পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬১ দেশের ভাষার অনৈক্যে আমাদের অনেককে ইংরাজী ভাষায় কথা কহিতে ও পত্ৰাদি লিখিত হয়। পাজার অনৈক্যে ইংরাজী সন তারিখ দিতে হয়। কিন্তু বোধ হয় না, ইংরাজী ভাষা কিংবা ইংরাজী সন তারিখ দেশে সৰ্ব্বসাধারণের সামগ্ৰী হইতে পরিবে । অতএব পাজী এক পাইবার প্রয়াস সৰ্ব্বতোভাবে কৰ্ত্তব্য । পাজী এক হইলে আমাদিগকে এই মলমাসের কথা পাড়িতে হঠত না । পূর্বকালে যখন প্রদেশসমূহ এক রাজার অধীনে ছিল না, যখন রেল ইষ্ঠীমার টেলিগ্রাফ ছিল না, যখন নিজের গ্রামখানিষ্ট পৃথিবী বোধ হইত, তখন যে ভাবে সমাজ চলিয়াছে এখন সে ভাবে চলিতে পারে না । সমাজের হিতের নিমিত্ত পাজীর স্বষ্টি ; পাজী আমাদিগকে করে নাই, আমরা পাজী করিয়াছি। অতএব যে পার্জী সমাজের অনিষ্ট করিবে, সমাজ বন্ধনের বিপ্ন জন্মাষ্টবে, তাহ অবশু পরিত্যাগ করিতে হইবে । বৎসরগণনা, মাস গণনা, মাসের দিনগণনা, এমন কি দিনের ভাগ গণনা ভারতের সপত্র এক হওয়া অত্যাবশ্রাক 1* দেশাচারের মত স্মৃতির ব্যবস্থা বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন হইতে পারে। আজি একাদশার উপবাস করিব, কি কালি করিব, তাহার মীমাংসায় দেশের সকলকে জড়াইতে হয় না । কিন্তু আজি বৎসরের প্রথম দিন গণিব, কি কালি গণিব, তাহার মীমাংসায় সকলেরই সম্বন্ধ আছে । খ্ৰীষ্টান পণ্ডিতের নানাকারণে বুঝিয়াছেন যে ইংরাজী সনের প্রথম অন্ধে খ্রষ্টের জন্ম হয় নাই, উহার চারি পাঁচ বৎসর পূপে হইয়াছিল। কিন্তু তা বলিয়া কেহ কি এই ১৯০৭ সনকে ১৯১১ গণিতে বসিবেন ? সত্যের আদর করিলে ১৯১১ গণ উচিত । কিন্তু পাটীগণিতের সে সত্যে কি ফল, যদি তাহাতে সমাজের বিশৃঙ্খলা ঘটে ? অত কথায় কাজ কি ? এই অধিমাস গণনাই দেখুন। বাঙ্গল (ও প্রায় ওড়িশায়), আমরা সৌরমাস গণি বলিয়৷ অধিমাসের গুরুত্ব বুঝি না। কিন্তু বাঙ্গলা লইয়াই ভারত প্রাচীনকালে গ্রাম থানিষ্ট যে পুথিবী ছিল, তাহার প্রমাণ সুযে|দয় হইতে বেল গণন । আমার গ্রামে যখন সুযোদয় হইবে, তোমার গ্রামে তখন হইবে না। অবশ্ব সূৰ্য্য দেখিয়া বেল মাপায় সুবিধা আছে, সুর্যই সকলের পাক ঘড়ী হইয়া থাকেন । অসুবিধ। এই যে, আমার ঘড়ী ও তোমার ঘড়ী একই সময় দেখায় না। প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ। বর্ষ নহে। যদি পাজীতে ভারতবর্ষের সকল প্রদেশের বৎসর মাস দিন পৃথকৃ পৃথক্ লিখিতে হয়, তাহ হইলে পাজী বড় করিতে হইবে, আমাদের জাতীয় জীবন সেই সকল গণনার বৃথা ভারে আক্রান্ত হইবে, সমাজে পাজীর উদ্দেশুই পণ্ড হুইবে । এই দোলযাত্রাষ্ট দেখুন। পুরীতে দোল উপলক্ষে বৎসর বৎসর ৪০৷৫০ হাজার ষাত্ৰী আসিয়া থাকে । সে সব যাত্রী কোন মাসে আসিবে ? যদি পুরীর পাজীর মত যথা সময়ে শুনিয়া না থাকে, তাহা হইলে ফাল্গুন মাসে আসিবে, এবং আসিয়া বিফল মনে ফিরিয়া যাইবে । কিন্তু কি বহুকষ্ট্রে সঞ্চিত কত অর্থের অপব্যয় হইবে, কি শারীরিক ও মানসিক কষ্ট ভোগ করবে ! ভুক্তভোগী ব্যতীত অন্ত কেহ যাত্রার কষ্ট বুঝিতে পরিবেন না। যাহাদের অর্থ আছে, কিংবা যাহার যথাসময়ে দোলযাত্রার দিন শুনিয়াছে, তাহারাষ্ট কি শুদ্ধমনে চৈত্রমাসে আসিতে পরিবে ? তাহারা যে পাজী মানে, তাহাতে চৈত্রমাস অশুদ্ধ লেখা দেখিলে মনে নিশ্চয়ই সন্দেহ নাই, জন্মিবে। সন্দেহ দূর করাই শাস্ত্রের উদ্দেশু। যদি শাস্ত্র দ্বারা সন্দেহ বৃদ্ধি হয়, তাহ হইলে শাস্ত্রের প্রতিই লোকের অনাদর বাড়িবে। আশ্চর্যের বিষয়, এই সোজা কথাটা আমাদের দেশের পাঞ্জীকারের ভুলিয়া যান। আশা করি, তাহার কালস্রোত উপেক্ষা করিবেন না । ফলিত জ্যোতিষের যাহা সন্দেহাত্মক, তাহার বাহুল্যে পাজী বড় করিবেন না । যাহাতে সন্দেহ নাই, সেই কথাই বলিতে পাঞ্জীর জন্ম। বারবেলা ও কালবেল গণিতে গণিতে দেশের বেলা বহিয়া যায়। * বালক ও যুবকের দলে দলে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান শিক্ষা করিবে, অথচ ঘরের পাজীতে সে বিজ্ঞানের সায় পাইবে না ? পৃথিবী স্থির বলিলে আর কি স্থির থাকিবে, না রাহু নামক অসুর আসিয়া চন্দ্র স্বর্যকে গ্রাস করে বলিলে কেহ শুনিবে ? পঞ্জিকাকার নিশ্চিত জানেন এমন অসম্ভব কথা আমাদের প্রাচীন জ্যোতিষীরা বলেন নাই । বস্তুতঃ যখনষ্ট পঞ্জিকাকার গ্রহণ গণনা করিয়া গ্রহণের আদি অন্ত বলিয়া দেন তখনই কি তিনি বলেন না, উত্তিষ্ঠ গম্যতাং রাহো ত্যজ্যতাং স্বৰ্যসঙ্গমঃ ?

  • ফলব্যবসায়ীর বলুেন মন্দ ফলই বেশী ঘটে। বদি তাই হয়, তাহা হইলে ফল গণন না করাই ভাল । দেশে যে মঙ্গের দশ চলিতেছে, গঙ্গ ত সকলেই জানে, গণিয়া লাভ কি ?