পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা I.] . - ਬਆ । গৃহাভিমুখেই চলিল। পথে নৈশবিহার প্রস্থিত নন্দকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। পথে মৃতশ্রুতি মণিভদ্রকে দেখিয়া দোহাই মণিভদ্র, ভূত হইয়া আমায় দেখা দিও না ; আমায় ক্ষমা কর ; তোমার ঋণ আমি হয় তোমার স্ত্রীকে দিয়া, না হয় গয়াক্ষেত্রে তোমায় পিণ্ড দিয়া পরিশোধ করিব?—বলিতে বলিতে দৌড়িয়া পুনরায় গৃহাভিমুখে প্রস্থান করিল। অশুভদশী নন্দক সে রজনীতে রভসোৎসবে যাইতে বাধা পাইয়া বড় ক্ষুন্ন হষ্টল । মণিভদ্র অধিকতর হতবুদ্ধি হইয়া আপনার গৃহাভিমুখে চলিল। তাহার মস্তিষ্ক স্বত্রহীরা চিন্তাবৰ্ত্তে ঘূর্ণ্যমান হইতেছিল । সে ভাবিতে লাগিল— ‘হায়, কোন দুলক্ষ্য সূত্র ধরিয়া কোন অত্যহিত আসিয়া উপস্থিত হইল ? আমি কি সত্যই মৃত ? একজন না হয় দু’জন মিথ্যা বলিতে পারে ; কিন্তু আমার পরিচিত সকলে এবং অপরিচিত অনেকে আমাকে দেখিয়া পলায়নপর হইতেছে কেন ? তবে কি আমি ভূত হইয়াছি ? যাহারা পলাইতেছে তাহদের নিকট আমি সপ্রকাশ, এবং যাহায় পলাইতেছে না তাম্রাদের নিকট আমি বোধহয় অদৃশু থাকিতেছি। তবে আমি নিশ্চয় মৃত, নিশ্চয় ভূত! কাল সেই নরকের জালাময়, পূতিগন্ধময়, ঘরে ছিলাম ; আজ কি বেড়াইবায় ছুটি পাইয়াছি, না, আমি পাঠশালা-পালান ছেলের মত পলাইয়া আসিয়াছি। ও; সেই বহ্নিকশা ! মনে করিতে গা শিহরিয়া উঠিতেছে। যাক সে চিন্তা । যে রকমেই হোক যখন পৃথিবীতে আসিয়াছি, একবায় বাড়ীটা দেখিয়া যাইতে হইবে।” বুদ্ধিস্রষ্ট মণিভদ্র আপনার গৃহে আসিয়া দেখিল, গৃহদ্বারে জলপূর্ণ মৃৎকলুস, অগ্নি, গোময়, নিম্বপত্র প্রভৃতি সদ্য মৃত্যুচিহ্ন সকল রহিয়াছে । তখন সে ভাবিতে লাগিল,—“কে আমি ? কোথায় আমি ছু কি অবস্থায় আছি ? জীবিত না মৃত ? এই ত’ আমার স্থল দেহ স্পর্শ করিতেছি, এই ত খাস প্রশ্বাস, হৃৎস্পন্ন অনুভব করিতেছি, এই ত’ নখপীড়নে ব্যথা বোধ করিতেছি। প্রেতাবস্থায়ও কি এই সব অনুভূতি থাকে ? আমি ত’ আপনাতে আপনি কোন পরিবর্তন বুঝিতে পারিতেছি না, কিন্তু বাহিরে তা যথেষ্ট পরিবর্তন দেখিতেছি। এই ত’ আমার ময়ূরপ্তকচিহ্নিত মণিমঞ্জীর । ་ ཅི་ཆེ. গৃহ । কিন্তু এ গৃহে মরিল কে ? আমি ? কবে ? কখন ? আমি কি আমার প্রেতাত্মা ? আমি এই পৃথিবীর জন । সমাজের কেহ নহি ? আমি যদি কায়া নহি, ছায় ; আমি ' যদি মানুষ নহি, প্রেত ; তবে আবার আমি ভয়ক্সপে, অকল্যাণরূপে মামুযের মধ্যে কেন ? মৃত্যুর কৃষ্ণকঠিন প্রাচীর যদি আমাকে জীবিতলোকের সহিত সম্পর্কবিরহিত করিয়াছে, তবে বুঝিতে পারি না কোন পাপে যমদূতগুলা আমাকে সংসারের মাঝখানে ছাড়িয়া দিয়া গেল ? প্ৰেতলোক কোথায়, কোন পথে ? আমাকে সেখানে কে লইয়া যাইবে, সেখানে আমায় একটু স্থান দিয়া কে নিশ্চিন্ত করিবে ? জীবরাজ্য হইতে নিৰ্ব্বাসিত, প্রেতলোক হইতেও বিতাড়িত, ত্রিশঙ্কুর মত আমার একটুকু স্থান কি কোথাও নাই ?” এইরূপ অনন্ত প্রশ্নে, অবিশ্রাম চিন্তায় মণিভদ্র ক্লান্ত হইয়া যন্ত্রচালিতের মত রুদ্ধ দ্বারে আঘাত করিল। গৃহমধ্যে মঞ্জলিকার কাংস্তকণ্ঠ ঝঙ্কার দিয়া উঠিল—“আমর, কেরে মিন্‌সে, চোথের মাথা থেয়ে সন্ধোবেল বিরক্ত করতে এলি ? দেখছি না গৃহে অশৌচচিহ্ন ; আমার প্রভু বৃদ্ধিজীবী মণিভদ্র সদ্য প্রাণত্যাগ করেছেন, কী ঠাকুরাণী, শোকে মূৰ্ছিতা ; বেরো বেরো,দূর হী, বিরক্ত করিস নে ৷” এই বাক্যে অধিকতর অস্থির হষ্টয়া ভয়প্রকম্পহন্তে স্বারে আর বার আঘাত করিয়া বলিল মঞ্জুলিকে—একবার দ্বার খোল, একবার তোমাদের দেখিয়া যাই। এবার প্রেতলোকে গেলে পুনরায় পৃথিবী পর্যটনের ছুটি নাও পাইতে পারি।” “তুই কে ষ্ট্রে নিন, দাড়া ত’ সম্মার্জনী সম্বৰ্দ্ধনা করি।” বলিয়া খুলিয়াই মণিভদ্রকে দেখিয়াই বিকট চীৎকার করিয়া ভূতলে পতিত হইল। সেই চীৎকার ও পতন শব্দে আকৃষ্ট হইয়া সদ্য বিধবাবেশী শরীরিনী শোকমূৰ্ত্তির মত মাধবিকা উপস্থিত হইল। সেও মণিভদ্রকে দেখিবামাত্র মুর্ভূিত হইয়া পড়িল । ক্লান্ত মণিভদ্রের মনে আর দ্বিধা সংশয় রহিল না । ‘তবে আমি নিশ্চয় মৃত, আমি আমার প্রেতাত্মা, আমি ভয়ঙ্কর, আমি অমঙ্গল!’ বলিয়া ক্ষুধাউদ্বেগ-ক্লাস্তি-ভয়োদ্বেজিত মণিভদ্রও মূৰ্ছিত হইয়া পড়িয়া গেল। "