পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা .] , কি অযৌক্তিক ঝক্য বলিতেছ? আমি তোমায় ছাড়িয়া কোথায় র্যাইব ? তুমি তোমার নিজের গৃহে কাহারই বা ভয় করিতেছ ? বোধ হয় দুঃস্বপ্ন দেখিয়া জাগরিত হইয়াছ, সুস্থ হও, ওহে সুস্থ হও । এই বলিয়া স্বামীর দিকে অগ্রসর হইল । তাহাকে পুরঃসর দেথিয়া নুসোম একেবারে গৃহপ্রান্তে সরিয়া গিয়া বলিল, “দাড়াও সুন্দরি দাড়াও । তোমার কথাগুলি যদিও আমার যথেষ্ট চিত্তরঞ্জিনী, তথাপি সুন্দরি, একটু দূরেই থাক , অবস্থাটা আগে বেশ করিয়া বুঝিতে দেও। আমি ত’ আজ যুগাধিকাল হইতে মুণ্ডিতকেশ পীত বসনপরিধায়ী ভিক্ষুধম্মবংশ; স্ত্রীস্পর্শ অপরাধে মাসাবধি গুহাসংরুদ্ধ থাকিয়া অধুনা বিষম অনুতপ্ত এবং সদ্যমুক্ত। যদিও মধ্যে মধ্যে আমি আপনাকে বাসস্তিকাবল্লভ লুসোম মনে করিতাম কিন্তু সেটা ভ্রম, বিকৃতমস্তিষ্কের বিরাট প্রতারণা, এবং আমি শ্রমণ ধৰ্ম্মবংশ ইতাষ্ট রূঢ় সত্য ।” বাসস্তিকা মধুরহান্তনিকশধারায় কক্ষটিকে ঝঙ্কত নন্দিত করিয়া কহিল, ‘প্রিয়তম, তুমি কুঞ্চিতকেশ, ক্ষেীমপরিহিত, বেদনিষ্ঠ নুসোম ; যুগধিককাল বাসস্তিকার হৃদয়গগনবিহারী। এই সত্য ওগো সত্য ! তুমি মুণ্ডিতকেশ কাষায়পরিহিত পাষণ্ডী শ্রমণ নহ-—সে মিথ্যা,সে ভ্রাস্তি, সে তোমার সন্দেহাকুলচিত্তের বিরাট বিকার।’ চিন্তাসাগরে কুলহারা নূসোম আপনার ইন্দ্রিয়সাক্ষ্য প্রত্যয় করিতে পারিতেছিল না । মাসাধিককাল গুহানিবদ্ধ থাকিয় তাহার দিব্য কেশোদগম হষ্টয়াছিল । এক্ষণে মুকুর প্রতিফলিত আপনার মূৰ্ত্তিকে মুকেশ সুবেশ দেথিয় তাহার আর বিস্ময়ের পরিসীমা রহিল না। তখন মুক্তির দিনে গুহাদ্বারের দৈববাণী স্মরণ হইল, এবং ক্রমশঃ সে আপনাকে অবস্থার সহিত সমঞ্জস করিতে চেষ্টা করিতে লাগিল । 象 象 অনেকক্ষণ পরে কিঞ্চিৎ সুস্থ হইলে বাসস্তিকার সনিৰ্ব্বন্ধ বাক্যে আশ্বস্ত হইয়া সমস্ত ব্যাপার একটি রজনীর স্বপ্নলীলা ও আপনার ক্ষুন্ন ধৰ্ম্মবুদ্ধির ক্রীড়া স্থির করিয়া নিশ্চিন্ত হইল। সে পূৰ্ব্বানুষ্ঠিত নিষ্ঠুরতার জন্য স্ত্রীর নিকট ক্ষমা চাহিল, পরিহাসলখুঁচিত্ত বাসস্তিকা আপনার সফলতায় উৎফুল্ল হইয়া স্বামীকে সোহাগ আদর-চুম্বনালিঙ্গনে তৃপ্ত করিয়া মণিমঞ্জীর । "రిసి আপনার অপেক্ষমান সথিসন্ধানে চলিয়া গেল। হতবুদ্ধি নৃসোম আপনাকে সম্যক প্রবুদ্ধ করিবার জন্ত গৃহের প্রত্যেক সামগ্ৰী আগ্রহভরে বহু পরিচিত বন্ধুর মত দেখিতে লাগিল। সন্তোষোজ্জল আনন্দসংমূঢ়দৃষ্টিতে আপনার মুকুরস্থ মূৰ্ত্তি বার বার আগ্রহভরে দেখিতে লাগিল । বহুকাল পরে কারানো আপনাকে ফিরিয়া পাইয় সে আপনাকে যথেষ্টভাবে আদর করিয়া উঠিতে পারিতেছিল না। একুটি রজনীর দুঃস্বপ্ন তাঙ্গকে কিরূপ না বিপৰ্য্যস্ত ও পর্য্যাকুল করিয়া দিয়াছিল, তাহা মনে করিয়া লজ্জায় সে আপনা আপনি হাস্তরোধ করিতে পারিতেছিল না। উপসংহার। অপেক্ষমান মাধবিকা ও মালবিকার সহিত বাসস্তিকার মিলন হইল। কিন্তু মণিমঞ্জরী প্রাপ্তিসময়ে অধিকারী নির্বাচন লইয়া তাহদের যেরূপ মতত্রৈধ ঘটিয়াছিল, এক্ষণে পরিহাস সমাপ্তাক্কতা তাহারা আবার জয়াধিকারী নির্ণয়ে মহা অন্তরায় দেখিতে লাগিল। প্রত্যেকেই একবার মনে করে যে, আপনার পরিহাসই সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট, বুদ্ধিচাতুৰ্য্যসম্পন্ন, নুতন ; আবার মনে হয়, সঙ্গিনীদের পরিহাস ও তুল্য রহস্যময় । © অবশেষে রাণী ত্রপিষ্ঠার বিচারনির্ভরশীল সখিত্রয় রাণীর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া একে একে আপনাদের পরিহাসকাহিনী বিবৃত করিয়া বিচার প্রার্থনা করিল। শ্রীতকাহিনী রাণী ত্রপিষ্ঠ হৃষ্ট হইয়া বলিলেন, ‘ভদ্রে, আপনার যে মণিমঞ্জীর পাইয়াছিলেন, তাহ আমারই চরণভ্রষ্ট। অশোকের দোহদসম্পাদন সময়ে অশোকগাত্রে চরণাঘাত করিতে ইহা স্থলিত হইয়া পড়িয়াছিল। ইহার মূল্য দ্বিলক্ষনিষ্ক হইবে। আমি মূল্যপরিমাণ মুদ্রার উপর আপনদের চাতুরীমুগ্ধ হইয়া লক্ষনিষ্ক উপহার দিতে বাসন করে। আপনার প্রত্যেকে তুল্যচতুরা ; রহস্তপটুতা ও পরিহাসপ্রয়োগক্ষমতাও তুল্য, এমন তিনজন বুদ্ধিমতীর মধ্যে ইতরবিশেষ স্থির করা দুষ্কর এবং অযৌক্তিক । . আমি তারতম্য বিচার করিয়া আপনাদের সখিগ্রীতিতে আঘাত করিতে ইচ্ছা করি না। আমার অনুরোধ, এই লক্ষত্ৰিতয় আপনার সমান অংশে গ্রহণ করিয়া তুষ্ট হউন।