পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

با هد না–কবন্ধের শিরঃপীড়ার দ্যায় নিতান্ত অলীক। সুতরাং “স্বরাজ' স্বদেশীর অপরিহার্য আশ্রয়। রাজনৈতিক শক্তি হাতে না থাকিলে যে দেশের শিল্পবাণিজ্যের উন্নতি অসম্ভব ইহার প্রমাণ অন্বেষণ করিতে বহুদুর যাইতে হয় না, ঘরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেই তাহার জলন্ত প্রমাণ মিলে। যে পরিমাণে ইংরাজ এ দেশের রাজনৈতিক শক্তি হস্তগত করিয়াছে সেই পরিমাণে এ দেশের শিল্পবাণিজ্য বিনষ্ট হইয়াছে। সুতরাং যে পরিমাণে আমরা সেই নষ্ট রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়া পাইব, সেই পরিমাণে আমাদের নষ্ট শিল্প বাণিজ্যের উদ্ধার সাধিত হইবে, সেই পরিমাণে আমাদের স্বদেশী জয়যুক্ত হইবে। যাহারা আপনাদিগকে রাজনীতি হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া স্বদেশী আন্দোলন করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন তাহীদের যে সকল শ্ৰম ভৰ্ম্মে ঘৃতাহুতি মাত্র তাহ বলা বাহুল্য মাত্র । অবষ্ঠ এমন অনেক পণ্ডিত আছেন, র্যাহারা বলিতেছেন, যে তোমরা এখনও কোন রাজনৈতিক অধিকারের উপযুক্ত হও নাই, সুতরাং তাহ পাইবে কিরূপে ? তোমরা যে স্বরাজ চাও, আগে স্বরাজের উপযুক্ত হও! স্বরাজ পরিচালনে যে সকল নৈতিক গুণ প্রয়োজন তাহ আগে আয়ত্ত কর, তবে স্বরাজ দাবী করিও । ইহার অর্থ এই, যে পার্থী আগে নিৰ্ব্বাত প্রদেশে উড়িতে শিক্ষা করুক, তারপর তাহার প্রতি বায়ুমণ্ডলের ব্যবস্থা হইবে। এইরূপ পণ্ডিতদিগকেই লক্ষ্য করিয়া মেকলে বলিয়াছেন,— “The maximi is worthy of thc fool in thc old story who resolved not to go into water till lic had learnt to swim. If men are to wait for liberty till they becomic wise and good in slavery thcy inay indeed wait for ever ইহারা বুঝিতে পারেন না, যে দাসত্বে যদি মানুষ স্বাধীনতার উপযোগী গুণগ্ৰাম লাভ করিতে সক্ষম হয়, তবে স্বাধীনত ও দাসত্বে প্রভেদ কোথায় ? কিন্তু সে কথা যাকৃ। আসল কথা এই, আমরা কি জগতে যে সমস্ত স্বাধীন জাতি আছে, নৈতিক ভাবে সকলের অপেক্ষাই হীন ? যে ইংরাজ সেদিনও বুয়র যুদ্ধের সময় গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা করিয়াছিল, “তে ঈশ্বর, তুমি আমাদের অস্ত্রশস্ত্রকে আশীৰ্ব্বাদ কর” সেই ইংরাজের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদ যদি ভারতবাসী প্রবাসী । অপেক্ষ শ্ৰেী হয় তবে নিতে ইবে নীতি ও নীতিহীনতা [ ৭ম ভাগ । এই দুইএর পার্থক্যটা মানববুদ্ধির অতীত। ইউরোপীয় জাতিসমূহ যে নৈতিক হিসাবে আমাদের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নহে, ইহা আমার গায়ের জুরি কথা নয়। পণ্ডিতপ্রবর হাৰ্ব্বার্ট স্পেন্সার তাহার সমাজবিজ্ঞান পুস্তকে (Sociology) খৃষ্টীয় জাতিসকলের নৈতিক চরিত্র আমাদের সঙ্গে তুলনা করিয়া অতি আক্ষেপের সঙ্গে বলিয়াছেন— “What a pity these Heathcns can not be induced to send missionaries annong the Christians !” বস্তুতঃ কথাটা এই, যে আমাদের স্বরাজের যোগ্যতা নাই তাহা নহে, কিন্তু ইংরাজের সে নৈতিক বল নাই, সে হ্যায়নিষ্ঠা ও সত্যপ্রিয়তা নাই, যাহার খাতিরে সে নিজের স্বার্থের হানি করিয়া আমাদের উপযুক্ততার বিচার করিতে পারে। এমন অনেক ভ্রান্ত লোক আছেন যাচারা বলিবেন, যে ইংরাজ স্বীয় ঔদার্য্যে দাসদিগকে মুক্ত করিয়া দিয়াছে, অনেক অর্থব্যয়ে দাসত্ব প্রথার দ্যায় মানবজাতির মহাকলঙ্ক জগত হইতে দূরীভূত করিয়া দিয়াছে, তাহার উপযুক্ত বুঝিলে আমাদিগকে স্বাধীনতা দিবে না, তাহ স্বীকার করা যায় না । ইহার উত্তরে আমার বক্তব্য এই যে দাসত্ব প্রথার উন্মোচন ইংরাজের স্বাধীনতাপ্রীতি ও মহানুভবতার পরিচায়ক নহে । আমি এ কথা অস্বীকার করি না, যে ইংরাজ জাতির মধ্যে দুই চারিজন লোক এমন ছিলেন না বা এখনও নাই, যাহারা প্রকৃতই স্বাধীনতার উপাসক, যদিও তাহীদের সংখ্যা এখন অনেক কমিয়া গিয়াছে এবং এ বিষয়ে ইংরাজ জাতির মনের ভাবে (Sentiment) ঘোর অবনতি ঘটিয়াছে। এই তো সে দিন বেলফোর সাহেব ধৰ্ম্মের জন্ত উৎপীড়িতদিগকে যে ইংলণ্ড আশ্রয় দান করেন এই কাৰ্য্যটির উপর একটি তীব্র শ্লেষ করিলেন, এবং কেহ তাহার প্রতিবাদ করিল না । ইংরাজ চরিত্রের এই অবনতি সব দিকেই ঘটিয়াছে। যাহা হউক, আমার কথা এই, দাসত্বপ্রথার উন্মুলনের মধ্যে স্বার্থ ছিল, পরার্থ বড় বেশী ছিল না। ছ’চার জনের মহত্ত্ব ছিল, সন্দেহ নাই কিন্তু তাহার ভাগী সমগ্র ইংরাজ জাতি নহে। অথচ সমস্ত জাতিটা উদ্বুদ্ধ না হইলে এত বড় একটা ব্যাপক কাৰ্য্য সম্পন্ন হইতে পারে না । ভারতের স্বাধীনতা দু’চার জনের