পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৪, আমরা অনেকে স্বরাজ লাভের জন্য ব্যগ্র হইয়াছি । ইহা দোষের বিষয় নহে, বরং ভালই। এ বিষয়ে সৰ্ব্বদা সচেষ্ট থাকা আমাদের কৰ্ত্তব্য। কিন্তু এই সঙ্গে সঙ্গে আরও কতকগুলি কথা স্মরণ রাখা উচিত । যে সকল দেশে স্বরাজ প্রতিষ্ঠিত, সেই সকল দেশ কি স্বর্গে পরিণত হইয়াছে ? তাহদের কি আর কোন অসম্পূর্ণত ও অভাব নাই ? তাহ ত নহে । ঐ সকল দেশের লোকে জাতীয় চরিত্র উন্নত করিবার জন্ত, সামাজিক দুনীতি নিবারণ করিবার জন্ত, পানদোষাদি নিবারণ করিবার জন্ত, শিক্ষার বিস্তার ও উন্নততর শিক্ষা প্রণালী প্ৰবৰ্ত্তিত করিবার জন্ত, শিল্পবাণিজ্যে উচ্চস্থান লাভ করিবার জন্ত, এবং সৰ্ব্বোপরি বিশুদ্ধ ধৰ্ম্মলাভার্থ, সৰ্ব্বদা চেষ্টা করিতেছে। নানা বিদ্যায় পারদর্শিতালাভ ও মানবজ্ঞানভাণ্ডারে নূতন নূতন রত্নসঞ্চয়ের জন্য ঐ সকল দেশে কতই না যত্ন চলিতেছে! ধরুন, মাfকন দেশ । তথায় স্বরাজ প্রতিষ্ঠিত । কিন্তু সেখানে এখনও উচ্চ সরকারী কাজে ভয়ানক ঘুষ চলিতেছে, নানা প্রকার দুর্নীতি আছে, শ্বেতজাতি ও কৃষ্ণবর্ণ-নিগ্রোর বিদ্বেষবশতঃ সময়ে সময়ে ভীষণ হত্যাকাণ্ড ও অবিচার হইতেছে । এই সকল বিষয়ে ংস্কারের জন্য তথায় কত চেষ্ট হইতেছে । তদ্ভিন্ন আর যে সকল চেষ্টার কথা পূৰ্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে, সমুদয় চেষ্টাই সেখানে অনলসভাবে চলিতেছে । এইরূপ সমুদয় আত্মশাসক দেশেই নানা অসম্পূর্ণতা, অভাব ও নীতি থাকায় সৰ্ব্ব ত্রই উন্নতির চেষ্টা বহুমুখে খরবেগে প্রবাহিত হইতেছে । সুতরাং স্বরাজকে সৰ্ব্ব প্রকার ব্যাধির একমাত্র ও অমোঘ ঔষধ মনে করিয়া যদি আমরা “স্বরাজ,” “স্বরাজ” বলিয়া চীৎকার করি, তাহাতে কেবল নিবুদ্ধিতাই প্রকাশ পাইবে। স্বরাজ দেশে প্রতিষ্ঠিত হউক বা না হউক, থাক্ বা না থাক, আমাদের অন্ত কৰ্ত্তব্য বিস্তর আছে, এবং চিরকালই থাকিবে । গছে ফুল ফল ধরিলে বড় সুন্দর দেখায়, আমাদের খুব সুখ এবং উপকার হয়। কিন্তু ফুল ফল ধরিবার প্রবাসী। -- স্বরাজ ছাড়া আর কি চাই। [ ৭ম ভাগ । আগে কতকগুলা অসুন্দর, শ্রমসাধ্য” ও কষ্টকর কাজ করিতে হয়। যেমন মাটিতে চাষ ও সার দেওয়া, বীজ বোন, জল সেচন করা, ইত্যাদি। জাতীয় উন্নতি হইলে জাতীয় ঐশ্বৰ্য্যে ও শক্তিতে সকলেই মোহিত হয়। কিন্তু তাহার আগে কতকগুল গোড়ার কাজ করিতে হয় । তাহার মধ্যে একটা প্রধান কাজ, জনসাধারণের সাধারণ শিক্ষা, এবং কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য শিক্ষা। আর একটা প্রধান কাজ, এবং ইহাই সৰ্ব্বপ্রথম কাজ, জনসাধারণের পেট ভরিয়া থাইবার ব্যবস্থা ও সুস্থ সবলদেহ হইবার ব্যবস্থা। আর একটা কাজ, জাতির নানা শ্রেণীর মধ্যে ঐক্য স্থাপন, অহঙ্কার, অবজ্ঞা ও বিদ্বেষের ভাব দূরীকরণ। আর একটা কাজ, জাতীয় চরিত্রের উন্নতি সাধন । এইরূপ নানাবিধ গোড়ার কাজ আছে । এই কাজগুলি আমরা করিতেছি কি ? সুন্দর অট্টালিকা দেখিয়া সবাই মুগ্ধ হয়, কিন্তু উহা মাটির আঁধারে লুক্কায়িত অসুন্দর ভিত্তির উপর দাড়াইয় নিজ শোভা বিস্তার করে । সেইরূপ, জাতীয় উন্নতির গোড়ার কাজে হুজুগ নাই, বাহৰা নাই, উত্তেজনা নাই, কিন্তু উহাই প্রধান কাজ । অনেকে বলিবেন, আগে স্বরাজ হউক, তাহার পর এ সকল চেষ্টা করা যাইবে, স্বরাজ না হইলে এ সকল চেষ্টা ভাল করিয়া করা যায় না । আমরা স্বীকার করি যে স্বরাজ না থাকায় যথোচিত শিক্ষা বিস্তার হইতেছে না, শিল্পোন্নতি হইতেছে না, সরকার ইচ্ছা করিয়া জাতিতে জাতিতে ঝগড়া লাগাষ্টয়া দিতেছে, ইত্যাদি। কিন্তু অন্যদিকে ইহাও ঠিক যে স্বরাজ, নিজ পৌরুষেই হউক, বা রাজানুগ্রহেই হউক, লাভ করিতে হইলে পৰ্য্যাপ্তভোজনপুষ্ট মুস্থ সবল দেহ, জ্ঞানোন্নত তেজস্বী সাহসসম্পন্ন মন, সম্প্রদায়নিৰ্ব্বিশেষে স্বজাতিপ্রেমিক উদার হৃদয়, জনসাধারণ ও নারীর প্রতি ন্যায়কারী সমাজতন্ত্র, ইত্যাদি চাই। এ সকলের ব্যবস্থা আমরা করিতেছি কি ? তার পর, স্বরাজ পাইলেও তাহার রক্ষা কে করিবে ? এই ত পূৰ্ব্ববঙ্গে হিন্দু নিজের দেবমন্দির, দেবমূৰ্ত্তি, মাত৷ স্ত্রী-ভগিনী ও কস্তার সতীত্ব, রাখিতে পারিল না। কাগজে লম্বা লম্বা টেলিগ্রাম ও চিঠি পাঠাইয়া, তারস্বরে চীৎকার করিয়া কি আমরা স্বরাজ পাইৰ ও রাখিতে পারিব ? পূৰ্ব্ব