পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১মূ সংখ্যা । ] সাধারণের ভাষাতে লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে। জনসাধারণ কখনই সংস্কৃত ভাষায় কথা বলে নাই এবং বলিতে পারেও না। ইহা কেবল শিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল । শিষ্টগণ শাস্ত্রাদি রচনায় এই ভাষা প্রয়োগ করিতেন এবং সাধুসমাজে আলোচনার সময়েও ইহা ব্যবহৃত হইত। কেহ কেহ বলিতে পারেন যদি উভয় ভাষাই একজাতির ভাষা হইবে তবে ইহাদের মধ্যে এত পার্থক্য কেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদের প্রথম বক্তব্য এই যে ইহাদের গ্রন্থ পাঠ করিয়া আমরা যতটা পার্থক্য দেখিতেছি, বৈদিক যুগে ততটা পার্থক্য ছিল না। পারসীকগণের পূৰ্ব্বপুরুষ ও ভারতীয় আৰ্য্যগণ, যত দিন একসঙ্গে বাস করিয়াছিলেন, ততদিন নিশ্চয়ই ইহার একই ভাষায় কথোপকথন করিতেন । ঘটনা চক্রে অনুরোপাসকগণ ভারত হইতে বিতাড়িত হইলেন। তখন ষ্টহাদিগকে ইরান প্রদেশে আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইল। একদল লোক যদি মাতৃভূমি পরিত্যাগ করিয়া বহুদূরবত্তী কোন বিজন প্রদেশে বাস করে, তাহ হক্টলে দুই এক পুরুষের মধ্যেই তাহাদের রীতি-নীতি আচারব্যবহার ও ভাষা ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটিয়া থাকে। আর তাহারা যদি বিদেশীয়দিগের সংশ্রবে আসে তাহ হইলে ত কথাই নাই। অসুরোপাসকদিগের জীবনেও তাহাই ঘটিয়াছিল। র্তাহারা যে ভাষা লইয়া ভারতবর্ষ ত্যাগ করিয়াছিলেন, আমরা ‘অবস্ত'তে যে সেই ভাষাই পাইতেছি তাহা নহে। সেই প্রাচীন ভাষাই বহু পরিবর্তিত হইয়া ‘অবস্তার ভাষাতে পরিণত হইয়াছে । দ্বিতীয়তঃ, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকের ভাষা চিরকালই পৃথক। অশিক্ষিত লোকেও বাঙ্গলা বলিয়া থাকে এবং শিষ্টসম্প্রদায়ভু বাঙ্গলা ভাষায় কথা বলেন। উভয় ভাষাই वांन्नल ; কিন্তু এক হইলেও এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য অনেক । আবার শিষ্টগণ বাঙ্গলাভাষায় কথাও বলেন এবং পুস্তকদিও লিখিয়া থাকেন। কথিত ভাষাও বাঙ্গল এবং লিখিত ভাষাও বাঙ্গল কিন্তু এই উভয় ভাষা এক হইলেও এক সহে । এখন ভাবিয়া দেখ অশিক্ষিতদিগের কথিত ভাষা এবং শিষ্টগণের লিখিত ভাষা এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য কত। বঙ্গদেশেয় डिज़ ভিন্ন অঞ্চলে কি প্রকার ভাষা ব্যবহৃত হয় তাহ অবগত হইলেই সমুদয় সন্দেহ ভঞ্জন হইয়া যাইবে। আস্থরী ভাষা । S. নিম্নে গৃয়াসন সাহেবের সংগৃহীত কয়েকটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতেছে । - ১ । কলিকাতার ভাষা :– একজনের দুই ছেলে ছিল, তাদের মধ্যে যে ছোট, সে তার বাপুকে বলিল, বাঘ ! ইত্যাদি ২। মানভূম —য়াহক নকের দুইটা ছাওগ রছি না। তাছারদের মাঝে ছষ্ট্ৰক ৰাববাকে কহিনীক বাবুল ! ৩ । মেদিনীপুর : এক লোক্কার দুটা পো থাইল । তান্নেকার মাঝু কোচা পো লিজের বাফুকে ৰত্ন বাফুহে!-- ৪ । মালদহ —য়্যাকজন মানুষের দুটা ব্যাটা আছিলো। তারযোর বিচে । তাহদের মধ্যে) ছোটুক। আপনার বাবাক কহলে বাবধনু – ৫ । বগুড়া : - একঝনের দুই ব্যাটাছৈল আছিল। তারকেরে মধ্যে ছোটঝণ কৈল বা --- ৬ । দিনাজপুর :–একজন মানুষের দুই ছাওয়া ছিল । তাদের মধ্যে ছোট ছাওয়া আপন বাপুকে কহিল বাপ ! - ৭ । রাচি —-এক লোকের দু বেটা রাহে। উহার মাঝে ছোট বেটা বাপকে কৈলেক্‌, এ বাপু!— ৮ । ঢাকা মাণিকগঞ্জ ঃ—য়্যাকজনের দুইডী ছাওয়াল আছিলে । তাগে মৈদে ছোটডি তার বাপেরে কৈলে বাব৷ - ৯ । চট্টগ্রাম ;–এগুআ মানুস্তের দুয়া পোয় আছিল। ছোডুয়৷ তার বায়ুরে কইল, বায়াজি – ১• । নোয়াখালি হাতিয়া: একজন মাইনসের দুগা ছোলা আছিল। হিয়ার মধ্যে ছুদুৰ্গায় হেইতার বাফেরে কইল বায়াজি – ১১। নোয়াখালি (রামগঞ্জ) --এক জনের দুই হুত আছিল । ছোটগায় বাপেরে কৈল ঘাউ — ১২ । ময়মনসিংহ (হইজং) —একজন মানলগু দুইগা পল থাকিবার। তানি অলাক হুটু পলার বাপুরাগে কয় যে বাব। — ১৩ । ত্রিপুরা --এক লেডার দুই পুৎ আচিল। ভারার মাইজে হুরুল তার বাপেরে কইল বাবুও !— ১৪। বাখরগঞ্জ ; একজন মানুষের দুগগা পোলা আছিল। তারগে মধ্যে ছোটুগ্ৰগ। হের বাপরে কইল বাব। — ১৫ । যশোহর; একজনের দুট পুল ছিল। তারগে মোদি ছোট জোন তার বাপেরে কলে বাবা !— কিন্তু পুস্তকে লিখিতে হইলে অনেকে এইরূপ লিখিবেন :--- কোন এক ব্যক্তির দুইটা পুত্র ছিল । তন্মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র তাহার পিতাকে সম্বোধন করিয়া বলিল পিতঃ !— এই বাঙ্গলার সহিত কথিত বাঙ্গলার পার্থক্য কত । অথচ এ সমুদয়ই বাঙ্গল । সমসাময়িক বঙ্গভাষাতেই যখন এত তফাৎ আবস্তিক ও সংস্কৃত ভাষার মধ্যে যে পার্থক্য থাকিবে তাহাতে আর বিচিত্র কি ? বিশুদ্ধ বাঙ্গলা যেমন কোন স্থানেই কথোপকথনে ব্যবহৃত হয় না তেমনি সংস্কৃত ভাষাও কথন জনসাধারণের ভাষা ছিল না । সভাসমিতি ও সাহিত্যেই কেবল এই ভাষা আবদ্ধ ছিল । বৈদিক সময়ে প্রাকৃতজনের যে ভাষা ছিল তাহাই কালক্রমে