পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপর মাষ্টীর মশা ৩য় সংখ্যা । ] হস্তাক্ষরে বেণুর নামলেখা একটা কাগজ আঁটা । আর একটি নূতন ভাল বাধাই করা ইংরেজি ছবির বই তাহার ভিতরকার পাতায় এক প্রাস্তে বেণুর নাম ও তাঁহার নীচে আজকের তারিখ মাস ও সন দেওয়া श्रांछ । বেণু ছুটয় তাহার বাপের কাছে গিয়া কহিল, বাবা মাষ্ঠীর মশায় কোথায় গেছেন ? বাপ তাহাকে কাছে টানিয়া লইয়া কহিলেন, তিনি কাজ ছাড়িয়া দিয়া চলিয়া c*ां८छ्न ! বেণু বাপের হাত ছাড়াইয়া লইয়া পাশের ঘরে বিছানার উপরে উপুড় হইয়া পড়িয়া কঁদিতে লাগিল। অধর বাবু ব্যাকুল হইয়া কি করিবেন কিছুষ্ট ভাবিয়া পাইলেন না। পরদিন বেলা সাড়ে দশটার সময় হরলাল একটা মেসের ঘরে তক্তপোষের উপর উন্মনী হইয়া বসিয়া কলেজে যাইবে কিনা ভাবিতেছে এমন সময় হঠাৎ দেখিল প্রথমে অধরবাবুদের দরোয়ান ঘরে প্রবেশ করিল এবং তাহার পিছনে বেণু, ঘরে ঢুকিয়াই হরলালের গলা জড়াইয়া ধরিল। হরলালের গলার স্বর আটুকাইয়া গেল ;–কথা কহিতে গেলেই তাহার দুই চোখ দিয়া জল ঝরিয়া পড়িবে এই ভয়ে সে কোনো কথাই কহিতে পারিল না । বেণু কহিল—মাষ্টার মশায় আমাদের বাড়ী চল । বেণু তাছাদের বুদ্ধ দরোয়ান চন্দ্রভানকে ধরিয়া পড়িয়াছিল যেমন করিয়া হউক্‌ মাষ্টীর মশায়ের বাড়ীতে তাহাকে লইয়া যাইতে হইবে। পাড়ার যে মুটে হরলালের প্যাটুর বাহিয়া আনিয়াছিল তাচার কাছ হইতে সন্ধান লইয়া আজ ইস্কুলে যাইবার গাড়ীতে চন্দ্রভান বেণুকে হরলালের মেসে অানিয়া উপস্থিত করিয়াছে । কেন যে হরলালের পক্ষে বেণুদের বাড়ি যাওয়া একেবারেই অসম্ভব তাহ সে বলিতেও পারিল না অথচ তাহাদের বাড়িতেও যাইতে পারিল না। বেণু যে তাহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া তাহাকে বলিয়াছিল আমাদের বাড়ি চল—এই স্পর্শ ও এষ্ট কথাটার স্মৃতি কত দিনে কত রাত্রে তাহার কণ্ঠ চাপিয়া ধরিয়া যেন তাহার নিশ্বাস রোধ করিয়াছে—কিন্তু ক্রমে এমনও দিন আসিল যখন দুই পক্ষেই সমতু জুকিয় গেল—বক্ষের শিরা আঁকড়াইয়া ধরিয়া বেদনা-নিশাচর বাজুড়ের মত আর ঝুলিয়া রহিল না । وخة হরলাল অনেক চেষ্টা করিয়াও পড়াতে আর তেমন করিয়া মনোযোগ করিতে পারিল না । সে কোনমতেই স্থির হইয়া পড়িতে বসিতে পারিত না। খানিকটা পড়িবার চেষ্টা করিয়াই ধী করিয়া বই বন্ধ করিয়া ফেলিত এবং অকারণে ক্রতপক্ষে রাস্তায় ঘুরিয়া আলিত। কলেজে মাষ্টর মশায়। ૨૭ ; লেকচারের নোটের মাঝে মাঝে খুব বড় বড় ফাক পড়িত এবং মাঝে মাঝে যে সমস্ত আঁকজোক পড়িত তাহার সঙ্গে প্রাচীন ঈজিপ্টের চিত্রলিপি ছাড়া আর কোনো বর্ণমালার সাদৃপ্ত ছিল না । হরলাল বুঝিল এ সমস্ত ভাল লক্ষণ নয়। পরীক্ষায় সে যদি বা পাস হয় বৃত্তি পাইবার কোনো সম্ভাবনা নাই । বৃত্তি না পাইলে কলিকাতায় তাহার একদিনও চলিবে না । ওদিকে দেশে মাকেও দু’চার টাকা পাঠানে চাই। নানা চিন্তা করিয়া চাকরির চেষ্টায় বাহির হইল। চাকরি পাওয়া কঠিন, কিন্তু না পাওয়া তাহার পক্ষে আরও কঠিন ; এই জন্ত আশা ছাড়িয়াও অাশা ছাড়িতে পারিল না । হরলালের সৌভাগ্যক্রমে একটি বড় ইংরেজ সদাগরের আপিসে উমেদারী করিতে গিয়া হঠাৎ সে বড় সাহেবের নজরে পড়িল । সাহেবের বিশ্বাস ছিল তিনি মুখ দেখিয়া লোক চিনিতে পারেন । হরলালকে ডাকিয় তাহার সঙ্গে দু’চার কথা কহিয়াই তিনি মনে মনে বলিলেন,—“এ লোকটা চলিবে ।” জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাজ জানা আছে ?” হরলাল কহিল,—“না।” “জামিন দিতে পরিবে ?” তাহার উত্তরেও “না।” “কোনো বড়লোকের কাছ হইতে সার্টিফিকেট্‌ আনিতে পার ?” কোনো বড়লোককেই সে জানে না । শুনিয়া সাহেব আরো যেন খুসি হইয়াই কহিলেন,— “আচ্ছা বেশ, পচিশ টাকা বেতনে কাজ আরম্ভ কর, কাজ শিখিলে উন্নতি হইবে।”—তার পরে সাহেব তাহার বেশভূষার প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন,-“পনেরো টাকা আগাম দিতেছি—আপিসের উপযুক্ত কাপড় তৈরি করাইয়। লইবে ।” কাপড় তৈরি হইল, হরলাল আপিসেও বাহির হইতে আরম্ভ করিল। বড় সাহেব তাহাকে ভূতের মত খাটাইতে লাগিলেন। অন্য কেরাণীরা বাড়ী গেলেও হরলালের চুটি ছিল না। এক একদিন সাহেবের বাড়ী গিয়াও র্তাহাকে কাজ বুঝাইয়া দিয়া আসিতে হইত। এমনি করিয়া কাজ শিখিয়া লইতে হরলালের বিলম্ব হইল না । তাহার সহযোগী কেরাণীরা তাহকে ঠকাইবার অনেক চেষ্টা করিল, তাহার বিরুদ্ধে উপরওয়ালাদের কাছে লাগালাগিও করিল কিন্তু এই নিঃশব্দ নিরীহ সামান্ত হরলালের কোনো অপকার করিতে পারিল না। যখন তাহার চল্লিশ টাকা মাহিনী হইল, তখন হরলাল দেশ হইতে মাকে আনিয়া একটি ছোটখাট গলির মধ্যে ছোটখাট বাড়িতে বাসা করিল। এত দিন পরে তাহার মার দুঃখ ঘুচিল। মা বলিলেন,—“বাবা, এইবার বউ ঘরে জানিব।" হরলাল মাতার পায়ের ধূলা লইয়া বলিল, “ম, ঐট মাপ করিতে হইবে।”