পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ネや হইয়া কুকুমাষ্ট্রলিপ্ত রমণীহস্তসঙ্কেতের মত সবিলাস লীলাসহকারে নাগরিকদিগকে উৎসবমেলায় হাহান করিতেছে। ধারাযন্ত্রে শীতল সলিল উৰ্দ্ধোৎক্ষিপ্ত হইয়া ছড়াইয়া পড়িতেছে ; শৃঙ্গারক যন্ত্রে ধরাতল সুগন্ধি সলিলাবসিক্ত করা হইয়াছে । রাজ্যের যাবতীয় অভিজাত মহিলা মদনমহোৎসবে আনন্দ করিতে একত্র হইয়াছে । কুসুম্ভকুমমরঞ্জিত, কালাগুরুগন্ধামোদতবসনপরিহিত হইয়া, মুখে শুভ্রলোএরেণু মাখিয়া, গণ্ডে, বক্ষে কুস্কুমচন্দনের বিচিত্র কারুচিত্রিত পত্ৰলেখা রচনা করিয়া, পুষ্প প্রসাধনভূয়িষ্ঠ মহিলারা ভূবণশিঞ্জনে পুষ্পৎপদ্মপরাগরঞ্জিতবপু ভ্রমরদলের মত কাননটিকে মধুর নিকণ-নন্দিত করিয়া দলে দলে ছায়াশীতল নদীতটে বা ধারাযন্ত্রের সান্নিধ্যে শীকরশীতল বায়ু সেবন করিয়া ফিরিতেছে । ক্রীড়া-শৈলের পদমূলে কেহ নাচিতেছে, কেহ বা দ্বিপদীথও বা চর্চর রাগিণীতে মদনমনোহরের স্তুতি গান করিতেছে। বেণুবীণার মধুর সঙ্গীতে কেহ বা সমগ্র কানন পুর্ণ করিয়া তুলিয়াছে। স্বয়ং রাণী ত্রপিষ্ঠ শুকপক্ষচ্ছবি বসন ও পুষ্পকাঞ্চি, পুষ্পমেখলা, পুষ্পহার, কেয়ুর, বলয়, নুপুর পরিয়া, বর্ণে, গন্ধে বিচিত্র হইয়া ফুলরাণীর মত অশোকবকুলের দোহদ সংস্কার করিতে আসিয়াছেন । শত-সখী-সঙ্গে আজ তিনি উৎসবমত্তা। সখীদের কাহারো কর্ণে কণিকার, কাহারে শিরীষ, কাহারে চুতমঞ্জরী ; সকলের হস্তে লীলকমল ; বিবিধ বর্ণরঞ্জিত গন্ধামুলিপ্ত চলচেলাঞ্চলে হংসমিথুন অঙ্কিত। বর্ণগন্ধগানে আনন্দোৎফুল্ল মকরন্দোন্তানে প্রসক্তভৃঙ্গাবলি, অলিপ্তামণিতোদরী, পল্লবরাগছুরিত ঘনচ্ছায়, কৃতদেহদ অশোকতরুমুলে তিনটি মহিলা বসিয়া কথাপকথন করিতেছিল। সৰ্ব্বাঙ্গে তাহদের অশোকের দাপ্ত লিমা ও বকুলের মৃদু গন্ধ জড়াইয়া জড়াইয়া ধরিতেছিল। ইহার মাধবিক মালবিক ও বাসন্তকা ;– সকলেই ধনীর পত্নী। মাধবিকা বৃদ্ধিজীবী মণিভদ্রের, মালবিক ভ্ৰষ্টচরিত্র নন্দকের এবং বাসস্তিক তরুণভাৰ্য্যার চরিত্রসন্ধিগ্ধ বৃদ্ধ নৃসোমের পত্নী। ইহারা উৎসবশ্রাস্ত হইয়া অশোককুঞ্জে নবোদগত-গুামশম্পশয্যায় বসিয়া আপনাদের সুখদুঃখের কাহিনী বিবৃত করিয়া চিত্তভার লঘু করিতেছিল। কথাবার্তার মধ্যে তির্যাগাবৰ্ত্তিত-কন্ধর বাসস্তিক সহসা বলিয়৷ প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । উঠিল “দেখ সখি, দেখ, কৃতদেহদ অশোকমূলে কি একটা জলিতেছে।” অপর সর্থীদ্বয় তাহার নির্দেশানুসারে সেই দিকে দেখিল । মালবিক বলিল, “হলা, ওটা বোধ হয় কাগরে স্বলিত রল্লাভরণ হল সখি মাধবিক, তুই কি বলিস ?’ মাধবিকা কিছু বলিল না, উঠিয়া গিয়া বক্ষ্যমাণ বস্তু উঠাইয়া লইল । শল্পসংছাদিত বস্তু প্রকাশিত হইয়া দৃষ্টিগোচর হইলে সকলে সবিস্ময়ে দেখিল উহা একখানি মণিমঞ্জীর । মঞ্জীরমাণিক্যময়ুৰ্থমঞ্জরীসৌন্দর্ষ্যমুগ্ধ মহিলাত্রয় উহ! পাইবার জন্ত ব্যাকুল হইল। ভূষণপ্রিয়তা রমণীর সাধারণ স্বভাব। বাসস্তিক বলিল ‘আমি উহা প্রথম দেখিয়াছি, উহা অামার, আমায় দেও।' মালবিক বলিল, “বাঃ, তা কেন ? আমিই প্রথম উহ্য রত্নাভরণ বলিয়া চিনিতে পারিয়াছি; উহা আমার প্রাপ্য, আমায় দেও।' মাধবিক কহিল, 'ইঙ্গ কাহারে নহে, আমার। আমি ইঙ্গা সৰ্ব্বপ্রথম হস্তগত করিয়াছি ; আমি ইহা কাহাকেও দিব না। ক্রমশ বিতণ্ড উষ্ণতর হইতে লাগিল কিন্তু সমস্ত মামাংসিত হইবার কোনই লক্ষণ দেখা গেল না । তখন মাধবিকা কহিল, “বিবাদে মীমাংসা অসম্ভব। নিঃস্বাৰ্থ ব্যক্তির মধ্যস্থত ভিন্ন এ বিবাদ মীমাংসিত হইবে না। ঐ রাণী ত্রপিষ্ঠ এ দিকে আসিতেছেন। এস, তাহীরই উপর বিচারের ভার দেওয়া যাক ৷” এই সাধুপ্রস্তাবে সকলে সস্তুষ্ট ও সম্মত হইল। তাহারা রাণার নিকটে গিয়া সসন্ত্রম অভিবাদন করিয়া ঘটনা বিবৃত করিয়া বিচার প্রার্থনা করিল। ঈষৎ-স্মিত-ক্ষালিত-স্বকভাগ রাণী উদগত প্রবালকাস্তিকরপল্লবে মণিমঞ্জীর খানি গ্রহণ করিয়া বলিলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় মীমাংসা অসম্ভব। এই পণ নির্দিষ্ট হৌক,—যে আপনার স্বামীকে যথেষ্ট পরিহাস করিয়া তাহার চরিত্রগত বিশেষ দোষ সংশোধন করিতে পরিবে, এই মণিমঞ্জীর তাহারই হইবে । সকলে সম্মত হইয়া গৃহে ফিরিয়া গেল। এবং কি উপায়ে স্বামীকে পরিহাস করা যাইতে পারে, ইহার চিন্তায় তাহদের মস্তিষ্ক সন্ধুক্ষিত হইয়া উঠিল । মাধবিকার চেষ্ট । - কেকয় রাজ্যের প্রধান জ্যোতিষী কঙ্কটভট্ট মাধবিকার প্রতিবেশী ছিল। মাধবিকা তাহার সাহায্য-গ্ৰহণ উপযুক্ত মনে করিয়া, তাহাকে সূকল কথা জানাইয়া বুদ্ধি ও পরামর্শ