পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৮
প্রাকৃতিকী

তুলনায় কত ক্ষুদ্রতম পদার্থ তাই কল্পনা করিয়া বিস্ময়পূর্ণ হইতে লাগিলাম।

 আকাশে পৃথিবীর উচ্চতা এবং ইহার অবস্থানাদি দেখিয়া, গ্রহের কোন্ অংশে আমি উপস্থিত হইয়াছি, মনে মনে তাহার একটা স্থূল হিসাব করিলাম—দেখিলাম, ইহার অনালোকিত ভাগের পূর্ব্বাংশে প্রায় বিষুবরেখার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইয়াছি, এস্থান হইতে আলোকিতাংশের ব্যবধান প্রায় ছয় শত ক্রোশ হইবে। শুক্রে উপস্থিত হইবামাত্র পরিচ্ছন্ন আকাশে নানা নূতন দৃশ্য দেখিয়া, গ্রহের উপরিস্থ কোন বিষয়ে মনঃসংযোগ করিতে পারি নাই, কিন্তু শীঘ্র এত অধিক শীত অনুভব করিতে লাগিলাম যে অনিচ্ছাসত্ত্বেও শীতনিবারণের চেষ্টা করিতে হইল। গায়ে মোটা কাপড় ছিল বটে, কিন্তু শীত এতই প্রবল বলিয়া বোধ হইল যে, তাহা দ্বারা শীতনিবারণ হইল না। এই প্রকার অবস্থায় নির্জীবভাবে দাঁড়াইয়া থাকা যুক্তিসিদ্ধ নয় ভাবিয়া, এই অপরিচিত প্রদেশের এক দিক্ লক্ষ্য করিয়া দ্রুতপদে চলিতে লাগিলাম। বেড়াইতে আরম্ভ করায় শরীর কিঞ্চিৎ উষ্ণ হইল বটে, কিন্তু আমার পদক্ষেপণের বিকট শব্দে বড়ই বিরক্ত হইয়া পড়িলাম—সে শব্দ এতই উচ্চ যে, ইহা পশ্চাদ্বর্ত্তী দুই তিনটি অশ্বের ক্ষুরধ্বনির ন্যায় প্রতীয়মান হইল। এতদ্ব্যতীত এই নূতন রাজ্যে আর একটি ব্যাপার বড়ই অদ্ভুত ঠেকিল—এই মহা শীতে কোন স্থানে তুষার বা বরফের চিহ্ন মাত্র দেখিতে পাইলাম না।

 এই সকল অপার্থিব ও প্রকৃতিবিরুদ্ধ ব্যাপারের যথার্থ কারণ অবধারণার্থে কিছু ভাবিতে লাগিলাম, কিন্তু কেন বলিতে পারি না—কোনক্রমেই মনঃস্থির করিতে পারিলাম না। বোধ হয় একটা সৃষ্টিছাড়া অপার্থিব দেশে আসিয়া হঠাৎ আবির্ভূত হওয়ায়, অতীত জীবনের সুখস্বচ্ছন্দতার কথা আসিয়া মনে একটা উজান স্রোত উপস্থিত