পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯০
প্রাকৃতিকী

করিতে পারি নাই, পরে শুক্রপৃষ্ঠে তাপের অল্পাতিরেক না থাকায় বায়ুর স্থিরতা ও ইহার গুরুত্বের সমতাই, এই অদৃষ্টপূর্ব্ব ঘটনার কারণ বলিয়া বোধ হইল। আমাদের পদক্ষেপণে স্তব্ধ বায়ুরাশি এতই অন্দোলিত হয় এবং তজ্জাত শব্দতরঙ্গ এত অধিককাল স্থায়ী হয় যে, তাহা হইতেই পূর্ব্বোক্ত শব্দ শ্রুত হইয়া থাকে।

 আমরা সোৎসাহে চলিতে লাগিলাম। অধিক শীতার্ত্ত বা পরিশ্রান্ত হইলে শুক্রপৃষ্ঠস্থ সুগভীর ফাটাল আশ্রয় করিয়া সুস্থ হইতাম। শুক্রপৃষ্ঠে এপ্রকার আশ্রয় গ্রহণোপযোগ্য স্থান প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায়। আমরা যে অংশে পরিভ্রমণ করিতেছিলাম, তথায় জীববাসের সামান্য লক্ষণও দেখা গেল না, দিগন্তবিস্তৃত বিশাল সমতল প্রান্তরের ভীষণ দৃশ্যটা মধ্যে মধ্যে হৃদয়ে এমন হাহাকার উত্থিত করিত যে, পদক্ষেপণের সামর্থ্যটুকু পর্য্যন্ত ক্ষণকালের জন্য লয়প্রাপ্ত হইত। যাহা হউক বন্ধুর দার্শনিক মনটি বড়ই সুশিক্ষিত বলিতে হইবে—বিজ্ঞানের কথা তুলিলেই এই ঘোর নৈরাশ্যের মধ্যেও মনকে একবারে বৈজ্ঞানিক ব্যাপারে নিয়োজিত করিতে পারিতেন, নিজেই যুক্তি-উত্থাপন ও তাহার খণ্ডন করিয়া, উপস্থিত বিপদের কথা ভুলিয়া মহানন্দ উপভোগ করিতেন।

 কিছুকাল এই প্রকারে অগ্রসর হইয়া হিসাব করিয়া দেখিলাম, আমরা এক সপ্তাহ চলিতেছি এবং ইতিমধ্যে একশত ক্রোশেরও অধিক পথ অতিক্রম করিয়াছি। এই সময়ে আমাদের পথের অনতিদূরে একটি উচ্চ স্তূপ দৃষ্ট হইল; আমরা কৌতূহলাক্রান্ত হইয়া ইহার নিকটে গেলাম। দূর অন্ধকারে ইহাকে উচ্চভূমি বলিয়া বোধ হইয়াছিল, কিন্তু দেখিলাম বাস্তবিক তাহা নয়, ইহা একটি বৃহৎ অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ মাত্র। এই প্রাণিহীন মহামরু-মধ্যে অট্টালিকার চিহ্ন দেখিয়া আমরা বড় বিস্মিত হইলাম—সেই ভগ্ন অট্টালিকার নির্ম্মাণকৌশল ও স্থপতিবিদ্যার চরমোৎকর্ষতার লক্ষণ যথার্থই বিস্ময়জনক।