পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । ] , অতি দক্ষ বলিয়া বিখ্যাত। এই দুই মহারাণীর পরস্পরের গুণের মধ্যে পার্থক্য থাকিলেও সম্রাট শিয়েন কেংএর জীবিত কালেই হউক, বা তাহার মৃত্যুর পর বালকসম্রাট টুংছির অভিভাবক রূপেই হউক, তাহদের মধ্যে পরস্পর অতি সদ্ভাব ছিল। সেই সদ্ভাবের কথনও ব্যতিক্রম হয় নাই । ১৮৮১ খৃঃ পূৰ্ব্ব প্রাসাদের মহারাণীর মৃত্যু হয়। বর্তমান মহারাণী গঙ্গর প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করিয়াছিলেন। বালক সম্রাট টুংচি সিংহাসনে আরোহণ করিবার সময় হইতে চীন সাম্রাজ্যে নানা বিপদ ও অশাস্তি চলিতেছে । ট পেইং বিদ্রোহের সময় ইউরোপীয় সৈঙ্গের আগমনে ভীত হইয়া সম্রাটু শিয়েন কেং পেকিং হইতে জেলে নামক স্থানে গমন করেন এবং তথায়ই র্তাহার মৃত্যু হয় । এই সময়ে চীনের বড় বিপদের সময় গিয়াছে। বিদেশী রাজগণের সহিত সদ্ভাব রক্ষা করা এবং সাম্রাজ্যের মঙ্গলামঙ্গল কেবল সমাট ও র্তাহার মন্ত্রিগণের উপর নির্ভর করিত। রাজধানী পেকিন হইতে স্থানান্তরিত হওয়ায়, বিদেশীকে ঘুণাকারী কতকগুলি রাজকৰ্ম্মচারী ঘোষণা করিল যে “আমরাই বালক সম্রাটের অভিভাবক- নিযুক্ত হইয়াছি।” যদি এই উভয় রাণী বালক সমাটের পক্ষ হইয়া এই রাজকৰ্ম্মচারীর দলে যোগ দিতেন, তাহা হইলে রাজ্যে ভয়ানক বিপদ ও অরাজকতা উপস্থিত হইত। কারণ এই বিদেশ-দ্বেষিগণ কখনই পেকিনস্থ বিদেশী রাজদূতগণের সঙ্গে এক মত হইয়া কার্য্য চালাইতে পারিত না । রাজ্যশাসনের ভার যাহাঁদের উপর পতিত হইয়াছে, তাহীদের পক্ষে এই পবিত্র আসলে উপবিষ্ট বালকসম্রাট ও র্তাহার অভিভাবক দুই মহারাণীর পক্ষ হইয়া যাহাতে রাজ্যের মঙ্গল হয় সেই চেষ্ট করিতে হইবে উভয় দলের প্রধান দলপতিগণ আসিয়া রাজদরবারে আপনাপন অভিপ্রায় জ্ঞাপন করিতে লাগিলেন। তখন বৰ্ত্তমান মহারাণী তুল্পবয়স্ক ছিলেন, রাজ্য সংক্রান্ত কছুষ্ট জানিতেন না বা বুঝিতেন না। রাজপুরীর বাহিরে ক কি ঘটনা ঘটিত তাহার সংবাদও রাথিতেন না। কিন্তু ঠাহার অসাধারণ বুদ্ধিশক্তি, ভালমন্দ বিচারের ক্ষমতা, ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে তিনি কিংকৰ্ত্তব্য, কোন দলের মত গ্রহণীয়, ঠাই তৎক্ষণাৎ বুঝিতে পারিলেন। তিনি বিদেশীদ্রাহীদিগকে ভৎসনা করিলেন এবং প্রিন্স ফুংএর পক্ষ সমর্থন পেকিন রাজ-পুরী । ২৩ করিলেন। তখন প্রিন্স ফুং চীনদেশে শাসন ও সমাজ সংস্কারের একজন প্রধান উদ্যোগী ছিলেন। কিন্তু ইনি বিদেশীদ্রোহী ছিলেন না । প্রিন্স ফুং প্রধান মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ইংরেজ ও ফরাসীগণের সঙ্গে সন্ধির প্রস্তাব করিলেন:। এই অল্পবয়স্ক মহারাণীর সর্বপ্রথম এই রাজনৈতিক বুদ্ধির পরিচয় সমস্ত রাজ্যমধ্যে প্রচারিত হওয়ায় তাহার যশঃ অত্যন্ত বৃদ্ধি পাইল এবং রাজ্যের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক নেতাগণ প্রকৃত পন্থী বুঝিতে পারিলেন। গ্রাও কাউন্সিলের মেম্বরগণ এবং রাজপরিবারের প্রিন্স বা কুমারগণ এই নবীন রাণীর বুদ্ধির ও ক্ষমতার পরিচয় পাইয়া মুখে ও দুঃখে আজীবন তাহার পক্ষ সমর্থন করিয়া আসিতেছেন। প্রকৃতপক্ষে ইনি বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে তাহার অমাত্যবর্গ ও পারিষদগণের সঙ্গে একযোগে কাৰ্য্য করিলে সাম্রাজ্যের কি শুভ ফল হয় ও কি করিয়া কাৰ্য্য করিতে হয় । এই দুই মহারাণী অসামান্ত রাজনৈতিক বুদ্ধি ও শাসন কার্য্যে দক্ষত দ্বারা বালক টুংছিকে নিরাপদে রক্ষা করিয়া দ্বাদশ বর্ষাধিক কাল রাজ্যের শাসনদণ্ড পরিচালন করিয়া যখন টুংছি অষ্টাদশ বর্ষে উপনীত হইয়া বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেন, তখন তাহার হস্তে রাজ্যের ভার দিয়া নিজের অবসর গ্রহণ করিলেন । এই কাল মধ্যে রাজ্যে শাস্তি স্থাপিত হইয়া রাজ্যের অবস্থা অপেক্ষাকৃত উন্নত হইয়াছিল। কিন্তু এই দুই রাণীর ভাগ্যে অধিক দিন অবসর ঘটিল না । সম্রাট টুংছি রাজ্যভার গ্রহণ করিয়া তাহার দুই বৎসর পরেই অর্থাৎ বিংশ বৎসর বয়সে পঞ্চতৃপ্রাপ্ত হইলেন । এই সাংঘাতিকÆ পশ্চিম প্রাসাদের বর্তমান বৃদ্ধারাণী প্রাণে বজ্রস আঘাত পাইলেন এবং শোকে মিয়মান হইলেন ; কিন্তু অল্পকাল শোকদুঃখে মগ্ন থাকিয়া পুনরায় রাজ্যশাসনের ভার নিজহস্তে লইলেন । রাজমাতাদ্বয় বর্তমান সমাট কোয়াংশিকে পাচ বৎসর বয়ক্রম কালে সিংহাসনে বসাইয়া পুনরায় এই বালক সম্রাটকে রাজ্যশাসনের উপযোগী করিবার জন্য কাৰ্য্য আরম্ভ করিলেন। পূৰ্ব্বে উল্লেখ করা হইয়াছে যে বর্তমান সম্রাট বর্তমান মহারাণীর দেবর ও ভগ্নীপুত্র। বর্তমান সম্রাজ্ঞী রাজ্যশাসনের ভার লওয়া অবধি