পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শুক্র-ভ্রমণ
২৯৫

সকল আসিয়া শীতল অন্ধকারাংশে প্রবেশ করিলে, শৈত্যাধিক্যে সকলই বরফ ও তুষারে পরিণত হইয়া, আলোক-আঁধারের সন্ধিস্থলে পতিত হয়; বহুকাল হইতে এই প্রকারে তুষার সঞ্চিত হইয়া, এক মহা পর্ব্বতের উৎপত্তি হইয়াছে; পার্থিব জ্যোতির্ব্বিদ্‌গণ দূরবীক্ষণ দ্বারা শুক্রমণ্ডল পরিদর্শন কালে, ইহার প্রান্তে যে উজ্জ্বল রেখা দেখিয়া থাকেন, তাহা যে এই তুষার পর্ব্বতই সূর্য্যকিরণোদ্ভাসিত হইয়া উৎপন্ন করে, তাহাও বুঝা গেল।

 এখন এই ভীষণ হিমপর্ব্বত উত্তীর্ণ হইয়া কি প্রকারে আমাদের গন্তব্যস্থান শুক্রের আলোকিতাংশে উপনীত হইব, তাহাই ভাবিতে লাগিলাম। ঘটোৎকচ পর্ব্বতারোহণ-কার্য্যে আমাদের বিশেষ সাহায্য করিয়াছিল—তাহার দীর্ঘ নখযুক্ত হস্তপদ দ্বারা অনায়াসে মসৃণ তুষারপর্ব্বত আরোহণ করিতে লাগিল, এবং তুষারে স্খলিতপদ হইবামাত্র, আমাদিগকে হইতে সাহায্য করিয়া উপরে তুলিতে লাগিল। মধ্যে মধ্যে পর্ব্বতের উচ্চ প্রদেশ মহা শব্দে বৃহৎ বরফখণ্ড পড়িতে লাগিল, তাহার বজ্রকর্কশ ধ্বনিতে আমার কর্ণ বধির ও সংজ্ঞা লোপের উপক্রম হইল। ঘটোৎকচের অবিরাম পর্ব্বতারোহণ-চেষ্টা ও বন্ধুর উৎসাহবাক্যে চালিত হইয়া, পর্ব্বতের অনেক উপরে উঠা গেল; এই সময়ে সুবর্ণ-গোলকের ন্যায় স্থির সূর্য্য আমরা প্রথমে নীলাকাশে উদিত দেখিয়াছিলাম; কিন্তু সেই মহা-শীতে ও আসন্ন মৃত্যুর সম্মুখে প্রথম সূর্য্যদর্শনের কবিত্বটুকু অনুভব করিতে পারি নাই—কখন্ একখণ্ড বরফ বজ্রনিনাদে অসিয়া তুষার-সমাধিতে চিরশায়িত করিবে, এই চিন্তায় তথন হৃদয় পূর্ণ ছিল। কত উচ্চে উঠিয়াছিলাম হিসাব করি নাই, তবে বহুকাল আরোহণ করিয়া আমরা যে একটি অপেক্ষাকৃত অল্পোচ্চ পর্ব্বতশিখরে আসিয়াছিলাম তাহা বেশ মনে আছে। আমরা সেই স্থানে দাঁড়াইয়া পর্ব্বতের অপর পার্শ্বে দৃষ্টিপাত করিলাম, নিম্নে বিশাল সমুদ্র ও ভাসমান বৃহৎ বরফস্তূপ ব্যতীত