পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ সে সব বুঝবে না। ফিন্তু একটা আছে—সেটা ত বোঝ, সেটা তোমার মেনে চলা উচিত। আনন্দময়ী। আমার বুঝে কাজ নেই। আমি এই বুঝি যে গোরাকে আমি যখন ছেলে বলে মানুষ করেচি তখন আচার বিচারের ভড়ং করতে গেলে সমাজ থাক্ আর না থাক্‌-ধৰ্ম্ম থাকবে না। আমি কেবল সেই ধৰ্ম্মের ভয়েই কোনো দিন কিছুই লুকোইনে-আমি যে কিছু মানচিনে সে সকলকেই জানতে দিই, আর সকলেরই ঘৃণা কুড়িয়ে চুপ করে পড়ে থাকি। কেবল একটি কথাই লুকিয়েছি, তারই জন্যে ভয়ে ভয়ে সারা হয়ে গেলুম ঠাকুর কখন কি করেন। দেখ, আমার মনে হয় গোরাকে সকল কথা বলে ফেলি, তার পরে অদৃষ্টে যা থাকে তাই হবে। কৃষ্ণদয়াল ব্যস্ত হইয়। বলিয়া উঠিলেন, “না, না, আমি বেচে থাকতে কোনো মতেই সে হতে পারবে না। গোরাকে ত জানই। এ কথা শুনলে সে কিযে করে বসবে তা কিছুই বলা যায় না। তার পরে সমাজে একটা হুলস্থল পড়ে যাবে। মুধু তাই ! এদিকে গবর্ণমেণ্ট কি করে তাও বলা যায় না। যদিও গোরার বাপ লড়াইয়ে মারা গেছে, ওর মাও ত মরেচে জানি কিন্তু সব হাঙ্গাম চুকে গেলে মেজেষ্টরিতে খবর দেওয়া উচিত ছিল । এখন এই নিয়ে যদি একটা গোলমাল উঠে পড়ে তাহলে আমার সাধন ভজন সমস্ত মাটি হবে, আরো কি বিপদ ঘটে বলা যায় না।” আনন্দময়ী নিরুত্তর হইয়া বসিয়া রহিলেন । কৃষ্ণদয়াল কিছুক্ষণ পরে কহিলেন—গোরার বিবাহ সম্বন্ধে আমি একটা পরামর্শ মনে মনে করেচি। পরেশ ভট্চাজ, আমার সঙ্গে একসঙ্গে পড়ত। সে স্কুলইনস্পেক্টরি কাজে পেন্সন্ নিয়ে সম্প্রতি কলকাতায় এসে বসেছে। সে ঘোর ব্রাহ্ম। শুনেছি তার ঘরে অনেকগুলি মেয়েও আছে। গোরাকে তার বাড়িতে যদি ভিড়িয়ে দেওয়া যায় তবে যাতায়াত করতে করতে পরেশের কোনাে মেয়েকে তার পছন্দ হয়ে যেতেও পারে। তার পরে প্রজাপতির নির্বন্ধ । আনন্দময়ী। বল কি ! গোরা ব্রাহ্মর বাড়ি যাতায়াত করবে ? সে দিম ওর আর নেই। & বুলিতে বলিতেই স্বয়ং গোর্ল তাহার মেঘমন্দ্র স্বরে “মা” বলিয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। কৃষ্ণদয়ালকে এখানে প্রবাসী । १श्न छा% বসিয়া থাকিতে দেখিয়া সে কিছু হইয়া গেল। আনন্দময়ী তাড়াতাড়ি উঠিয়া গোরার কাছে গিয়া দুই চক্ষে স্নেহ বিকীর্ণ করিতে করিতে কহিলেন—“কি, বাবা, কি চাই ?” f e 影 “না বিশেষ কিছু না, এখন থাকুন”—বলিয়া গোরা ফিরিবার উপক্রম করিল । ” কৃষ্ণদয়াল কহিলেন—“একটু বোস,একটা কথা আছে। আমার একটি ব্রাহ্মবন্ধু সম্প্রতি কলকাতায় এলেচেন তিনি হেদে৷ তলায় থাকেন।” গোরা । পরেশ বাবু নাকি ! কৃষ্ণদয়াল। তুমি তাকে জানলে কি করে ? গোর । বিনয় তার বাড়ির কাছেই থাকে, তার কাছে তাদের গল্প শুনেছি। কৃষ্ণদয়াল । আমি ইচ্ছা করি তুমি তাদের খবর নিয়ে এস । গোরা আপন মনে একটু চিন্তা করিল, তার পরে হঠাৎ বলিল—“আচ্ছ। আমি কালই যাব।” আনন্দময়ী কিছু আশ্চৰ্য্য হইলেন। গোরা একটু ভাবিয়াই আবার কহিল—“ন, কাল ত আমার যাওয়া হবে না ।” কৃষ্ণদয়াল । কেন ? গোরা । কাল আমাকে ত্রিবেণী যেতে হবে । কৃষ্ণদয়াল আশ্চর্য্য হইয়া কহিলেন, “ত্রিবেণী !” গোরা। কাল সুর্য্যগ্রহণের স্নান । আনন্দময়ী। তুই অবাকু করলি গোরা। স্নান করতে চাস কলকাতার গঙ্গা আছে। ত্রিবেণী না হলে তোর স্নান হবে ন—তুই যে দেশস্কন্ধ সকল লোককেই ছাড়িয়ে উঠুলি! গোরা তাহার কোনো উত্তর না করিয়া চলিয়া গেল । গোরা যে ত্রিবেণীতে স্নান করিতে সঙ্কল্প করিয়াছে তাহার কারণ এই যে সেখানে অনেক তীর্থযাত্রী একত্র হইবে। সেই জনসাধারণের সঙ্গে গোরা নিজেকে এক করিয়া মিলাইয়া দেশের একটি বৃহৎ প্রবাহের মধ্যে আপনাকে সমর্পণ করিতে ও দেশের হৃদয়ের আন্দোলনকে আপনার হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিতে চায়। যেখানে গোর একটুমাত্র অবকাশ পায় সেখানেই সে তাহার সমস্ত