পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা । ] > লোকের সঙ্গে আর তাহার সম্পর্ক নাই ; কেবল টীকা ধারের দালাল আসিয় তাহার বাধানে ই কায় তামাক টানিয়া যায় এবং অ্যাটর্নি আপিসের বাবুদের সঙ্গে ষ্ট্যাম্প দেওয়া দলিলের সর্ত সম্বন্ধে আলোচনা হইয়া থাকে । র্তাহার সংসারে খরচপত্র সম্বন্ধে হিসাবের এমনি কষাকষি যে পাড়ার ফুটবল ক্লাবের না-ছোড়বান্দা ছেলেরাও বহু চেষ্টায় তাহার তহবিলে দস্তক্ষুট করিতে পারে নাই। এমন সময় তাহার ঘরকন্নার মধ্যে একটি অতিথির আগমন হইল । ছেলে হ’ল না হ’ল না করিতে করিতে অনেকদিন পরে তাহার একটি ছেলে জন্মিল । ছেলেটির চেহারা তাহার মা'র ধরণের। বড় বড় চোখ, টিকলো নাক, রং রজনীগন্ধার পাপড়ির মত,—যে দেথিল সেই বলিল আহা ছেলে ত নয় যেন কাৰ্ত্তিক। অধর বাবুর অনুগত অনুচর রতিকান্ত বলিল, বড় ঘরের ছেলের যেমনটি হওয়া উচিত তেমনিই হইয়াছে। $ ছেলেটির নাম হইল বেণুগোপাল । ইতিপূৰ্ব্বে অধর বাবুর স্ত্রী ননীবালা সংসার খরচ লইয়া স্বামীর বিরুদ্ধে নিজের মত তেমন জোর করিয়া কোনো দিন থাটান নাই। দুটো একটা সখের ব্যাপার অথবা লৌকিকতার অত্যাবস্তক আয়োজন লইয়া মাঝে মাঝে বচসা হইয়াছে বটে কিন্তু শেষকালে স্বামীর কৃপণতার প্রতি অবজ্ঞা করিয়া নিঃশব্দে হার মানিয়াছেন। এবারে ননীবালাকে অধরলাল আঁটিয়া উঠিতে পারিলেন ন! ;--বেণুগোপাল সম্বন্ধে তাহার হিসাব এক এক পা করিয়া হঠিতে লাগিল । তাহার পায়ের মল, হাতের বালা, গলার হার, মাথার টুপি, তাহার দিশি বিলাতি নানা রকমের নানা রঙের সাজ সজ্জা সম্বন্ধে ননীবালা যাহা কিছু দাবী উত্থাপিত করিমু যু কটাই তিনি কখনাে নীরব আশ্রপাতে কখনো সরব বাক্যবর্ষণে জিতিয়া লইলেন। বেণু গোপালের জন্ত যাহা দরকার এবং যাহা দরকার নয় তাহt চাইই চাই—সেখানে শূন্ত তহবিলের ওজর বা ভবিষ্যতের ফাক আশ্বাস একদিনও খাটিল না। 翰 १ বেগুগোপাল বাড়ির উঠতে লাগিল। বেণুর জন্ত খরচ মাষ্টর মশা। ) సిన করাটা অধরলালের অভ্যাস হইয়া আসিল । তাহার জন্য বেশি মাহিনী দিয়া অনেক পাশ করা এক বুড়ো মাষ্টার রাখিলেন । এই মাষ্টার বেণুকে মিষ্ট্রভাষায় ও শিষ্টাচারে বশ করিবার অনেক চেষ্টা করিলেন–কিন্তু তিনি না কি বরাবর ছাত্রদিগকে কড়া শাসনে চালাইয় আজ পর্য্যন্ত মাষ্টারি মর্য্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখিয়া আসিয়াছেন সেই জন্ত তাহার ভাষার মিষ্টতা ও আচারের শিষ্টতায় কেবলি বেমুর লাগিল— সেই শুষ্ক সাধনায় ছেলে ভুলিল না। ননীবালা অধরলালকে কহিলেন—ও তোমার কেমন মাষ্টার । ওকে দেখিলেই যে ছেলে অস্থির হইয় উঠে। ওকে ছাড়াইয়া দাও! বুড়া মাষ্টার বিদায় হইল। সেকালে মেয়ে যেমন স্বয়ম্বর হইত তেমনি ননীবালার ছেলে স্বয়ম্মাষ্টার হইতে বসিল—সে যাহাকে না বরিয়া লইবে তাহার সকল পাস ও সকল সার্টিফিকেট বৃথা । এমনি সময়টিতে গায়ে একখানি ময়লা চাদর ও পায়ে ছেড়া ক্যাম্বিসের জুতা পরিয়া মাষ্টারির উমেদারিতে হরলাল আসিয়া জুটল। তাহার বিধবা মা পরের বাড়তে রাধিয়া ও ধান ভানিয়া তাহাকে মফস্বলের এণ্টেন্স স্কুলে কোনো মতে এণ্টেন্স পাশ করাইয়াছে। এখন হরলাল কলিকাতায় কলেজে পড়িবে বলিয়া প্রাণপণ প্রতিজ্ঞ করিয়া বাহির হইয়াছে। অনাহারে তাহার মুখের নিম্নঅংশ শুকাইয়া ভারতবর্যের কন্তাকুমারীর মত সরু হইয়া আসিয়াছে, কেবল মস্ত কপালট হিমালয়ের মত প্রশস্ত হইয়া অত্যন্ত চোখে পড়িতেছে। মরুভূমির বালু হইতে সুৰ্য্যের আলো যেমন ঠিকরিয়া পড়ে তেমনি তাহার দুই চক্ষু হইতে দৈন্তের একটা অস্বাভাবিক দীপ্তি বাহির হইতেছে। দরোয়ান জিজ্ঞাসা করিল, তুমি কি চাও? কাহাকে চাও?—হরলাল ভয়ে ভয়ে বলিল—বাড়ির বাবুর সঙ্গে দেখা করিতে চাই।-দরোয়ান কহিল—দেখা হইবে না। তাহার উত্তরে হরলাল কি বলিবে ভাবিয়া না পাইয়া ইতস্ততঃ করিতেছিল এমন সময় সাত বছরের ছেলে বেণুগোপাল বাগানে খেলা সারিয়া দেউড়িতে আসিয়া উপস্থিত হইল। দরোয়ান হরলালকে দ্বিধা করিতে দেখিয়া আবার কহিল— বাবু চলা যাও । বেণুর হঠাৎ জিদ চড়িল—সে কহিল, নেহি জায়গা !