পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । ] লৌহচক্ৰ দোহুল্যমান করা হইল। অন্ধ পৃথ্বীরাজকে শব্দ মাত্র লক্ষ্য করিয়া নির্দিষ্ট একটিকে সাতটির মধ্য হষ্টতে নিৰ্ব্বাচন করিয়া বিদ্ধ করিতে হইবে । চাদের এ কৌশল বিশ্বাসঘাতকের প্রতিহিংসা লইবার জন্ত । চাদ ঘোরীকে বলিলেন পৃথ্বীরাজের লক্ষ্যবেধ সময়ে তিনি যেন উৎসাহবাক্যে তাহাকে উৎসাহিত করেন। পৃথ্বীরাজ মুক্তবন্ধন হইলেন, হাতে ধনুৰ্ব্বাণ পাইলেন । এমন সময় ঘোরীর উৎসাহবাক্য শুনিয়া সেই শব্দ লক্ষ্য করিয়া বাণমোচন করিলেন এবং ঘোরীকে বিদ্ধ করিয়া আপনার শব্দবেধ ক্ষমতার পরিচয় প্রদান ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিলেন । য়ুরোপীয় সাহিত্যেও অপূৰ্ব্ব লক্ষ্যবেধের পরিচয় পাওয়া যায়। স্কটের আইভানঙ্গে উপন্সাসে লক্সলি ছদ্মনামধারী সিংহসাহস রিচার্ডের অদ্ভূত লক্ষ্যবেধের বর্ণনা, উইলিয়ম টেলের বর্ণনা, ফরাশী ঔপন্যাসিক ডুমার মন্টিক্রিষ্টোর বন্দুকের গুলি চালাইয়া শক্তকাগজে সমান্তরালে ছিদ্র করার বর্ণনা অনেকেই পাঠ করিয়াছেন । অঙ্গুলি অনাহত রাখিয়া হস্তধৃত দুয়ানিতে লক্ষ্যবেধের বড়াই বাংলা উপন্যাসেও আছে। কোচিনের এক মাসিক পত্রিকায় স্থিরলক্ষ্য ভ্রাতৃগলের এক বর্ণনা প্রকাশিত হইয়াছিল। তাহারা পরম্পরাভিমুখ হইয়া দাড়াইয়া বন্দুক ছুড়িতেন, মধ্যপথে দুই বন্দুকের গুলি পরম্পরাহত হইয়া দক্ষিণবামে সরিয়া যাষ্টত । আমি গল্প শুনিয়াছি যে সাওতালের সূক্ষ্মস্থল নানাবিধ বাণ সাহায্যে একটা সমগ্র বঁাশ একেবারে চিরিয়া দ্বিধা করিয়া ফেলিতে পারে । - অধুনা এইরূপ অপূৰ্ব্ব শস্ত্রবিশারদ দুইটী পুরুষের পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। একজন রাণা সরতান সিংহ ও অপরজন ঐযুক্ত লঘুভাই কল্যাণজী শাহ। বহু আনন্দ ও গৌরবের কথা যে ইহঁীর উভয়েই ভারতীয়। রাণী সরতান সিংহ গত ডিসেম্বর মাসে কলিকাতায় গিয় পার্স কোরিন্থিয়ন থিয়েটারে বহুদিবস ধরিয়া তাহার অদ্ভুত লক্ষ্যবেধ কৌশল দেখাইয়াছিলেন। কিন্তু সে সময় কংগ্রেস, প্রদর্শনী ও থাষ্টনের ম্যাজিক সাধারণকে এমন নিযুক্ত রাখিয়াছিল যে এমন কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাপারও বহুলোকের অদৃষ্ট ও অশ্রত রছিয়া গিয়াছে। o রাণা সরতান সিংহ লীম্বড়ী'রাজৰংশ সস্থত। উদয়পুরের অদ্ভুত লক্ষ্যবেধ । , >సి রাণার সহিত মোগল সম্রাটের যুদ্ধ সময়ে ইহঁার এক পূৰ্ব্বপুরুষ সরতান সিংহ রাণাকে যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছিলেন । সেই সময় হইতে ইহাদের বংশ রাণ উপাধি প্রাপ্ত হইয়াছে। বর্তমান রাণা সরতান সিংহের পিতার নাম ভূপতি সিংহ । ইহার জন্ম ১৯২০ সংবৎ। অতএব তাহার বর্তমান বয়স ৪৪ বৎসর। ইহার কাক কেশরী সিংহ ইহাকে অত্যন্ত ভাল বাসিতেন, এবং দশ বৎসর বয়স হইতে ইহাকে বন্দুক চালনায় শিক্ষিত ও অভ্যস্ত করিতে আরম্ভ করেন । * শস্ত্রচালনায় পারদর্শিতা লাভে উজ্জ্ব্যক্ত করিবার জন্ত রামায়ণ মহাভারতের বীরত্ব-কথা সৰ্ব্বদা কীৰ্ত্তন করিয়া বালকের সম্মুথে অতি উচ্চ আদর্শ ধারণ করিয়াছিলেন । অভ্যাস বড় জিনিষ । অধ্যবসায়, অভ্যাস ও ঐকান্তিক সাধনার দ্বারা রাণ সরতান সিংহ অর্জুনকল্প শস্ত্রবিশারদ হইয়া উঠিয়াছেন। প্রভেদমাত্র ধনুৰ্ব্বাণ স্থলে বন্দুক ব্যবহার ; কালমাহাত্ম্যানুসারে তাহ উপযুক্তই হইয়াছে । তিনি অর্জুন তুল্য সব্যসাচী এবং ভয়ানক-বেধ, ইর্ষিকান্ত্র প্ররোগ, অদৃশুবেধ, চলল্লক্ষ্যবেধ, মৎস্তবেধ, শব্দবেধ করিতে সক্ষম । তিনি ৩০|৩৫ প্রকার প্রয়োগ দেখাইয়া থাকেন। এখানে অত্যদ্ভুত কয়েকটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদত্ত হইল । সব্যসাচী—ইনি বন্দুকের কুর্দ দক্ষিণস্কন্ধে, বামস্কন্ধে বা মধ্য বক্ষে রাখিয়া, দক্ষিণ বা বাম হস্তে বা পাদাঙ্গুষ্ঠ দ্বারা শুইয়া বসিয়া দাড়াইয়া শ্লোক পাঠ করিতে করিতে লক্ষ্য বিদ্ধ করিতে সক্ষম। অর্জুন দক্ষিণ ও বাম হাতে তুল্য ক্ষিপ্রকারিতার সহিত সহজভাবে বাণ চালনা করিতে পারিতেন, এ জন্তু,তাহার নাম সব্যসাচী হইয়াছিল। ইনি তদপেক্ষাও উচ্চতর ও নূতনতর আখ্যা পাইবার উপযুক্ত। ভয়ানক বেধ—রাণাজী আপন পুত্রের মস্তকের উপর নারিকেল রাখিয়া বিদ্ধ করেন । এইরূপ ভয়ানক অবস্থায় লক্ষ্য সন্ধান করিতেও তিনি কিছু মাত্র সময়ক্ষেপ করেন না; বন্দুক তুলিয়াই আওয়াজ করেন ও নারিকেল গুলিবিদ্ধ হইয়া চূর্ণ হইয়া যায়। ইহা বাস্তবিকই ভয়ানক। ইষিকাস্ত্র প্রয়োগ-কুপের মধ্যে ভাসমান শুষ্ক লেবুর পার্শ্বে জলে এমন কৌশলে তিৰ্য্যকভাবে গুলি মারেন যে গুলির বেগজনিত ধাক্কায় সেই শুষ্ক লেবু উৎক্ষিপ্ত হইয়