পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শুক্র-ভ্রমণ
২৭৯

করিয়াছিল, তাহারি টানে মনে কোন কথাই স্থান পায় নাই। এই সময়ে সর্ব্বাপেক্ষা আমার বন্ধুর অভাবটা বড়ই তীব্ররূপে অনুভব করিতে হইয়াছিল—তিনি উপস্থিত থাকিলে, হয়ত উক্ত অপার্থিব ঘটনা দুইটির কারণাবিষ্কারের জন্য বিশেষ চিন্তিত হইতে হইত না, বিনা চিন্তায় অতি গুরুতর বৈজ্ঞানিক ব্যাপারেরও সিদ্ধান্ত খাড়া করা তাঁহার একটি বিশেষ গুণ ছিল।

 কিয়দ্দূর অগ্রসর হইলে সকল চিন্তাই একে একে অন্তর্হিত হইয়া গেল, এবং এই অপরিচিত প্রদেশে ভবিষ্যতে আমার কি হইবে—এই মহতী চিন্তা হঠাৎ উপস্থিত হইয়া আমার হৃদয়ে একটা মহাবিপ্লবের সূচনা করিয়া দিল। আমি অনন্যোপায় হইয়া ঝটিকাক্রান্ত তরীর ন্যায় ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে লাগিলাম। এই সময়ে নক্ষত্রের ক্ষীণালোকে কোন একটি জীব আমার পশ্চাদ্ধাবিত হইতেছে বুঝিতে পারিলাম—স্থির-দৃষ্টিতে দেখিয়া, যেন এক বৃহৎ কৃষ্ণবর্ণ পদার্থ দ্রুতবেগে আমার দিকে অগ্রসর হইতেছে বলিয়া বোধ হইল। শুক্রগ্রহে উপস্থিত হইয়া জীব-বাসের কোন নিদর্শন পাই নাই, হঠাৎ ইহা দেখিয়া বড়ই বিস্মিত হইলাম—কিছুদিন পূর্ব্বে জীবনিবাস কেবল পৃথিবীতেই সম্ভব বলিয়া বন্ধুর সহিত যে মহা তর্ক করিয়াছিলাম, সেটা মনে পড়িয়া গেল এবং সে বিষয়ে বন্ধুর অনুমানই যে সত্য তাহাতে আর সন্দেহ থাকিল না। দাঁড়াইয়া অতি অল্পকালমাত্র এই সকল বিষয় চিন্তা করিতে করিতে, মৎচিন্তিত জীব সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। ইহার আকতি দেখিয়া অত্যন্ত বিস্মিত হইলাম এবং কিঞ্চিৎ ভয়েরও সঞ্চার হইল। আমাদের বনমানুষের সহিত ইহার আকৃতিগত অনেক সাদৃশ্য আছে; সর্ব্বশরীর ঘনকৃষ্ণলোমাবৃত, শরীরের তুলনায় মস্তকটি অত্যন্ত বৃহৎ, এতদ্ব্যতীত হস্তপদাদি দীর্ঘনখযুক্ত ও দেহ সম্পূর্ণ উলঙ্গ। এই ভীষণ জীবটি আমার পুরোবর্ত্তী হইয়া, এত বিকট চীৎকার করিতে লাগিল যে, চিরসুপ্ত