পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. ২য় সংখ্যা । ] আসিতেছিল। মোসলমানের মান ইজ্জত হিন্দু রক্ষা করিয়া আমিতেছে আর হিন্দুরও ইজ্জত লুবয়ত মোসলমানগণ রক্ষা করিতেছে। এই প্রকার স্বমধুর অমৃতযোগের মধ্যে দেশের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের সূচনা দেখিয়া আমরা অতীব পুলকিত হইয়াছিলাম ; আমাদের আজীবন কঠোর চেষ্টা, উদ্যম এবং কঠোর সাধন সিদ্ধ হইতেছে মনে করিয়া জীবনকে সার্থক ভাবিতেছিলাম। কিন্তু হায় ! হঠাৎ কতিপয় উদ্বগু লোকের কুকাগুময় ঘটনায় আমাদের হরিষে বিষাদ উপস্থিত হইয়াছে। আমাদের দোতুল্যমান আশালতিকার মাথায় ঘোরতর বজ্ৰাঘাত হইয়াছে। কুক্ষণে কুমিল্লার কুকাগু-সংঘটন-বার্তা আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করিয়াছে ; কুক্ষণে মগড়া এবং বিক্রমপুর প্রভৃতির কুসংবাদ আমাদের নিকট ঘোষিত হইয়াছে ; প্রাণের বিষম মৰ্ম্মবেদনার মধ্যে আবার জামালপুরের ভীষণ দুর্ঘটনার কথায় আমাদিগকে একেবারে গভীর বিষাদে অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছে ! এই কথা লিখিতে লিখিতে সিরাজগঞ্জের ভাবী অমঙ্গল ভাবিয়া প্রাণ মন আকুল হইয়া উঠিয়াছে ! হায়! কি ভাবিলাম, আর কি হইল! কি দশা হইতে চলিল ! কোন যাদুমন্ত্রবলে অসম্মিলনের বিষম বিষ সমস্ত বঙ্গ ও তারত যুড়িয়া ছড়াইয়া পড়িল ? কোন চক্রীর চক্রান্তপ্রভাবে হঠাৎ এই ভীষণ কালানল আজ এমনি করিয়া দাউ দাউ জলিয়া উঠিল! হে ঈশ্বর ! তুমি জান, তুমিই অবগত আছ, এই অবস্থার মধ্যে ভারতের ভাবী দশার কি হইবে ? পূৰ্ব্বে পুথিপুস্তকে পাঠ করিতাম যে, মোসলমানগণ হিন্দুদিগের আরাধ্য দেবতার প্রতিমা আদি বিধ্বংস করিয়াছে, হিন্দুগণের কুলমহিলাদিগের মান ইজ্জতের প্রতি মোসলমানগণ অযথা আক্রমণ করিয়া বিশ্ব কলঙ্কিত করিয়াছে ; এ কথা অনেক স্থলেই বিশ্বাস করিতাম না ; অনেক স্থলেই বলিতাম যে, মোসলমানের শত্রপক্ষীয়গণ উহার মিছামিছি একটা রটনা করিয়াছে। কিন্তু এইক্ষণ এই সভ্যতাভব্যতার দিব্য আলোকপ্রভা এবং উদার সাম্যবাদমতাবলম্বী ছায়পরায়ণ ব্রিটি গবর্ণমেণ্টের উন্নত স্বশাসনের ঢৱানিনাদের মধ্যে যাহা কখনও কল্পনা জয়নাতেও উদয় হয় নাই, সেইরূপ অস্বাভাবিক অবস্থার হিন্দুর উপস্থিত বিপদে মোসলমানের সহানুভূতি। > oసి ভিতরে আজ মোসলমান কর্তৃক হিন্দুপরিবারের লাঞ্ছনা এবং হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমানাশের প্রত্যক্ষ ঘটনা, জানিয়া শুনিয়া আমরা আজ কিংকৰ্ত্তব্য বিমূঢ় এবং স্তম্ভিত হইয়া পড়িয়াছি ; আমাদের চিত্ত মন কম্পিত হইতেছে ; ভাল লোকের নিকট আমাদের আর উত্তর দান সরিতেছে না ! ! আমরা ভাবিয়া ঠিক পাইতেছি না যে, এ আবার কোন্‌ মুলতান মাহমুদ গজুনভী, বা কোন মহাম্মদ ঘোরি, অথবা কোন এক ঈসা খাঁ কাল পাহাড়ের আমল উপস্থিত হইল! আর কোন বা পীর পয়গম্বর জাহেদিনের আবির্ভাবে জেহাদের এমন ভয়ঙ্কর উগ্রভাব আবার ধরাতলে দেখা দিতে চলিল !! মানুষ ধৰ্ম্ম লইয়া আছে, মানুষ ধৰ্ম্মকে বড় ভাল বাসে ; প্রাণ যায় যাউক কিন্তু ধৰ্ম্মের অবমাননা এবং পরিবারের লাঞ্জনা কোন জীবন্ত মনুষ্য সহ করিতে পারে না । জামালপুর এবং কুমিল্লার ঘটনায় হিন্দুভ্রাতাগণের অন্তর আস্থায় কি যে বিষম ভীষণ আঘাত লাগিয়াছে । তাহীদের মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে কি যে এক নিদারুণ শক্তিশেল বিদ্ধ হইয়াছে, ভূক্তভোগী ভিন্ন তাহা আর অঙ্গ কাহারও বুঝিবার সাধ্য নাই। সাধ্য নাই যে, আজ ভাষায় তাহা ব্যক্ত করিতে পারে। ব্যান্ত্রে সংহার করিলে, কিম্বা কালসপে দংশন করিলে কোনই ক্ষোভ জন্মিত না ; কিন্তু ীে নিদারুণ বিষে তাহাদের মৰ্ম্মস্থল আজি জর্জরিত করিতেছে, তাহার বুঝি ঔষধ নাই, বুঝিবা ভাহার আর শান্তি নাই ! একটী পুরুষে নয়, দুইটী পুরুষে নয়, যুগের পর যুগ চলিয়া যাইবে কিন্তু এই কালান্তক বিষ অতি তীব্রতর হইয়া উচ্ছাসের পর উচ্ছাস, তরঙ্গের পর তরঙ্গ, গঙ্গা যমুনার দ্যায় ভয়ঙ্কর বেগে প্রবাহিত হইতে থাকিবে, আর দরিদ্র দুর্দশাগ্রস্ত অতি বিপন্ন হিন্দু মোসলমান জাতিদ্বয়কে ঘোর রসাতলে বুঝি বা নিমজ্জিত করিবে ! বিগত বৎসর এমনি দিনে, এমনি সময়ে, ঘোরতর দুর্ভিক্ষের দুরাবস্থার মধ্যে, যে হিন্দুগণ ক্ষুধাতুর মোসলমানগণকে অন্ন বস্ত্র বিতরণ করিয়া উপকার করিয়াছিল, ষে হিন্দুগণ মোসলমানগণের শেষ সমরে ইংরাজের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন করিয়াও মোসলমানের স্বার্থ রক্ষার নিমিত্ত অনন্ত শয্যায় শয়ন করিয়াছিল, সেই হিন্দুগণের প্রতি, সেই মোসলমান জাতি, এবার হঠাৎ যে দুৰ্ব্ব্যবহার করিয়া উঠিয়াছে, তাহ