পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হয়, তদ্বিষয়ে তিনি কায়মনোবাক্যে এবং কার্য্যেও চেষ্টা করিতেন। এতদুদেখে তিনি “বিদেশী বর্জনে”র সম্পূর্ণ সমর্থন করিতেন । পঞ্জাবের শিক্ষিত-সম্প্রদায়ের উপর লাজপৎ রায়ের যে প্রভূত শক্তি ছিল, তাহা সকলেই স্বীকার করিয়া থাকেন। বঙ্গদেশের “বিদেশী-বর্জন” যাহাতে পঞ্জাবে প্রচারিত না হয়, সেই উদ্দেশ্রেই যদি লাজপৎ রায়কে নিৰ্ব্বাসিত ও পঞ্জাবের নেতৃবর্গকে কারারুদ্ধ করা হইয়৷ থাকে, তাহা হইলে, গবর্ণমেণ্ট যে মহা ভ্রম করিয়াছেন, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। এতদ্বারা গবর্ণমেণ্টের উদ্দেশু বিফল এবং প্রজাবর্গের উদ্দেশুই যে সম্পূর্ণরূপে সফল হইবে, তাহ বলা বাহুল্য। • প্রজাশক্তি যতষ্ট পদদলিত হইবে, ততই তাহা প্রবল হইবে । এই কারণে, আমরা লাজপৎ রায়ের নিৰ্ব্বাসন-ব্যাপারে গভর্ণমেণ্টের বিশেষ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় প্রাপ্ত হই নাই । গভর্ণমেণ্ট এতদ্বারা ভারতব্যাপী যে মহান অসন্তোষের স্বষ্টি করিয়াছেন, তাহ যে সহজে প্রশমিত হইবে, তাহার সম্ভাবনা নাই । লাজপৎ রায় যদি কোনও গুরুতর অপরাধ করিয়াছিলেন, তাহা হইলে, আদালতে তাহার বিচার করিয়া তাহাকে দণ্ডিত , করিলে, কেহই অসন্তুষ্ট হইতেন না। কিন্তু তাহার যে কি অপরাধ, তাহ কেহই জানিতে পারিল না । রুশ গভর্ণমেণ্ট যে উপায় অবলম্বন করিয়া রুমীয় প্রজাবর্গের নেতৃসমূহকে সাইবরিয়া প্রদেশে নিৰ্ব্বাসত করিয়া থাকেন, বুটিশ গভর্ণমেণ্টও ভারতে সেই উপায় অবলম্বন করিলেন, দেখিয়া আমরা একান্ত দুঃখিত হইয়াছি। যে সময়ে বিলাতে উদারনীতিক দলের প্রাধান্ত রহিয়াছে, জন মর্লির ন্যায় উদারমনা ব্যক্তি ভারতসচিবের পদে আরূঢ় রহিয়াছেন, লর্ড মিণ্টোর স্তায় রাজপুরুষ ভারতের বড়লাটের পদে প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছেন, সেই সময়ে এইরূপ অমুদার-নীতির প্রবর্তন করা যে কি ভয়ানক অবিবেচনার কার্য্য হইয়াছে, তাহা চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রেই বুঝিতে পরিবেন। আমরা বর্তমান সময়ে ইহার অধিক আর কিছুই বলিতে চাহি না। প্রজাশক্তিই যে রাজশক্তির প্রধান ভিত্তি, তাহা আমরা বারম্বার বলিয়া আসিতেছি। সুতরাং প্রজাশক্তিকে দলন করিবার চেষ্টা করিয়া গভর্ণমেণ্ট কেবল আত্ম-অমঙ্গলই সাধন করিতে ছেন । মাতৃপূজায় বলি। |టరీ আর লাজপৎ রায় ? তাহার কথা আর কি বলিব 7 আমরা প্রথমেই বলিয়াছি যে, তিনিই মাতৃপূজার প্রথম ও প্রধান বলি। সম্ভবতঃ, এই পূজায় এইরূপ বলিদান আরও অনেক হইবে। তজ্জন্ত স্বদেশ-সেবী মাত্রকেই প্রস্তুত থাকিতে হইবে । আজ পঞ্জাবে যাহা ঘটিল, কাল তাহা বঙ্গদেশে, পরশ্ব মাদ্রাজে এবং তৎপর দিন বোম্বাইয়েও ঘটতে পারে। জীবন না দিলে, জীবন-লাভ ঘটে না । যাহারা এই তত্ত্ব বুঝিয়াছেন, তাহার এইরূপ বলিদানের মাহাত্ম্য বুঝতে পারিবেন। লাজপৎ রায়কে যখন স্পেশি •য়াল টেনে দেশান্তরিত করিবার উদ্যোগ করা হয়, তখন তিনি কর্তৃপক্ষগণের অনুমতি লইয়া জনৈক বন্ধুকে এক পত্র লিখেন । সেই পত্রে তিনি লিথিয়াছেন ঃ—“IDon't be anxious about me. What God does, He does for the best.” অর্থাৎ “আমার জন্য চিন্তিত হইবেন না । ভগবান যাহা করেন, তাহা মঙ্গলের জন্যই করিয়া থাকেন।” তেজস্ব হৃদয়ের কি তেজস্বিতা দেখুন! বিপদের সময় কি অদ্ভূত ধৈৰ্য্য দেখুন ! স্বদেশের মঙ্গলসাধনে কি আত্মবিস্তৃতি দেখুন ! ধষ্ঠ, লাজপৎ রায়, ধন্ত তুমি ! তুমিষ্ট ভারতমাতার প্রকৃত ভক্ত সন্তান। এই কারণেই বুঝি সৰ্ব্বাগ্রে তোমারই বলিদান হইল।. তোমার ন্যায় মহাপুরুষের বলিদান ভিন্ন দেবতার প্রতি জন্মিবে কিরূপে ? তুমি, ভারতমাতার পবিত্র ক্রোড় হইতে বিচ্যুত হইলে বটে ; কিন্তু শত শত ভারতসন্তান তোমার স্থান অধিকার করিবার জন্য ব্যাকুল হইবে। তোমার নাম গৃহে গৃহে ধ্বনিত হইতে থাকিবে এবং ইতিহাসের পৃষ্ঠে তোমার নাম স্বর্ণক্ষরে লিখিত থাকিবে। যদিও সৰ্ব্ব সময়ে তোমার সহিত আমরা একমত হইতে পারি নাই, কিন্তু তথাপি তোমার শ্রদ্ধেয় চরিত্রে আমরা ভক্তিমান ছিলাম। তোমার এই বিপদকে আজ ভারতবাসী মাত্রেই আপনার বিপদ বলিয়া গণ্য করতেছে। তুমি আঞ্জ নিজ প্রাণ দিয়া ভারতবাসীর মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চারিত করিয়া গেলে । ধন্ত তুমি! ধন্ত তুমি! শ্ৰীঅবিনাশচন্দ্র দাস ।