পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S& 8 ছাড়িয়া দেয়. এ সমস্ত সত্ত্বেও এই দুই সভ্যতার কোন প্রকার দারুণ সংঘর্ষ উপস্থিত হয় নাই। বিজয়ীরা বুঝিয়াছিলেন, কালের উপর নির্ভর করাই সৰ্ব্বাপেক্ষা শ্রেয় । সাধারণতঃ দেশকে সভ্য করিবার দিকে র্তাহীদের বড় একটা চেষ্ট হয় নাই। দেশীয় সমাজেরও যেরূপ গঠন, দেশীয় সমাজ যেরূপ নমনশীল, উহার মধ্যে যেরূপ অসংখ্য বর্ণভেদ, তাহাতে করিয়াও দেশী সমাজ ইংরাজি সভ্যতার তোড় কতকটা আটকাইয়াছে—উহার ধাক্ক কতকটা সামলাইয়াছে । বস্তুতঃ ইংরাজ-শাসন অল্পই ধ্বংস করিতে পারিয়াছে এবং যাহা কিছু করিয়াছে তাহাও অজ্ঞাতসারে। ইংরাজ প্রকাতে আপনার কোন মত জহির করে নাই ; ইংরাজ একথা বলে নাই—“হয় ক্রুশ নয় মৃত্যু” ; ইংরাজ নিজ ধৰ্ম্মপ্রচারকদিগের কথা অগ্রাহ করিয়াছে ; ধৰ্ম্মান্ধত কিংবা ধৰ্ম্মোন্মত্ততার নিকট কোন সাহায্য গ্রহণ করে নাই। কিন্তু নদী যেমন অবিরাম প্রবাহিত হইয়া ধীরে ধীরে উহার পাড়কে ধসাইয় ফেলে, সেইরূপ ইংরাজি সভ্যতার প্রভাব, অল্পে অল্পে গৃঢ়ভাবে হিন্দুসমাজের উপর প্রকটিত হইতেছে । উহার জল চোয়াইয়া ক্রমশ মাটির ভিতরে প্রবেশ করিতেছে । সমাজভিত্তির কোন এক টুকরা স্খলিত হইয়া যদি একবার এই স্রোতের মুখে পড়ে, তাহার আর নিস্তার নাই । আমি পূৰ্ব্বে একস্থানে বলিয়াছি, সমাজ ও ধৰ্ম্ম এই উভয় লইয়াই ব্রাহ্মণ্য । সমগ্র ব্রাহ্মণ্য-সমাজ বর্ণভেদ প্রথার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই প্রত্যেক বর্ণ পরপ্রবেশরোধী ও গণ্ডীবদ্ধ। প্রত্যেক বর্ণসমাজ তদন্তভুত প্রত্যেক ব্যক্তির হইয়া চিস্ত করে, কাৰ্য্য করে ; তাহার ব্যক্তিত্বকে চাপিয়া রাখে, তাহাকে স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া কোন কাজ করিতে দেয় না, সমস্ত স্বাধীনতা হইতে তাহাকে বঞ্চিত করে । বর্ণভেদ প্রথাই যুরোপীয় সভ্যতার দুৰ্দ্দমনীয় প্রতিপক্ষ । প্রকাশু ও প্রচ্ছন্ন ভাবে এই প্রথার উপর প্রতিদিনই আক্রমণ চলিতেছে ; কেন না, বিলাতী ভাবের যাহা কিছু হিন্দুসমাজ গ্রহণ করিতেছে, তাছাই এই প্রথার বিরোধী। বর্ণভেদপ্রথা, বহুকাল ধরিয়া স্বীয় প্রতিরোধিনী শক্তির ও জীবনী শক্তির পরিচয় দিয়া আসিয়াছে। এই বর্ণভেদপ্রথাই বৌদ্ধধৰ্ম্মকে ভারত হইতে বিদূরিত করে। এমন প্রবাসী । [ १भ छांश কি, এই প্রথা, এ দেশের মুসলমানের স্বন্ধে—খৃষ্টানের স্বন্ধেও চাপিয়া বসিয়াছে। এই বর্ণভেদপ্রথা বিজেতদিগকেও নিরস্ত্র করিয়াছে, বড় বড় ধৰ্ম্মসংস্কারক যাহারা প্রথমে উহার বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইয়াছিল, আস্তে আস্তে তাহাদিগকেও আপনার দলে টানিয়া লইয়াছে । কেহ যদি উহাকে আঘাত করিতে উষ্ঠত হয় অমনি মুইয়া পড়ে ; তাহার পিছনে গিয়া লুকায় ও তাঁহাকে আত্মসাৎ কিম্বা বিনষ্ট করে । বিবাহ ও আহার এই দুই প্রধান বিষয়ের অনুশাসন লঙ্ঘন করা যে কি সাহসের কাজ তাহা যুরোপীয়দিগের ধারণাতেও আইসে না । একজন কুলীন ব্রাহ্মণ যদি কোন হীন পাত্রীর সহিত বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয় কিম্বা কোন বৈদ্য পতিত ব্রাহ্মণের সহিত একত্র বসিয়া আহার করে তাহা হইলে তার কলঙ্কের আর সীমা থাকে না। যে দুঃসাহসী এই অনুশাসন লঙ্ঘন করে সে তৎক্ষণাৎ সমাজচ্যুত হয় ; তাহার বৈষয়িক ও সামাজিক মানসন্ত্রম, তাহার সুখসম্পদ, তাহার ইষ্টদেবতা, তাহার জাতি-সমস্তই সে হারায় । কিন্তু ইহা সত্ত্বেও এইরূপ কলঙ্কঘটনা মধ্যে মধ্যে ঘটিয়া থাকে। এই বর্ণভেদ প্রথা প্রথম আঘাত প্রাপ্ত হয় সরকারী শিক্ষাপ্রণালী হইতে । এখন নিৰ্ব্বিশেষে সকল বর্ণের লোককেই শিক্ষা দেওয়া হয়। পূৰ্ব্বে বিষ্ঠা, শাস্ত্রত ও কাৰ্য্যত ব্রাহ্মণেরই একচেটিয়া ছিল,—ব্রাহ্মণের মানমর্য্যাদার একটা প্রধান অঙ্গ ছিল । একথা সত্য, যাহারা বিদ্যাশিক্ষা করে তাছাদের মধ্যে এখনো অধিকাংশই ব্রাহ্মণ । অন্ত জাতির লোকেরা যুরোপীয় শিক্ষার প্রতি বিমুখ ; এবং তাহার বিশেষ কারণও আছে । কিন্তু ইহা ত স্পষ্ট পড়িয়া আছে—যাহা সাধারণের । পক্ষে তেমন সুলভ নহে এরূপ উচ্চশিক্ষা প্রবৰ্ত্তিত না করিয়া, যাহা সাধারণের অর্থসাধ্য ও বুদ্ধির উপযোগী এরূপ প্রাথমিক শিক্ষা ও কেজো ধরণের শিক্ষা যদি বিস্তৃতভাবে প্রদত্ত হইত, তাহা হইলে যাহারা নবধৰ্ম্মে দীক্ষিত, যাহারা ব্রাহ্মণ্যের পরিত্যক্ত উপকণ্ঠে বাস করে, সেই ভাসন্ত জনসাধারণ, সেই নীচ শ্রেণীর লোক, সেই ‘পারিয়া”—তাহাদের মধ্যেও শিক্ষার প্রভাব পেটুতে পারিত। এক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা, শুধু কতকগুলি বাছা বাছা লোকের মাথাতেই দুই চারিট নুতন কথা ঢুকাইয়া দিয়াছে; এবং সেই কথাগুল তাহার বেশ পরিপাকও করিয়াছে। সেই কথাগুলি এইঃ