পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা । বৃহৎ প্রাঙ্গণ ও চতুর্দিকে স্তম্ভশোভিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গৃহ। তুিন দিকে তিনটি ফটক। পূৰ্ব্বদিকের ফটকটি সিকদার লোদি কর্তৃক ভূমিসাৎ হইয়াছে। এখনও ভগ্নাবস্থায় পড়িয়া আছে । দুটি তিনটি প্রস্তর লিপিতে কোরাণ হইতে উপদেশ উদ্ধৃত হইয়াছে। একটি সংস্কৃত প্রস্তরলিপি আছে কিন্তু তাহা পাঠ করা যায় না । - • জোনপুরের সর্বাপেক্ষ ক্ষুদ্র ঐতিহাসিক মসজিদ লাল দরওজা । শারকীবংশীয় মাহমুদ শার পত্নী বিবিরাজি কৃত নিকটস্থ প্রাসাদের রক্তবর্ণ দ্বার হইতে এই নামের উৎপত্তি । এই মসজিদ সহর হইতে কিঞ্চিৎ দূরে অবস্থিত। ইহাতে হিন্দু কারুকৰ্য্যের অংশ অন্যান্ত মসজিদ অপেক্ষা অধিক। কিন্তু ইহা অত্যন্ত ভগ্নাবস্থায় । সম্প্রতি ইহা সংস্কারের চেষ্ট৷ হইয়াছিল কিন্তু তাহাতে ইহার সৌন্দর্য্য আরও কমিয়া গিয়াছে। কোরণ হইতে উদ্ধৃত উপদেশ দুইটি প্রস্তর ফলকে খোদিত । তিন চারিটি সংস্কৃত প্রস্তরফলক হিন্দু কাৰ্য্যকলাপের পরিচয় দান করিতেছে । হিন্দু ভাস্কর নিযুক্ত করাই মসজিদে হিন্দুভাবের আধিক্যের কারণ। জোনপুরের কতকগুলি প্রধান দর্শনযোগ্য বস্তুর পরিচয় দান করিলাম। আরও কতকগুলি ক্ষুদ্র জীর্ণ পুরাতন মসজিদ আছে। কিন্তু কোন প্রাসাদের চিন্তুও নাই । জোনপুরের ধ্বংসাবশেষ দেখিয়া মনে দুঃখ হয় বটে কিন্তু এই দুঃখের সহিত কোন কষ্টকর স্মৃতি মনে উদিত হয় না । জামি মসজিদের ছাদের উপর হইতে জোনপুরের ঘনসন্নিবেশিত গৃহরাজিও বহু দূরে বৃহৎ আম্রকানন দেখিতে পাওয়া যায়—একদিন যে সকল স্থানে মুসজ্জিত প্রাসাদ শোভা পাইত ও সুন্দর উদ্যান তাহার শোভা বৰ্দ্ধন করিত, এখন সেই সকল স্থানে শৃগালগণের বাসস্থান। কেল্লার ধ্বংসাবশেষ হইতে গুমতীর বক্রগতি বহুদূর পর্য্যন্ত দেখা যায়। একটি সামষ্ঠি প্রাচীরবেষ্টিত প্রাঙ্গণে জোনপুরের সৰ্ব্বাপেক্ষা পরাক্রমশালী শারকীবংশয় অধিপতি মামুদ সা ও তীয় পত্নী বিবিরাঞ্জি চিরনিদ্রায় শয়ান । তাহদের মধ্যে জোনপুরের শেষ দুর্দান্ত অধিপতি হুসেন শা চিরবিশ্রাম লাভ করিয়াছেন।.এক একটি সামান্ত প্রস্তরখও তাঁহাদের বিশ্রামস্থল চিহ্ণিত করিয়া রাখিয়াছে। ঐশিশিরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । একাদশী ব্ৰত । ১৩৭ একাদশী ব্ৰত। । নিদারুণ গ্রীষ্মের প্রবল প্রতাপে চারিদিকৃ দগ্ধ হইয়া যাইতেছে। আমাদের নিদাঘচর্য্যার আয়োজনের শক্তিমত কোন ক্ৰটিষ্ট হইতেছে না। বৈদ্যুত ব্যঞ্জন ঘূর্ণিত হইতেছে। যন্ত্রধারা উন্মুক্ত হইয়াছে। দ্বার-বাতায়ন-মুখ উপীরগুচ্ছে সমাবৃত। হিমসংস্কষ্ট বহুবিধ সুরভি-শীতল পানীয় দ্রব্য সৰ্ব্বদাই প্রস্তুত। পিপাসা তবুও উপশান্ত হইতেছে না। প্রাণ ছটু ফট্‌ করিতেছে। সকলেই অস্থির হইয়া পড়িতেছে। নিদাঘ নিবারণের নিখিল উপকরণই কোন ফল প্রসব করিতে পারিতেছে না । আমরা যখন এই বিবিধ উপায়ে পরিবৃত থাকিয়াও গ্রীষ্মে দুর্বিষহ যন্ত্রণা হইতে নিস্কৃতি লাভ করিতে পারিতেছি না, তখন পাঠকগণ, ভাবিয়া দেখুন, যাহাদের জলবিন্দু গ্রহণ পৰ্য্যন্ত আমরা নিষিদ্ধ করিয়া দিয়াছি তাহাদিগকে এই সময়ে কতদূর তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করিতে হয়। ধন্ত তাহাদের আমাদের কথায় বিশ্বাস, যে প্রাণ দেহপিঞ্জর পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইতেছে, যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া অফুট কাতর ধ্বনি করিতেছে, তবুও তাহারা মুখ ফুটিয়া বলিবে না ষে একটু জল চাই । আর মামরা ? আমরা তাহাদের সরল বিশ্বাসের উপর যতদুর নিষ্ঠুরাচরণ করিতে পারি তাহাতে কোন বিষয়ে স্বল্পমাত্রও পরায়ুখ হইতেছি না । কৰ্ত্তব্য পালন করিতেছি ! ধৰ্ম্মরক্ষা করিতেছি । শাস্ত্রের মর্য্যাদা স্থাপন করিতেছি । ধিক্ আমাদের কৰ্ত্তব্যে, ধিক্ আমাদের ধৰ্ম্মে, এবং শত ধিক্ আমাদের শাস্ত্রমর্য্যাদায়। আমরা অত্যপ্লমাত্র ক্ষুধাতৃষ্ণার হস্ত হইতে নিস্কৃতি লাভের জন্য কতদূর ব্যস্ত হইয়া পড়ি, দুই মাস গ্রীষ্মের যাতনা নিবারণ জন্য কত প্রকার আয়োজনে নিযুক্ত থাকি, কিন্তু যাহাদিগকে লইয়া আমাদের গৃহ-সংসার, যাহাদিগের দ্বারা নিয়ত পরিবৃত হইয়া আমাদিগকে কাল যাপন করিতে হয়, তাহাদের এই বার মাসের কঠোর যন্ত্রণ স্বচক্ষে দেখিয়াও আমরা দেখিতে পাই না, বুঝিয়াও বুঝিতে চাই না। এতই আমরা পণ্ডিত হইয়া উঠিয়াছি ! এতই আমাদের শাস্ত্রাকুরাগ ! "আমরা’ শব্দে আমি পশ্চিম বঙ্গীয় উচ্চ বর্ণকে জিজাতিকে লক্ষ্য করিতেছি, বিশেষতঃ ব্রাহ্মণ