পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'సి' শাসনাধীন করেন। পশ্চিমে বেহার প্রদেশ সময়ে সময়ে মাত্র পাঠান রাজগণের অধিকারে আসিয়াছিল । ইহা লইয়া দিল্লীসম্রাটের সহিত বিবাদ ঘটে। উত্তরে কামতারাজ্য হোসেন শাহের সময়ে অধিকৃত হইয়াছিল সত্য, কিন্তু পার্শ্ববর্তী ভূভাগনিচয়ে কোচুবংশীয় রাজগণ বহুদিন যাবত স্বাধীনতা রক্ষা করিয়াছিল। পূৰ্ব্বভাগে ভূলুল্লা (বর্তমান নওয়াখালি) এবং চট্টগ্রামে মুসলমান, ত্রিপুরা এবং আরাকান রাজ্যের মধ্যে প্রায়শ বিবাদ চলিত । খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে শ্ৰীহট্ট মুসলমান অধিকারে যায় বটে, কিন্তু ত্রিপুর, কাছাড়, জয়স্তিয়া প্রভৃতি পার্শ্ববৰ্ত্তী প্রদেশে কখনও মুসলমানাধিকার বিস্তৃত হইতে পারে নাই। অতঃপর সোড়শ শতাব্দী ব্যাপিয়া মোগল ও পাঠানদিগের শক্তিসংঘর্ষ চলে । অস্থাপি পল্লীবাসীর ক্রীড়াপটে সেই মোগল-পাঠান প্রতিযোগিতার কাল্পনিক স্মৃতি অভিনীত হইয়া থাকে। কিন্তু অবশেষে মোগলবংশাবতংস আকবর শাহ রাজা মানসিংহের সাহায্যবলে পাঠানবল দমন করিয়া বঙ্গভূমি অধিকার করেন। এই সময়ে যশোহরভূমে অমিতবিক্রম প্রতাপদিত্য হিন্দুরাজ্য স্থাপন মানসে অশেষ চেষ্টা করিয়াছিলেন ; কিন্তু মানসিংহের বাহুবলে তাহ অকালে বিধ্বস্ত হয়। শাজাহানের রাজত্বকালে বঙ্গের আরও অনেক নূতন স্থান মোগল সম্রাটের অধীনতাভুক্ত হয় । বঙ্গের পূর্বভাগবত্তী চট্টগ্রাম ও আরাকানরাজের কবলমুক্ত হইয়া মোগলের অধিকারে গিয়াছিল। পরে যদিও কিছুকালের জন্য ইহা তাহাদের হস্তচু্যত হয়, কুটনীতিবিশারদ আওরঙ্গজেবের সময়ে কিন্তু স্থায়িরপে অধিকৃত হইয়াছিল (১)। পরে ইনি যখন সাম্রাজ্যবৃদ্ধি লালসায় উন্মত্তপ্রায় হইয়া দক্ষিণাপথ বিজয়ে প্রাণপণে লাগিলেন, তখন এ দিকে শোভাসিংহ, রহিম শাহ প্রভৃতি বিদ্রোহী হইয় প্রায় সমগ্র দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গ অধিকার করিয়া বসেন। মুবাদার ইব্রাহিম খাঁ নিতান্ত শাস্তপ্রকৃতির লোক ছিলেন । তদীয় স্থধ্বলতাবসরে ভূষণায় সীতারাম নামে জনৈক কায়স্থপ্রবর স্বাধীন হিন্দুরাজ্য সংস্থাপনের আয়োজন করেন। তিনি ( ১ ) কিন্তু চট্টগ্রামে বর্তমান মুসলমানদের অধিকাংশ বাণিজ্য ও অপরাপর কার্ধ্যোপলক্ষে স্বাগত জারবদিগের বংশধর। (A. s. B's J., р. 287). প্রবাসী । রীতিমত নিৰ্মা, নগর পত্তন ইত্যাদি করিয়াছিলেন। ৭ম ভাগ । ইব্রাহিম খাঁর সুযোগ্য পুত্র জবরদস্ত খাঁর শৌর্য্যবলে এবং নবীন সুলতান আজিমুখানের শঠতায় বিদ্রোহানল নিৰ্ব্বাপিত হইল বটে, কিন্তু সীতারামকে সহজে দমন করা গেল না । অনন্তর নবাব মুর্শদকুলীখার প্রবল প্রতাপে সীতারাম সপরিবারে ধৃত ও কারারুদ্ধ হন, এবং অতি নিষ্ঠুররূপে তদীয় জীবনদীপ নিৰ্ব্বাপিত হইয়াছিল। মহারাজা প্রতাপাদিত্যের পরে হিন্দু অভু্যদয়ে একমাত্র সীতারামের নামই উল্লেখযোগ্য। মোগলের অমিত প্রভূত্বেও হিন্দুসমাজ এই দুই স্বদেশহিতৈষীর পুণ্যস্মৃতি ভুলিতে পারে নাই, অস্থাপি তাহাদের নাম স্মরণে গৌরব অনুভব করিয়া থাকে । অতঃপর বাদশাহ পরিবারে গৃহবিবাদ অনেক গিয়াছে, কিন্তু হিন্দুদিগের সহিত আর কোনও সংঘটন ঘটে নাই। পরিশেষে ভারতের ভাগ্যবিপর্যায়ের কারণ পলাশীষড়যন্ত্রে হিন্দুমুসলমান উভয়েরই যোগ ছিল । তবে ইহা ঠিক যে, মুসলমানেরা হিন্দুদিগের উপর কেবল শাসন কর্তৃত্ব চালাইয়া ক্ষান্ত হন নাই, তাছার বিজিত রাজ্যে ধৰ্ম্মবিস্তারেও প্রয়াস পাইয়াছিলেন। যদিও ইংরাজ ঐতিহাসিকদিগের কপোল কল্পিত “মুসলমানদের এক হস্তে কৃপাণ—অপর হস্তে কোরাণ লইয়া কৃতাস্তের বেশে ধৰ্ম্মপ্রচার” কাহিনী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, কিন্তু জাহাদিগের ধৰ্ম্মবিস্তার প্রয়াস কখনই অস্বীকার করা যায় না। জনৈক মুসলমান গ্রন্থকার লিখিয়াছেন (১), “বাঙ্গলায় মুসলমানবিস্তার—আদিমনিবাসী হিন্দুগণ সামাজিক কঠোর বিধিব্যবস্থা অসহ বোধে ধৰ্ম্মাস্তর" গ্রহণ করিয়া যেরূপ পুষ্ট করিয়াছে, মোগলশোণিতে ততদূর হয় নাই ।” তাহার অবশিষ্ট উক্তির সারমর্ম এই – ১২০৩ খৃষ্টাব্দে বখতিয়ার খিলিজির আগমন হইতে ১৭৬৫ খৃষ্টাব্দে ইংরাজ কোম্পানি বাহাদুরের দেওয়ানী লাভ পৰ্য্যন্ত প্রায় সাৰ্দ্ধ পঞ্চশতাব্দীকাল ধরিয়া বাঙ্গল মুসলমান শাসনাধীন ছিল। র্তাহারা সৈয়দ, মোগল ও আফগানদিগকে রাজকৰ্ম্মচারী নিযুক্ত করিয়াছিলেন ; এবং পণ্ডিত ও (3) “The Origin of the Mohammada Big by Khondkar Fuzli Rubbee, Messrs. Thacker Spink & Co., Calcutta, 1895. -