে কাছে সে বড় আমল পাইল না । মহিম তখন চাকরী করে—সে গোরাকে কখন বা “পেট ফুট জ্যাঠা” কখন বা "হরিশ মুখুযো দি সেকেণ্ড” বলির নানা প্রকারে দমন করিতে চেষ্টা করিয়াছিল। তখন দাদার সঙ্গে গোরার প্রায় মাঝে মাঝে হাতাহাতি হইবার উপক্রম হইত। আনন্দময়ী গোরার ইংরেজ-বিদ্বেষে মনে মনে অত্যন্ত উদ্বেগ অনুভব করিতেন—- তাহাকে নানাপ্রকারে ঠাণ্ডা করিবার চেষ্টা করিতেন কিন্তু কোনো ফলই হইত না । গোর রাস্তায় ঘাটে কোনো সুযোগে ইংরেজের সঙ্গে মারামারি করিতে পারিলে জীবন ধন্ত মনে করিত । এ দিকে কেশব বাবুর বক্তৃতায় মুগ্ধ হইয়া গোয়া ব্রাহ্মসমাজের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হইয়া পড়িল ; আবার এই সময়টাতেই কৃষ্ণদয়াল ঘোরতর আচারনিষ্ঠ হইয়া উঠিলেন। এমন কি, গোরা তাহার ঘরে গেলেও তিনি বৃতিব্যস্ত হইয় উঠতেন। গুটি দুই তিন ঘর লইয়া তিনি নিজের মহল স্বতন্ত্র করিয়া রাখিলেন। ঘটা করিয়া সেই মহলের দ্বারের কাছে “সাধনাশ্ৰম” নাম লিখিয়া কাষ্ঠফলকে লটকাইয়া দিলেন। বাপের এই কাণ্ডকারখানায় গোরার মন বিদ্রোহী হইয়া উঠিল। সে বলিল—“আমি এ সমস্ত মূঢ়তা সহ করিতে পারি না—এ আমার চক্ষুশূল।”--এই উপলক্ষে গোরা তাহার বাপের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করিয়া একেবারে বাহির হইয়া যাইবার উপক্রম করিয়াছিল--আনন্দময়ী তাহাকে কোনো রকমে ঠেকাইয়। রাখিয়াছিলেন। বাপের কাছে যে সকল ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের* সমাগম হইতে লাগিল গোরা জে পাইলেই তাহদের সঙ্গে তর্ক বাধাইয়া তি। সে ত তর্ক নয় প্রায় বুৰী বলিলেই হয়। তাহদের অনেকেরই পাণ্ডিত্য• অতি যৎসামান্ত এবং অর্থলাভ অপরিমিত ছিল ; গোরাকে তাহারা পারিয়া উঠতেন না, তাহাকে বাঘের মত ভয় করিতেন । ইহাদের মধ্যে কেবল হরচন্দ্র বিস্তাবাগীশের প্রতি গোরার শ্রদ্ধা জন্মিল . গোরা । বেদান্ত চর্চা করিবার স্ট্র রুকাল বিদ্যাবাগীশকে . ৩৫৯ ৷ নিযুক্ত করিয়াছিলেন। গোর প্রথমেই ইহার সঙ্গে উদ্ধত-- ভাবে লড়াই করিতে গিয়া দেখিল লড়াই চলে না । লোকটি যে কেবল পণ্ডিত তাহ নয়, তাহর মতের ঔদার্য্য অতি আশ্চর্য্য। কেবল সংস্কৃত পড়িয়া এমন তীক্ষ অথচ প্রশস্ত.. বুদ্ধি যে হইতে পারে গোরা তাহ কল্পনাও করিতে পূরিত না। বিদ্যাবাগীশের চরিত্রে ক্ষমা ও শাস্তিতে পূর্ণ এমন একটি অবিচলিত ধৈর্য্য ও গভীরতা ছিল যে র্তাহার কাছে নিজেকে সংযত না করা গোরার পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব ছিল। হরচক্সের, কাছে গোরা বেদান্তদর্শন পড়িতে আরম্ভ করিল। গোর কোনো কাজ আধাআধি রকম করিতে পারে না সুতরাং দর্শন আলোচনার মধ্যে সে একেবারে তলাইয়া গেল। ঘটনাক্রমে এই সময়ে একজন ইংরেজ মিশনারি কোনো সংবাদপত্রে হিন্দুশাস্ত্র ও সমাজকে আক্রমণ করিয়া দেশের লোককে তর্কযুদ্ধে আহবান করিলেন। গোরা ত একেবারে আগুন হইয়া উঠিল। যদিচ সে নিজে অবকাশ পাইলেই শাস্ত্র ও লোকাচারের নিন্দ করিয়া বিরুদ্ধমতের লোককে যত রকম করিয়া পারে পীড়া দিত তবু হিন্দুসমাজের প্রতি বিদেশ লোকের অবজ্ঞা তাহাকে যেন অস্কুশে আহত করিয়া তুলিল । সংবাদপত্রে গোরা লড়াই মুরু করিল। অপর পক্ষে হিন্দুসমাজকে যতগুলি দোষ দিয়াছিল গোরা তাহার একটাও এবং একটুও স্বীকার করিল না। দুই পক্ষে অনেক উত্তর চালাচালি হইলে পর সম্পাদক বলিলেন আমরা আর বেশী চিঠিপত্র ছাপিব না। কিন্তু গোরার তখন বোথ চড়িয়া গেছে। সে “হিঙুয়িজম্‌” নাম দিয়া ইংরেজিতে এক বই লিখিতে লাগিল—তাহান্তে তাহার সাধ্যমত সমস্ত যুক্তি ও শাস্ত্র র্যাটিয়া হিন্দুধৰ্ম্ম ও সমাজের অনিন্দনীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ সংগ্রহ . করিতে বসিয়া গেল । - “. . এমনি করিয়া মিশনারির সঙ্গে ঝগড়া করিতে গিয়া । গোরা আস্তে আস্তে নিজের ওকালতির কাছে নিজে হার , মানিল। গোরা বলিল, আমার আপন দেশকে বিদেশীর ' আদালতে আসামীর মত খাড়া করিয়া বিদেশীর আইন মড়ে । তাহার বিচার করিতে আমরা দিবই না । লিলাতের আদর্শের ;