পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা। ] . নিপীড়িত হইয়া সংস্কারভারাক্রান্ত যুবক মেডিক্যাল কলেজ ছাড়িলেন এবং শিক্ষকতা কাৰ্য্যে ব্ৰতী হইলেন। জীবনে এ ব্রত আর পরিত্যাগ করেন নাই। এই অবস্থাতেই ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে তিনি বি,এ, পাশ করিয়া সংসারক্ষেত্রে বিচরণের পথ কথঞ্চিৎ সুগম করিয়া লইলেন। ইহার পর হিন্দু স্কুল, কোন্নগর হাই ইংলিস স্কুল, বেথুন কলেজ এবং হরিনাভির ইংরাজী স্কুল, যখন যেখানে কাজ করিয়াছেন ਾਂ সকলের প্রীতি ও শ্রদ্ধাভাজন হইয়াছেন । হরিনাভি স্কুলে থাকিতে থাকিতে র্তাহার প্রকৃভি সৰ্ব্বতোমূখী হইয়া ফুটিয়া উঠিল । কৰ্ম্মক্ষেত্রেই মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় । এতদিন উমেশচন্দ্র জীবনের উপাদান সংগ্রহে ব্যাপৃত ছিলেন। এইজন্ত অমুকুল এবং প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে র্তাহার নিশ্বাস ফেলিবার অবকাশ ছিল না। একদিকে যেমন জ্ঞানার্জনের জন্য সকল প্রকার ক্লেশ দুঃখ বাধা বিয়ের মধ্যে পড়িয়া ঘোরতর সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন, আর একদিকে ধৰ্ম্মকে জীবনের বস্তু করিবার জন্ত ঘোরতর সাধনার নিরত হইয়াছিলেন। পরলোকগত বাবু অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয়ের গ্রন্থাবলীই নাকি তাহার মনোরাজ্যে সত্য ন্যায় মঙ্গলের মহম্ভাব সমূহ সঞ্চারিত করিয়াছিল। ক্রমে তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সহিত যুক্ত হইয়া পড়িলেন। ইতিপূৰ্ব্বেই তিনি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়িয়াছিলেন, সুতরাং ধৰ্ম্মানুশীলনে ও ধৰ্ম্মসাধনার অধিকতর নিবিষ্টচিত্ত হইলেন। তিনি ধৰ্ম্মকে জীবন হইতে স্বতন্ত্র বস্তু বলিয়া বুঝিতেন না, তাই যাহা কিছু সত্য স্থায় ও মঙ্গল বলিয়া জানিতেন, তাহাই জীবনে পরিণত করিবার জন্ত ব্যগ্র হইয়া উঠিতেন। পরলোকগত ব্ৰহ্মানন্ম কেশবচন্দ্র সেন প্রভৃতি ব্যাকুলচিত্ত উৎসাহী যুবকদিগের আসঙ্গ আরও তাহাকে অনুরাগী করিয়া তুলিল। জ্ঞান ভক্তি এবং কৰ্ম্ম মধুরভাবে তাহার জীবনে একান্ত সন্মিলিত হইতে লাগিল। এই সামঞ্জস্তের ফলস্বরূপ তিনি বিশ্বাসামুরূপ ব্ৰাহ্মমতে বিবাহ করিবার জন্ত প্রস্তুত হইলেন। এই সময়ে তাহার বয়স ২৫ বৎসর এবং তাছার স্ত্রীর বয়স নয় বৎসর মাজ পণ্ডিত হেমচন্তু বিস্কারত্ন মহর্ষি দেবেন্ত্রনাথের পদ্ধতি অনুসারে আচাৰ্য্যের কার্য্য সম্পন্ন করেন । গুহা আমীৰশ্বজন ও গ্রামের প্রতিবেশী মণ্ডলী এ সময় উমেশচন্দ্র দত্ত । Ջե::» যে কেবল নিদ্রিত ছিলেন তাহা নহে। তাহার মৃত ছিলেন না। তাহারাও আপনাদের বিশ্বাস মত উমেশচন্দ্রকে তাহার অধ্যবসায় হইতে নিবৃত্ত রাখিবার বিশিষ্ট চেষ্টা করিতে লাগিলেন । ইহাতে তখনকার সমাজ এযং তাহার নিগ্ৰহভাজন, কেহই মৃত ছিলেন না, ইহারই প্রমাণ পাওয়া যায় এবং উভয়েরই প্রতি শ্রদ্ধা না হইয়া যাইতে পারে না। উমেশচন্দ্র বিনয় ধৈর্য্য সহিষ্ণুতাযোগে একে একে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে লাগিলেন । যখন তাহার পিতামহীর মৃত্যু হইল, তখন গ্রামের ক্ষমতাশালী পুরুষগণ দোকানদারদিগকে বারণ করিয়া দিলেন, যেন কেহ বিধৰ্ম্মীদিগের নিকট মৃতসৎকারের জন্ত কাষ্ঠ বিক্রয় না করে । সুতরাং উমেশচন্দ্র এবং তাহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সমস্ত দোকান ঘুরিয়া ও একখানি কাষ্ঠ সংগ্ৰহ করিতে পারিলেন না । রাত্রি হইয়া গেল, কিন্তু একজন লোকও তাহীদের সাহায্য করিবার জন্য আসিলেন না । তখন র্তাহারা দুভাই কুঠার হস্তে আপনারাই বাড়ীর এক বৃহৎ আম্র বৃক্ষ ছেদন করিয়া ফেললেন ও পিতামহীর সৎকারকাৰ্য্য নিৰ্ব্বাহিত করিলেন । শ্রীদ্ধের সময়েও তাহার যথেষ্ট বাধা বিঘ্ন প্রাপ্ত হইলেন। উমেশচন্দ্র শেষে কলিকাতা হইতে ব্রহ্মোপাসকদিগকে নিমন্ত্রিত করিয়া আনিলেন, এবং ব্রহ্মোপাসনাসহকারে শ্ৰাদ্ধক্রিয় নিম্পন্ন করিলেন। হরিনাভির ক্ষেত্রেই তাহার জীবন প্রথম পল্লবিত ও কুসুমিত হইয়া নব সৌন্দর্য্যে ক্ষরিত হইয়া উঠিল। এখানে তিনি প্রধানশিক্ষকরূপে অনেক কল্যাণকর কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করিবার সুযোগ পাইলেন। অনেকগুলি আত্মার ভার বিধাতা ইহার হস্তে সমর্পণ করিলেন। তিনি যেরূপে সে ভার প্রীতি ও অনুরাগের সহিভ বহন করিতে লাগিলেন তাহাঁতে যে কোন সম্প্রদায়ভুক্ত লোক আপনাদিগকে , গৌরবান্বিত মনে করিতে পারেন। র্তাহার অকৃত্রিম ভালবাসায় তাহার ছাত্রগণ মুগ্ধ ও র্তাহার প্রতি একান্ত অনুরাগী হইয়া উঠিল। তিনি তাহাদিগের সম্বন্ধে গুরু, কিন্তু ব্যবহারে অকৃত্রিম বন্ধুর স্তায় ছিলেন। তাছার দৃষ্টাত্ত ও সহবাসে তাহাদের অনেকেই বিশেষরূপে উপকৃত হইয়াছিল। এখানে তিনি ক্রমে ব্ৰাহ্মসমাজ স্থাপনের জন্য উৎসাহিত হইলেন। তাহার কোন কোন বন্ধু এবং