পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮২
প্রাকৃতিকী

 আমার এই অনিচ্ছার ভাব দেখিয়া, তাহাদের মধ্যে একজন ত্বরিতপদে গুহাপ্রবেশ করিল এবং অতি অল্প সময় মধ্যে এক অদ্ভুত দীপহস্তে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া গুহা-দ্বারে দাঁড়াইল। এবার গুহাবিবর হইতে অপর একটি জীব বহির্গত হইল,—এটি আমার পূর্ব্ব-পরিচিত শুক্রবাসীর জাতীয় নয়, তাহা স্পষ্ট বুঝিতে পারিলাম। অনতি-উজ্জ্বল দীপালোকে, তাহার দেহ শুভ্র বস্ত্রাবৃত দেখাইল এবং বাহ্য আকৃতি ও চালচলন সকলই মনুষ্যের ন্যায় দেখিলাম। জগদীশ্বরের এই অদ্ভুত রাজ্যে, আমার ন্যায় আর একটি দুর্ভাগা মনুষ্যসন্তান দেখিয়া বিস্মিত হইলাম—বিস্ময় ও আনন্দে ক্ষণিক কর্ত্তব্যজ্ঞানশূন্য হইয়া, এক বিপুল-আবেগপূর্ণ হৃদয়ে দৌড়িয়া তাহার নিকট উপস্থিত হইলাম। সেখানে গিয়া যাহা দেখিলাম তাহাতে আর বিস্ময়ের সীমা থাকিল না—এক ভয়ানক চীৎকার করিয়া তাঁহাকে আলিঙ্গন করিলাম। আমার জীবনে এই প্রকার উচ্ছ্বাস ও আবেগপূর্ণ আলিঙ্গন কখনও করি নাই এবং এ প্রকার অব্যক্ত কঠোর-চীৎকার আর কখনও আমার কণ্ঠ-নিঃসৃত হইয়াছে বলিয়া মনে পড়ে না,—আলিঙ্গন-বদ্ধ এই ব্যক্তি আমার সেই বৈজ্ঞানিক বন্ধু! বন্ধুর আজানুলম্বিত ঢোলা কামিজ দেখিয়া দূর হইতেই তাঁহাকে চেনা উচিত ছিল। কিন্তু তাঁহাকে কখন বিমর্ষ ও নিরুৎসাহ দেখি নাই, এখন এই দুইটা মিলিয়া তাঁহাকে এমনি রূপান্তরিত ও অস্বাভাবিক করিয়া তুলিয়াছিল যে, অতি অল্পদুর হইতেও তাঁহাকে চিনিতে পারি নাই। আমার বাহুবদ্ধ হইয়াও বন্ধুর মৃত্তিকাসংলগ্ন দৃষ্টি উত্তোলিত হইল না—তাঁহার স্থির প্রশান্ত মূর্ত্তি প্রস্তরবৎ নিশ্চলই থাকিল। কয়েকবার নাম ধরিয়া ডাকাডাকি করায় মস্তক উত্তোলন করিলেন এবং আমাকে দেখিবামাত্র তাঁহার নিরুৎসাহব্যঞ্জক বিমর্ষ বদনমণ্ডলে বিস্ময়ের ছায়া আসিয়া পড়িল। বোধ হয় তিনি আমার অস্তিত্বের উপর সন্দিহান হইয়া, সকলই এই অদ্ভুতরাজ্যের মায়ার খেলা ভাবিয়া-