পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১য় সংখ্যা । ] কাথায় ? রামপাল বাপূৰ্ব্ববঙ্গের প্রসঙ্গ নাই; গৌড়ের প্রসঙ্গ আছে । রামপাল তাহার অন্তর্গত ছিল ; কিন্তু গৌড় নামে রিচিত ছিল না। তবে কোন স্থান ব্রাহ্মণাগমন স্থান ? ংলশাস্ত্রগ্রন্থে তাহার ভৌগোলিক পরিচয়ের সন্ধান প্রাপ্ত হওয়া ifয় । তাহ এইরূপ,— “সকল গুণসমেতাঃ সাগ্নিকা ব্রহ্মনিষ্ঠা: হুতবহুসমভাসা ব্রাহ্মণা: কাণ্যকুজাৎ । নিজপরিকরবর্গৈঃ পাবনং পাপমুক্তং ‘সুরসরিদবধৌতং যান্তি গৌড়ং মনোজ্ঞম।” এই শ্লোকে ব্রাহ্মণগণের কাণ্যকুব্জ হইতে পাবনIাপমুক্ত--মুরগরিদবধৌত—মনোজ্ঞ গৌড় নগরে আগমন মরিবার কথা উল্লিখিত আছে। সেকালের অঙ্গ বঙ্গ ফুলিঙ্গ সৌরাষ্ট্র এবং মগধদেশ বৌদ্ধাচারপ্লাবিত বলিয়া ঠীর্থযাত্র ব্যতীত, অন্ত ব্যপদেশে আর্য্যগণ তথায় পদাপণ চরিতেন না ;-করিলে, পুনসংস্কার গ্রহণ করিতে হইত। গৗড় ভাগীরথীসলিল বিধৌত বলিয়া পবিত্র এবং পাপমুক্ত । গহা ছাড়িয়া গঙ্গাহীন পূৰ্ব্ববঙ্গে পঞ্চব্রাহ্মণ পদার্পণ করিতে স্মিত হইতেন কি না, তাহা ভাবিয়া দেখিবার বিষয় । ফুলশাস্ত্রগ্রন্থের এই শ্লোক স্পষ্টাক্ষরে গৌড়নগরীকেই স্থচিত কুরিতেছে । সতুল্যাপুরের গঙ্গার ঘাটের গঠন পারিপাট্য, তাহার মদুৰ্ববৰ্ত্তী সাগরদীঘি নামক সুবৃহৎ সরোবর, সরোবরের নকটে প্রাচীর পরিখাবেষ্টিত দুর্গাকার পুরাতন স্থান, এবং নিশ্রুতি সমস্বরে এই স্থানকেই “মুরসরিদবধৌত” গৌড়গরী বলিয়া ব্যক্ত করিয়া আসিতেছে । যে জ্ঞানগৌরবের জষ্ঠ আধুনিক বঙ্গভূমি ভারতবিখ্যাত গণ্যকুম্ভাগত ব্রাহ্মণগণই তাহার মূল কারণ। তাহাদের ংশধরগণের কীৰ্ত্তিকাহিনীতে তাহার প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া iায়। যেখানে নববঙ্গের পূর্বপিতামহগণ প্রথম পদার্পণ রেন, সেই পুস্তক্ষেত্র বাঙ্গালীর চিরস্মরণীয় গৌরবক্ষেত্র। ংলশাস্ত্র গ্রন্থের প্রমাণ সত্য হইলে, এই স্থানই সেই স্থান । গহার কথা স্মরণ করিলে, ক্ষণকালের জন্য নিমালিত নয়নে সকালের স্বল্পকাহিনী স্বরণ করতে হয়। গঙ্গাতীরে উপৗত হইলে মনে হয়,—এখনও বুঝি সেই বেদবেদাঙ্গপরায়ণ ঞ্চিত্রাক্ষণের পঞ্চকণ্ঠসমুদ্ভুত ধীরোদাত্ত বেদধ্বনি পুরাতন । লক্ষণাবতী । >84. সোপানাবলী হইতে অনন্ত আকাশমণ্ডলে সমুখিত হইয়। আৰ্যসভ্যতার মূলমন্ত্র বিঘোষিত করিবার জন্য অধস্তন বংশধরগণকে থাকিয়া থাকিয়া ডাকিয়া কহিতেছে,— “সৰ্ব্বং পরবশং দুঃথং সৰ্ব্বমাত্মবশং মুখম্।।” পুরাতন পরিখা, প্রাচীর, এবং রাজহুর্গের শূন্য স্থান, বিগতবিক্রমের লীলাভূমি বলিয়া ইতিহাসলেখকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করিয়া থাকে। ইহার রচনাপারিপাট্যের অন্য কোন ও নিদর্শন বৰ্ত্তমান নাই , সিংহদ্বার পর্যন্ত বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। যাহা আছে, তাহ মৃৎপ্রাচীর এবং পরিখা প্রাচীরের উপর বৃক্ষলতা ; পরিখার জলে শৈবালদাম । এই পরিখা মুসলমান দুর্গের পরিখার স্তায় প্রশস্ত নহে। দুর্গের নাম কি ছিল, তাহার জনশ্রুতি পর্যন্ত বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। হলকর্ষণ প্রভাবে প্রাচীরের নানাস্থান সমভূমিতে পরিণত হইতেছে। পশ্চিমে অনতিদূরে ভাগীরথী-পুৰ্ব্ব প্রাচীরের বাহিরে জলাভূমি—এই স্থানকে দুর্গরচনার উপযুক্ত বলিয়াই নির্দিষ্ট করিয়া থাকিবে । এই রাজদুর্গে হিন্দুবৌদ্ধের তুমুল সংঘর্ষ ;–ইহাতেই হিন্দু মুসলমানের প্রথম কলহ কোলাহল। সে দিন যে ধ্বংসলীলার আরম্ভ হইয়াছিল, তাহাতেই রাজদুর্গ কালক্রমে বিজনবনে পরিণত হইয়া থাকিবে । কিন্তু পাঠানশাসন সময়েও এই দুর্গ হয়ত ব্যবহৃত হইত। পাঠানের বঙ্গদেশে অtiসয় স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করায়, দিল্লীশ্বর বহুবার গৌড় আক্রমণ করেন । দিল্লীশ্বর কখন পরাভূত হহঁতেন, কখন বা সন্ধিবন্ধন করিতেন। এই সকল সন্ধি বিগ্রহের প্রসঙ্গে "একডাল দুর্গ” নামক একটি দুর্গের নাম ইতিহাসে লিখিত আছে । একডাল দুর্গ কোথায় ছিল, তাহা লইয়া নানা মতভেদ উপস্থিত হইয়াছে। কেহ পুৰ্ব্ববঙ্গে—কেই উত্তরবঙ্গে—তাহার স্থান নির্দেশ করিয়া থাকেন। সন্ধি বিগ্রহের ইতিহাস পাঠ করিলে, একডালাদুর্গ গৌড়ের নিকটেই অবস্থিত ছিল বলিয়া দেখিতে পাওয়া যায়। পৌণ্ডবৰ্দ্ধন হইতে একডাল আসিতে নদী পার হইতে হইত। সাগরদীঘির নিকটে “ডালখানা’ নামক একটি গ্রাম দেখতে পাওয়া যায়। অবস্থান দেখিলে মনে হয় পাঠান শাসন সময়ে সাগরদীঘির নিকটবৰ্ত্তী পুরাতন দুর্গ বিজন বনে পরিণত হইয়া থাকিলে এখানে “ঝুনঝুনিয়া মসজেদ” নিৰ্ম্মিত হইত না। এ অঞ্চল অবশুই জননিবাসে পুর্ণ ছিল।