পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీర তাহাকে পড়িতে দেখিয়াই মাধবিক ও মঞ্জলিকা ঝটিতে ঠিয়া দাড়াইল এবং পরিচারিকাগণ সাহায্যে তাহাকে উঠাইয়া, তাহার উত্তরীয় ও অঙ্গরক্ষা উন্মোচন করিয়া শয্যায় শায়িত করিয়া দিল । বৈদ্য চক্রদত্ত তাহাকে পরীক্ষা করিয়া বলিল, মূৰ্চ্চা ভঙ্গ হইয়াছে, সে এক্ষণে নিদ্রাগত। মাধবিক বিধবাবেশ পরিত্যাগ করিয়া প্রসাধনসজ্জিত হইয়া স্বামীব পাশ্বে শয়ান হষ্টল। গৃহের অশৌচচিহ্ন সকল মঞ্জুলিক অপস্তত করিল। মণি ভদ্র সেই শ্রাস্তিগাঢ় নিদ্রাবস্থাতেও কতবিধ স্বপ্ন দেখিল । স্বপ্নে সে কতবার মরিল, বাচিল, আবার মরিল। কতবার নরকে গেল, কতবার স্বর্গের আলো দেথিল ৷ ” রাত্রি প্রভাত হইলে মাধবিক স্বামীকে বেশ একটু নাড়া দিয়া বলিল উঠ উঠ হৃৎপিণ্ডেশ্বর, উঠ। আর কত ঘুমাইবে।” চকিত তন্দ্রবিজড়িতচক্ষু মণিভদ্র ভূযণভূয়িষ্ট প্রসাধনসজ্জিত মাধবিকার দিকে চাহিয়া বলিল, “একি প্রিয়তমে, তুমি এখানে ? আমি কাল যখন পৃথিবী পয্যটনের ছুটি পাইয়াছিলাম তখন তোমাকে একবার দেখিবার বড় সাধ হইয়াছিল । আমি যেই তোমাকে দেখা দিলাম অমনি তুমি ভয়ে মূৰ্চিত হইয়া পড়িলে। প্রেত ও মনুষের মধ্যে সকল প্রতি-সম্বন্ধ লুপ্ত হইয়া এতথানি ভয়ের সম্বন্ধ স্থাপিত হয় । পৃথিবীতে জীবিত কালে আমিই তোমাকে ভয় করিতাম, আর আমি যেই মৃত্যুর ব্যবধান অতিক্রম করিয়া প্রেত হইলাম অমনি তুমি আমার ভয়ে মুষ্ঠিত হইয়া পড়িলে ! সেই মূৰ্চ্চাতেই কি তোমার মৃত্যু হইয়াছিল ? এবং আমি প্রেতলোকে আসিতে না । আসিতে তুমিও আসিয়া হাজির! এমন বিবিধ ভোগ্যবিষয়টুরিষ্ঠগৃহে তুমি এমন প্রসাধনসজ্জিত। কাল কি প্রেতলোকে আমাদের ‘বাসর রাত্রি’ গিয়াছে ? এখানেও কি ঘরকরণ করা যায় ? এ কি নরক না স্বৰ্গ ? আচ্ছ, আমি কবে কথন কি রোগে মরিয়াছিলাম ? মাধবিক শুনিয়া হাসিয়া বলিল, “এত নাগরালি, রসিকতা.কোথায় শিখিলে ? এখন রঙ্গ রাখ ; বেলা হইল ; কার্য্যে যাইবে না ?” আশ্চৰ্য্যাম্বিত মণিভদ্র চক্ষুমার্জন করিয়া আপনার | न' | | ৭ম ভাগ । শয়ন প্রকোষ্ঠ চিনিল, এবং বলিল, “একি ? তবে কি আমি মৃত নই ? সশরীরে জীবিত ? কাল যে আমি মরিয়া গিয়াছিলাম ?’ মাধবিক কোপ প্রকাশ করিয়া কহিল, “এ আবার কি অমঙ্গল কথা এই প্রভাত কালে ? রাম নাম করিয়া উঠ, যাও কার্য্যে যাও। বালাই, তুমি মরিবে কেন ? শক্ৰ মরুক ।” মণি ভদ্র মাধবিকার মুথে রাম নাম শুনিয়া কিছু আশ্বস্ত হইয়া বলিল, “তুমি যাই বল প্রেয়সি, আমি অৰ্দ্ধদও পূৰ্ব্বে মৃতই ছিলাম। কঙ্কটভট্টের গণনা এবং চক্রদত্তের নাড়ীজ্ঞান কথন ব্যর্থ হইবার নহে। হয় তুমি সাবিত্রীর মত আমাকে যমরাজার কাছ হষ্টতে ফিরাইয়া লইয়াছ, নয় তুমি ৪ মৃত, কিন্তু টাটক পরিবর্তন বলিয়া চিরাভ্যস্ত জীবিত জ্ঞান তুমি এখনো ত্যাগ করিতে পার নাই। একটু পরেই প্রেত জীবনে অভ্যস্ত হইয় উঠবে ; আমারে প্রথম প্রথম অমনি বাধো বাধো ঠেকিয়াছিল। জীবলোক ও প্ৰেতলোকের মধ্যে মরণ মাত্র ব্যবধান বৈত' নয়!’ মাধবিকা কোপম্ফরিতাধর প্রদর্শন করিয়া বলিল, ‘কথা শুনিলে অঙ্গ জলিয়া যায় ! পাগল বা মদ্যপ হইয়াছ ? এখন উঠ গে উঠ, অধমর্ণের ঋণ পরিশোধ ও গ্রহণের জন্ত অপেক্ষা করিতেছে।” মণিভদ্র বিস্মিত হইয়া বলিল, ‘প্রেত-লোকেও ঋণের কারবার আছে না কি ? কিন্তু সে ব্যবসায় আমি আর করিতেছি না ; এখানকার মুদ্র জলন্ত অগ্নিখণ্ড !" মাধবিকা অতিমাত্র বিরক্তির ভাব প্রকাশ করিয়া ডাকিল, ‘মঞ্জুলিকে, তুই কায়স্থকে এখানে পাঠাইয়া দিয়া জ্যোতিষী ও বৈদ্য-রাজকে ডাকিয়া লইয়া আয়; আমার স্বামীর মস্তিষ্ক বিরুতি ঘটিয়াছে।’ বেচারা মণিভদ্র অনেক কষ্টে মরিয়া একরূপ নিশ্চিন্ত হইতেছিল ; কিন্তু আবার জীবনের ক্রীড়া আরম্ভ দেখিয়া সে স্থির করিতে পারিতেছিল না যে, কোন অবস্থাটা প্রকৃত। বহুকাল জীবন্ত থাকিয়া থাকিয়া জীবনটাই তাহার অভ্যাস ও সহ হইয়া গিয়াছিল ; মধ্যে মৃত্যু আসিয়া তাহার চিরাভ্যাসটাকে কিছু বিপৰ্য্যস্ত করিয়া তুলিলেও, সে ক্রমে আবার , মরণেই অভ্যস্ত হইয়া উঠিতেছিল ; কিন্তু পুনরায় ফিরিয়া